ক্রাউডসোর্সিং-এর শক্তি
টনি সেই প্রায় সব কটা বিশ্ববিদ্যালয় মানে, ব্রাউন, বার্কলে, স্ট্যানফোর্ড, এমআইটি,প্রিন্সটন, কর্নেল, ইয়েল আর হার্বার্ড সবটাতেই ভর্তির সুযোগ পায়। তাঁর নিজের পছন্দ ছিল ব্রাউন কারণ সেখানে এডভার্টাইজিং নিয়ে পড়াশোনার একটা সুযোগ আছে। আর এডভার্টাজিং, সেইর মতে একমাত্র বিষয় যা সরাসরি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।
কিন্তু টনির বাবা মার ইচ্ছে ছিল ভিন্ন। ফলে, তাঁকে ভর্তি হতে হল হার্বার্ডে। হার্বার্ডেরর ডরমিটরিতে গিয়ে টনির প্রথম কাজ ছিল একটা টেলিভিশন কেনা। বাসায় থাকতে বেচারা সপ্তাহে মাত্র ১ ঘন্টা টিভি দেখার সুযোগ পেত। কাজে, হলে এসে দৈনিক চারঘন্টা টিভি দেখার একটা সিডিউল সে বানায় ফেলে!
তারপরের কাজ ছিল এমনভাবে ক্লাস বাছাই করা যাতে সোম, বুধ আর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত ক্লাস থাকে আর মঙ্গল আর বৃহস্পতিবার ফাঁকা। ক্লাসের দিনগুলোতে ভোর আটটার সময় যখন এলার্ম বেজে উঠতো তখনই তার মেজাজ যেত খারাপ হয়ে। কাজে সে বারবার স্নুজ বাটনটা টিপতো আর ভাবতো প্রথম ক্লাসটা না করলেও মনে হয় হবে। পরে কারো কাজ থেকে নোট যোগাড় করে নেওয়া যাবে।
পরের ঘন্টায় টনি নিজেকে এভাবে কনভিন্স করতো যে, প্রথম ঘন্টার ক্লাসনোট যদি কারো কাজ থেকে পাওয়া যায় তাহলে দ্বিতীয়টারটাও পাওয়া যাবে। এর মধ্যে যখন তৃতীয় ক্লাশের সময় হতো তখন সে নিজেকে বোঝাতো যে, সে এরই মধ্যে দুইটি ক্লাস মিস করেছে। আর একটাতে কি আসে যায়। আর শেষ ক্লাসের সময় তো এটা বলা যায়, “তিনটাই যেখানে করি নাই। সেখানে আর একটার জন্য ক্যাম্পাসে গিয়ে কী লাভ?”
শেষ পর্যন্ত ফ্রেশম্যান ইয়ারে টনির বলতে গেলে তেমন কোন ক্লাশই করা হয়নি। আর আলস্যের কারণে যেহেতু সে ক্লাশে যেতে পারতো না, একই কারণে গোছল করা বা খাওযার জন্যও ক্যাম্পাসে যাওয়া হতো না। তার সময় কাটতো ডে’জ অব আওয়ার লাইভ থেকে আর রামেন খেয়ে। (এবার জাপান গিয়ে রামেন দেখেছি। এ হলো সবজি দিয়ে কুইক নুডলস)।
কাজে ফ্রেশম্যান ইয়ারে টনির সময় কেটেছে আড্ডা দিয়ে, টিভি দেখে আর ঘুরে বেড়িয়ে। তবে, স্কুলের মত এখানে একটা ভাল গ্রেড পাবার বুদ্ধি টনি সবসময় বের করে ফেলতো। তার তিনটি োর্স ছিল আমিরিকান সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ, ভাষাতত্ত্ব আর ম্যান্ডারিন চাইনীজ (এটি তার বাবা-মার সঙ্গে কথা বলতে তর লাগতো )। কিন্তু কোর রিকোয়ারমেন্ট সম্পূর্ণ করার জন্য তাকে একটা বাইবেলের কোর্সও নিতে হয়েছে। ভাল খবর হল এই ক্লাসের কোন হোমওয়ার্ক বা এসাইমেন্ট ছিল না। ফলে টনিকে কখনো ক্লাসে যেতে হয়নি। দ:খের ব্যাপার হল – এই কথার অর্থ হল গ্রেড হবে খালি ফাইনাল পরীক্ষার ভিত্তিতে।
“পরীক্ষার দুই সপ্তাহ আগে প্রফেসর মশাই আমাদেরকে একটা ১০০ টপিকের তালিকা ধরায় দিয়ে বললেন পরীক্ষায় এর মধ্য থেকে ৫টি বিষয়ে কয়েক প্যারাগ্রাফ করে লিখতে হবে। আর ঐ পাঁচটা বিষয় নির্ধারণ হবে দৈবচয়নের ভিত্তিতে।“
মাত্র দুই সপ্তাহে এত বিষয় পড়ে ফেলা সম্ভব নয়। কী করবে বুঝে উঠতে পারলো না টনি। তবে, প্রয়োজনই যত উদ্ভাবনের গোড়া। কাজে একটা বুদ্ধি সে বের করে ফেললো।
হাইস্কুলে টনির একটা শখ ছিল বিবিএস বা বুলেটিন বোর্ড সার্ভিসে ঘুরে বেড়ানো। আর এখানে ছিল নিউজগ্রুপ। কাজে টনি এরকম একটা নিউজগ্রুপে একটি ছোট্ট আহবান জানায় যারা যারা এই কোর্সটা নিয়েছে তাদের একটি স্টাডি গ্রুপে যোগ দেওয়ার। কারণ ঐ গ্রুপটা হবে সবচেয়ে বড় স্টাডি গ্রুপ কারণ এটি হবে “ভার্চুয়াল”।
যারা যোগ দিয়েছে তাদেরকে তিনটা করে টপিক দেওয়া হল রিসার্চ করার জন্য। কাজ হবে প্রত্যেকে ঐ তিনটা টপিকের ওপর ফাইনাল প্যারাটা লিখে টনিকে ই-মেইল করবে। টনি ই-মেইল থেকে সেগুলো নিয়ে প্রথমে প্রিন্ট আর পরে ফটোকপি করে। তারপর সবগুলো যোগাড় হওয়ার পর একত্র করে করে একটা নোটখাতা বানায়। কোন কোন টপিকের একাধিক ভার্সনও পাওয়া যায়।
তারপর টনি ঐ বাইন্ডিং খাতার কপি মাত্র ২০ ডলারে বিক্রি করতে শুরু করে। তবে, তারাই এটি কেনার যোগ্যতা অর্জন করে যারা কী না সেখানে কন্ট্রিবিউট করেছে।
ব্যাপারটা এত ভাল ছিল যে, হার্বাডের ক্যাম্পাস ম্যাগাজিন ক্রিমসনে এই নিয়ে একটা ফিচারও ছাপা হয়।
আর টনি আবিস্কার করে ক্রাউডসোর্সিং এর ক্ষমতা।
One Reply to “ক্রাউডসোর্সিং-এর শক্তি”