বইমেলার বই- ৯ : শরবতে বাজিমাত
২০১৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাইনে যাওয়া আসার সময় কোন এক এয়ারপোর্টে একটি সুন্দর বই দেখে থমকে যাই। বইটির বাঁধাই ও প্রোডাকশন দেখে খুবই অভিভূত হয়ে পড়ি। তারপর পাতা উল্টে দেখলাম এটি তিন উদ্যোক্তার গল্প। দেশে ফিরে পড়তে গিয়ে দেখলাম ব্রিটিশ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আমাদের দেশের উদ্যোক্তাদের অনেক মিল।
এই যেমন ব্যাংক। ওদের ওখানেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসএমই লোনের ব্যবস্থা আছে। কোন কো-লেটারেল লাগে না। তফসিলী ব্যাংকগুলো এরকম লোন দিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটার গ্যারান্টি দেয়। তারপর তিন উদ্যোক্তা ২০টি ব্যাংক থেকে কোন লোন পায়নি! ঠিক আমাদের মতো।
আমাদের মতো তাদেরও মার্কেটিং-এর কোন টাকা নাই। আমাদের বাবা-মাদের মতো ওদের বাবা-মারাও ছেলেরা উদ্যোক্তা হোক এটা চায় না!
তখন আমি ভাবলাম মূল বিষয়গুলো ওদের ভাষাতে অনুবাদ করে ফেলি। সেভাবে আমি সামহোয়্যার ইন ব্লগে লেখা লিখতে শুরু করি। পরে আমার সাইট চালু হলে সেখানেও এগুলো প্রকাশ করতে থাকি।
এভাবে পুরো ব্যাপারটা শেষ হয়। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে এসে আমার এ কাজের সমাপ্তি হয়। সে সময় আমি আলাদা করে কিছু নোট-টোট রেখে দেই।
যথারীতি আমার প্রকাশক মাহবুব আমাকে এটি বই করতে বললে আমিও রাজী হই। আমি ভেবেছিলাম কাজটা সহজ কারণ লেখাগুলোতো ব্লগে আছেই। কিন্তু মাহবুবের সম্পাদক সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন, বইটা তৃতীয় পুরুষে হতে হবে এবং মাঝখানে মাঝখানে আমার নিজের কথাও যোগ করতে হবে। বাংলাদেশের কথাও বলতে হবে।
তো, পড়েছি মোগলের হাতে। কী আর করা।
সেভাবে আমি কাজটা শেষ করেছি এবং এবারের মেলার দ্বিতীয় দিনে বইটি প্রকাশিত হয়েছে “শরবতে বাজিমাত” নামে। যদিও আমার ব্লগের লেখাগুলো ছাপা হয়েছে ইনোসন্টের শরবত নামে।
বই করতে গিয়ে দেখলাম কিছু কিছু জায়গা পরিবর্তন করা দরকার, কোথাও পরিমার্জন আর কোথাও সংযোজন। সেগুলো করতেও প্রায় কয়েক মাস লাগলো।
আমি একটা জিনিষ বুঝতে পেরেছি, আমি ঠিক আসলে পুস্তক লেখক নই [এজন্য হয়তো আমার দুনিয়াকে জানলো যারার পান্ডুলিপি হারিয়ে ফেলেও আমার কোন বোধোদয় হয়নি]। আমাকে দিয়ে লেখালেখি হতে পারে কিন্তু বই লেখাটা কঠিন। একজন লোক যদি একটা সাধারণ মানের বই লিখতে চার বছর সময় নেয় তাকে আর যাই হোক লেখক বলাটা ঠিক নয়।
তো, এই বইটি হলো তিন ব্রিটিশ উদ্যোক্তার শরবত কোম্পানি বানানোর গল্প। ওরা দেখেছে যেখানে অভাব সেখানেই সম্ভাবনা। চাহিদা আছে এমন কিছু করতে পারলেই সাফল্য আসে। তবে, সেজন্য প্রচুর ধৈর্য থাকতে হয়। শুনতে হয় – না, না, না!
ওরা যখন বলে- আমরা সরাসরি ফলের জুস দিয়ে দিবো বোতলে তখন লোকে হাসে। কারণ জুস ফ্যাক্টরি তো চলে কনসেনট্রেশন থেকে জুস বানিয়ে। সেখানে অরিজিনাল ফলের রস কে দেয়? দিলে তো সেটা বেশিদিন টিকবেনা। সহজ হিসাব। দিতে হবে প্রিজার্ভেটিভ।
কিন্তু ঐ তিন উদ্যোক্তা সব না’কে হ্যা বানিয়ে তাদের ইনোসন্টের গল্পের শেষে পৌছেছে।
কোন উদ্যোগের শুরু থেকে, বলা ভাল শূণ্য থেকে (৫০০ পাউন্ড দিয়ে ওদের সূচনা) হাজার কোটি টাকার কোম্পানি গড়ার যে ধাপ সেগুলো তারা অত্যন্ত সাবলীলভাবে বর্ণণা করেছেন। বলেছেন কোথায় তারা সমস্যাতে পড়েছেন। কোথায় তারা এগিয়েছেন। আর কোথা থেকে শিখেছেন। ওদের তিনজনেরই এখন ব্যক্তিগত দ্বীপ আছে, নিজস্ব বিমানও।
যারা নিজেদের উদ্যোগ নিয়ে ভাবছে তাদের এই বইটা কাজে লাগে পারতে পারে। তিমনি যারা এরই মধ্যে পথে নেমে পড়েছেন তারাও এই বই পড়তে পারেন। যারা বই কিনতে চান না তারা আমার সাইটে প্রকাশিত পর্বগুলো পড়ে নিতে পারেন।
শরবতে বাজিমাত প্রকাশ করেছে আদর্শ। বইমেলাতে পাওয়া যাচ্ছে আদর্শের ৩২৬-৩২৮ নম্বর স্টলে। আদর্শের স্টলের ওপরে একটি বিরাট বেলুন আছে। যারা খুঁজে পাবেন না তারা বেলুন দেখে আগাতে পারবেন।
বইটির দাম ১৫০ টাকা। মেলাতে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়।
রকমারি থেকেও কিনতে পারেন।
উদ্যোক্তাদের সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।
2 Replies to “বইমেলার বই- ৯ : শরবতে বাজিমাত”