ইউসুফ চৌধুরী – সততা, নিষ্ঠা ও পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি
ছাত্রবন্ধু লাইব্রেরি, মানে বই-এর দোকান। আমরা বলছি ১৯৪৭-৪৮ সালের কথা। এখনও এই দেশে বই-এর দোকান চালানো মুশ্কিল, আর তখন একটা গ্রামে! কাজে চললো না। পাততাড়ি গুটিয়ে চলে আসলেন চট্টগ্রাম শহরে। জুবিলি রোডে তিনহাত জায়গা নিয়ে দিলেন একটা স্টেশনারীর দোকান। রেলওয়ে মেন্স স্টোর থেকে জিনিষপত্র কিনে এনে বিক্রি করা। সেখানেই স্টেশনারীর পাশাপাশি বিভিন্ন ম্যাগাজিন রাখতে শুরু করলেন। আর পড়া। এ সময় পত্রিকার সঙ্গে শিক্ষার, নতুন জ্ঞানের সম্পর্ক খুঁজে পান তিনি। ভাবলেন নিজেই সরাসরি পত্রিকা আনবেন। মানে পত্রিকার এজেন্ট হবেন। পশ্চিম পাকিস্তানের ডন পত্রিকার এজেন্ট হলেন প্রথমে। একদিন খবর পেলেন ‘আজাদ’ পত্রিকা চট্টগ্রামে একজন এজেন্ট নিয়োগ দেবে। বাড়ি থেকে ১০০০ টাকা জোগাড় করে এনে ছুটলেন কলকাতায়। কিন্তু টাকা থাকা স্বত্তেও এজেন্সী পেলেন না। চট্টগ্রামে ফিরে এসে দেখলেন পার্টনারের আগ্রহ শেষ। কাজেই এজেন্সীশিপের বেঁচে যাওয়া ৯০০ টাকা দিয়ে পার্টনারের অংশ কিনে নিলেন, তিন হাতি দোকানের পাশে একটা টেইলারিং শপ ছিল। সেটাও কিনলেন। দোকান বড় হলো। বিভিন্ন উৎস থেকে দেশ বিদেশের ম্যাগাজিন এনে রাখতে শুরু করলেন। জন্ম হল “নিউজ ফ্রন্টের”। করাচীর প্যারাডাইজ বুকসের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করলেন। চট্টগ্রাম হয়ে দেশে আসতে শুরু করলো রিসার্চ ডাইজেস্টের মত পত্রিকা। নিউজ ফ্রন্টে এসে দাড়িয়ে দাড়িয়ে বই পড়তে শুরু করলেন অনেক। চট্টগ্রামের ইনটেলেকচুয়াল আড্ডাটাও তৈরি হলো এই দোকানকে ঘিরে।
পত্রিকা পড়ার নেশা থেকে পত্রিকা প্রকাশণার কথাও মাথায় আসে। ১৯৮৬ সালে আত্মপ্রকাশ করে চট্টগ্রামের আধুনিক দৈনিক পূর্বকোণ। তার আগেই প্রতিষ্ঠা করেছেন সিগনেট বক্স।
৯০ এর দশকে নিজের সত্তরোর্ধ বয়সে আবিস্কার করেন পাহাড়, সমুদ্র বেষ্ঠিত চট্টগ্রামের লোকেদের পুষ্টি নিয়ে ভাবার লোক নাই। শুরু করলেন ডেয়ারি ও পোল্ট্রি আন্দোলন। কিন্তু অচিরেই দেখলেন এই সেক্টরে জ্ঞানী-গুনি লোক নাই। শুরু হলো চট্টগ্রামে ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। এবং আদায় করেই ছাড়লেন এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।
প্রচন্ড পরিশ্রমী, সততা ও নিষ্ঠার প্রতীক এই উদ্যোক্তার নাম মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী। ১৯২২ সালে চট্টগ্রামের রাউজান থানার হাজিবাড়ি গ্রামে তাঁর জন্ম। ১৯৩৩ সালে চট্টগ্রাম সফরে আসা বাবরীচুলের কবি তাঁর কানে কানে পথে নেমে পথ চেনার কথা বলে গিয়েছিলেন। সেই থেকে তিনি পথে পথেই পথ চিনেছেন এবং নিজের দরদ, ভালবাসা আর পরিশ্রম দিয়ে হয়ে উঠেছেন একজন বরেণ্য উদ্যোক্তা।
চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব – ২০১৫ থেকে শুরু করলো তার নামে তার মত একজন পরিশ্রমী ও উদ্যমী উদ্যোক্তাকে সম্মানিত করা।
শুরু হলো ইউসুফ চৌধুরী উদ্যোক্তা সম্মাননা।
[ইউসুফ চৌধুরী সম্মাননা ২০১৫ পেয়েছেন এফএম প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের উদ্যোক্তা মোহাম্মদ গাজী তৌহিদুর রহমান। তৌহিদুর রহমান ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে সালে কামরাঙ্গীর চরে প্রতিষ্ঠা করেন এফ এম প্লাস্টিকের কারখানা। তিনি তার কারখানার দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপন করছেন নরসিংদীতে। বর্তমানে তাঁর কারখানায় ৮৫ জন কর্মী কাজ করছেন।]
One Reply to “ইউসুফ চৌধুরী – সততা, নিষ্ঠা ও পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি”