আমার বইমেলা ২০১৯-৮ :হয়ে ওঠো একজন প্রবলেম সলভার- সবই করি হাতে কলমে!
আমার বইমেলা ২০১৯-৭ : বইমেলার কনিষ্ঠতম লেখক ও শিল্পী
গণিত অলিম্পিয়াডের পর আমরা শুরু করি শিশু-কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেস বা সিএস কংগ্রেস। এটির উদ্দেশ্য হলো ছোঠবেলা থেকে আর একদল ছেলেমেয়ে তৈরি করা যারা জানবে বিজ্ঞানের আনন্দ হচ্ছে একটা কিছু বানানোতে, কোন কিছু খুলে দেখাতে এবং মাপামাপিতে। শুধু তাই নয়, এই কংগ্রেসটি আমরা এমন করেছি যে, এটি একজন শিক্ষার্থীকে বোঝাতে পারে যে বছর বছর তোমার নতুন কিছু করার দরকার নেই। একটা কাজই ইনক্রিমেন্টালভাবে করা যায় এবং ধাপে ধাপে সেটার উন্নতি করা যায়। কাজে আমাদের রেদওয়ানুল ইসলাম তার হাইস্কুলের গবেষণাটি নিয়ে গেল বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এবং সেটি শেষমেষ প্রকাশ হলো নেচার গ্রুপের পত্রিকায়! তে, সেই দলেরই কয়েকজনকে আমরা খুঁজে পেলাম ২০১৭ সালে যখন আমরা শুরু করেছি আরডুইনো, রাসবেরি পাই আর আইওটি ফিয়েস্তার কাজ।
রাজশাহীতে আরডুইনো ডে পালন থেকে শুরু করে, সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ওয়ার্কশপ, আইওটি ফিয়েস্টা, ম্যাসল্যাবের কার্যক্রম, ড্রিমস ফর টুমোরো ও আরডুইনো কমিউনিটির স্কুল পর্যায়ের ওয়ার্কশপ, ২০১৮’তে আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে স্বর্ণ বিজয় – প্রতিটি কাজ ভিন্ন ভিন্ন দলের ছেলেমেয়েরা করলেও সবগুলোতে একটা যোগসুত্র আছে। বাংলাদেশে একটি বিপ্লব আসছে চলেছে। হার্ডওয়্যার বিপ্লব। এই বিপ্লবে তারাই এগিয়ে থাকবে যারা এখন থেকেই বিষয়গুলো হাতে কলমে শিখবে।
গণিত অলিম্পিয়াডের সময় আমরা খেয়াল করেছি, বই হলো শেষপর্যন্ত একটি আন্দোলন সফল হওয়ার চাবিকাঠি। এখানেও আমরা দেখলাম বাংলা ভাষায় এসব শেখার রিসোর্স কম। কাজে রুহুল আমিন, মুনেম শাহরিয়ার ও সাদিয়া কবীর দিনা যখন আমাকে জানায় তারা আরডুইনোতে হাতে খড়ি বইটি লিখে ফেলেছে তকণ আমি খুবই আনন্দিত হয়েছি। বইটি গতবছর প্রকাশিত হয়েছে। তবে, বই-এর ক্ষুধা কিন্তু জাগ্রত। আমাদের বাংলা ভাষাতে আরও আরও বই দরকার। কারণ সামনে রোবটিক্স প্রতিযোগিতা, ইন্টারনেট অব থিংস এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লব।
বই-এর নামটি অন্য রকম। কেন?
কারণ এই বইটি লেখা হয়েছে বাস্তব জীবনের উদাহরণ এবং বাস্তব সমস্যা সমাধানে অথীত জ্ঞানের প্রয়োগকে কেন্দ্র করে। আর লেখাও হয়েছে সহজ করে। প্রাঞ্চল ভাষায়।
আমরা সাধারণত ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের সি-প্রোগ্রামিং দিয়ে শুরু করতে বলে থাকি। কিন্তু এই বই পড়ে মনে হচ্ছে প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করা উচিত আরডুইনো দিয়ে। তুমি যখন কোড লিখে একটি বাতি জ্বালিয়ে ফেলবে, একটি মোটর ঘোরাবে, তোমার কোড মেনে যখন একটি রোবট চলবে – সে আনন্দ অপরিমেয়!
প্রোগ্রামিং জিনিসটা বিমূর্ত বলে অনেকেই ফিল করতে পারে না। আরডুইনো প্রোগ্রামিং এর সেই বিমুর্ত জগতকে তোমার সামনে দারুণভাবে মেলে ধরবে। নিজের লেখা কোড-কে বাস্তবে দেখার যে কি অনুভূতি, সেটা এই বই পড়লে বোঝা যায়। বইটিকে পূর্ণতা দিয়েছে রিয়াল লাইফ প্রবলেম সলভিং, হ্যাকিং মাইন্ডসেট, জেগে স্বপ্ন দেখি এবং প্রোডাক্ট ডিজাইনের মত অধ্যায়গুলো। বইটি পড়ার মধ্য দিয়ে প্রযুক্তির কাজে পাঠকের আত্মবিশ্বাস বাড়বে বৈকি।
তুমি যদি সায়েন্স প্রজেক্ট, অটোমেশন, আরডুইনো, রোবোটিকস বা আইওটি নিয়ে কাজ করতে চাও, তোমার জন্য এই বইটি অপরিহার্য। তুমি নিশ্চয়ই খেয়াল করেছ, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা প্রচুর ইনোভেশন দেখাচ্ছে। বাংলাদেশের ইলেকট্রনিকস এবং হার্ডওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে একটি বড়ো সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে অটোমেশন, আইওটি ও রোবোটিকস। তবুও অনেকে আড়ষ্ট ধারণা নিয়ে আছে যে হার্ডওয়্যারের কাজ কঠিন এবং ব্যয়বহুল।
এই বইটি পড়লে এই ধারণা বদলে যাবে। আবার তুমি যদি প্রোগ্রামিং নিয়ে টুকটাক কাজ করে থাকো, আরডুইনো তোমার সেই প্রোগ্রামিংয়ের মজাকে কয়েক হাজার গুণ বাড়িয়ে দেবে।
বইটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় – সব শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের উপযোগী করে লেখা। প্রোগ্রামিং সম্পর্কে সামান্য ধারণা থাকলে বইটি পড়ার সময় বাড়তি সুবিধা পাবে। তুমি যদি স্কুলের হয়ে থাকো, এই বইটি পড়ার পাশাপাশি আরডুইনোতে হাতেখড়ি পড়ে নিলে এই বইটি পড়তে কঠিন মনে হবে না। স্কুল কলেজকে মূল উদ্দেশ্য করে লেখা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা এই বইটি থেকে সর্বোচ্চ আনন্দ পাবে বলে লেখকদের মতো আমারও বিশ্বাস। এই বইটির সাথে আরডুইনো, ইলেকট্রনিক্স, প্রোগ্রামিং, ইন্টারনেট অব থিংস এবং রোবটিক্সের জগতে তোমার যাত্রা শুরু হোক।
বইটি রকমারির লিংক
হয়ে ওঠো একজন প্রবলেম সলভার
মুনেম শাহরিয়ার
রুহুল আমিন
দ্বিমিক প্রকাশনী
মূল্য ৩৭০ টাকা
(বইমেলায় দ্বিমিকের স্টল বাংলা একাডেমি চত্ত্বরে, ১৯ নম্বর, পুকুর পাড়ে)