ফোর্বসের ৩০ এর নীচে ৩০-এর উদ্যোক্তা তালিকায় পাঠাও-এর সহ প্রতিষ্ঠাতা
খবরটা এর মধ্যে সবাই জেনে গেছে। ফোর্বসের ৩০-এর নিচে ৩০ তালিকায় পাঠাও-এর সিইও হুসাইন এম ইলিয়াস ও কার্টুনিস্ট মুর্শেদ মিশু জায়গা করে নিয়েছে। প্রতিবছর এপ্রিলের শুরুতে এই তালিকা প্রকাশ হয়। গআগের দুইবারও আমাদের দুইজন করে ছিল। শওগাত নাজনীন, মিজানুর রহমান এবং আয়মান সাদিক ও সাজিদ ইকবাল। আর এবার এরা দুজন। এ বছরের শুরুতে আমি যখন ২০১৮ সালের সালতামামী করি তখন পাঠাও-কে দেশে ২০১৮-এর বর্ষসেরা স্টার্টআপ হিসাবেই বিবেচিত করেছি।
যদিও আমাদের দেশের অনেককেই আমি দেখলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই তালিকায় জায়গা পাওয়া নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে। এতে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নাই। রবি ঠাকুর দীর্ঘদিন আগে এমন একটা গল্প লিখেও গেছেন।
যাকগে, এই তালিকায় আমাদের তরুণদের সংখ্যাল্পতা মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের তরুণদের জন্য আমরা সেরকম কাজের পরিবেশ, সহযোগিতার পরিবেশ, উৎসাহের পরিবেশ তৈরি করতে এখনও পারিনি। তারা যদি উদ্যোক্তা হতে চায়, গবেষক হতে চায় কিংবা একটা ভাল চাকরি পেতে চায় – তাহলে এই দেশে অনেক বাঁধা। পদে পদে বাঁধা। যদি সেরকম বাঁধা না থাকতো তাহলে ইলিয়াসের মতো আরও অনেককে আমরা পেতাম। উদ্যোক্তাদের কথাই ধরুন। ইলিয়াস জানালো পাঠাও এর ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য মাত্র ছয় মাস সময় লেগেছে! ইন্টারনেট ভিত্তিক উদ্যোক্তাদের অফিস ভাড়ার একটা মিথ্যা চুক্তিপত্র দিতে হয় ট্রেড লাইসেন্স করতে। (আমরা শহরের নামের বানান ঠিক করি কিন্তু ট্রেড লাইসেন্সকে বিজনেজ লাইসেন্স করতে পারি না)।
ইলিয়াস বলছেন – “বাংলাদেশে এখন অনেকেই উদ্যোক্তা হতে চান। অনেক আয়োজন হয়, সরকারি উদ্যোগও আছে কিছু সোযোগ সহায়তা দিতে। কিন্তু প্রাথমিক চড়াই উৎরাই পার হয়ে যারা নিত্য নতুন কর্মসংস্থানের সূচনা কিংবা নতুন সেবা বা পণ্য বাজারে নিয়ে আসে তাদের বড় হওয়াটা অনেকেই সহ্য করতে পারে না। কোন কোন সময় অজ্ঞানতা থেকেও এমনটি হয়। ফলে তৈরি হয় পদে পদে বাঁধা। পাঠাও নামের সুপার এপ দিয়ে আমরা উদ্যোক্তাদের এই লড়াই-এ তাদের পাশে থাকতে চাই। তাদের নিয়েই আগামী সময়ে বাংলাদেশের উন্নতিতে অবদান রাখতে চাই। কারণ তরুণদের জন্য সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলতে পারলে এই তালিকায় আরও অনেকেই স্থান করে নিতে পারবেন।”
হুসাইন এম ইলিয়াস ও সিফাত আদনানের পাঠাও একই সঙ্গে রাইড শেয়ারিং, প্রয়োজনের সময় লজিস্টিক সরবরাহ এবং খাবার পৌছে দেওয়ার সেবা হিসাবে মাত্র ৩ বছর আগে আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে নেপালের কাঠমুন্ডুসহ দেশের পাঁচটি শহরে পাঠাও-এর সেবা চলছে। ৫০ লক্ষবার এই এপ ডাউনলোড হয়েছে বলে লিখেছে ফোর্বস।
এরই মধ্যে কেবল রাইড শেয়ারিং-এর মাধ্যমে দেশে প্রায় দুই লক্ষ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে এই প্ল্যাটফর্ম। এই মোটর সাইকেল চালকদের উদ্যোক্তা হিসাবে অভিহিত করে ইলিয়াস বলেন – আমাদের দেশের রাইড শেয়ারিং অন্যান্য দেশের মতো নয়। আমাদের অনেক বেকার যুবক একটি মোটর সাইকেল সংগ্রহ করে বাইকার হওয়াকে পেশা হিসাবেই নিয়েছেন। ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহর, ট্রাফিক জ্যাম যেখানে প্রতিনয়ত যোগাযোগের সময় কমিয়ে দেয়, সেখানে এই সেবা আরও বিকশিত হতে পারে। এজন্য দরকার দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ এবং সহায়ক নীতিও রেগুলেশন।”
আলাপে যথারীতি বিদ্যমান সরকারি রাইড শেয়ারিং নীতিমালার “ওয়ান রাইডার ওয়ান এপ”, ‘নতুন গাড়ি নয়’ ইত্যাদি বিষয়ও এসেছে। ক’দিন আগে আমার আর একটি লেখাতে এই অদ্ভুত জগাখিচুড়ি নীতিমালা নিয়ে লিখেছি। কাল শুনলাম ঐ নীতিমালাতে আরও অদ্ভুত পয়েন্ট যোগ করা হচ্ছে। যেমন ঢাকাকে তিনভাগে ভাগ করা হবে এবং এক মেট্রোর মোটরবাইক অন্য মেট্রোতে যেতে পারবে না!!! ব্লা, ব্লা ব্লা!!!
পাঠাও এরই মধ্যে চার দফাতে মোট এক কোটি২ ৮ লক্ষ ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে এবং বর্তমানে এর বাজার মূল্য দাড়িয়েছে ১০ কোটি ডলারের ওপরে। বিদেশী বিনিয়োগও আছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে অনেক, ২ বিলিয়ন ডলার। আর ভিয়েতনামে? মাত্র ১১ বিলিয়ন!!! আরা এখন নানাভাবে বিদেশী বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছি। সরকারের আর একটি নীতিমালাতে বলা হয়েছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানে বিদেশী বিনিয়োগ সর্বোচ্চ ৪৯% হতে পারবে। এর বেশি নয়? কেন? কারণ তাতে কিছু লোকোের সিন্ডিকেট টিকে থাকে। এ প্রসঙ্গে ইন্টারনেট বিক্রির ‘ডাকাতি’তে বাংলাদেশ দুনিয়ার নিকৃষ্টতম! লেখাটি পড়তে পারেন । তাহলে বোঝা যাবে কেন কিছু লোক নতুন বিদেশী বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করে।
“কাজের স্বীকৃতি পেতে সবারই ভাল লাগে” এমন কথা বলতে বলতে ইলিয়াস তাঁর কর্মীদের দেখিয়ে বলেন – “তবে, এটি আমার একার কাজ নয়। পাঠাও-এর ৭০০ এর অধিক কর্মী, রাইডার, গাড়ি চালক, খাবারের প্রতিষ্ঠান, রেস্তোরা সবই এই সাফল্যের অংশিদার”।
ইলিয়াস ও তাঁর পাঠাও এগিয়ে যাক।
নতুন নতুন ইলিয়াসরা আমাদের পথ দেখাক।