গল্পে গল্পে ধাঁধার ২০ বছর : কে জিতবে বিশ্বকাপ ২০১৮?

Spread the love

সে অনেককাল আগের কথা। বাংলামোটর মোড়ে একটি ভবনের দোতলা/তিনতলা মিলে ভোরের কাগজের অফিস। তিনতলায় মতি ভাই-এর রুমের সামনে ফিচারের লোকজনের যাবতীয় কাজ কারবার। সেখানে আমার একটা ডেস্ক আছে যদিও আমার কোন অফিস টাইম নেই। আমার কাজ হলো একুশ শতক বের করা আর আড্ডা দেওয়া। সেই সময় বের হতো ছোটদের পাতা ইস্টিকুটুম। সেটির বিভাগীয় সম্পাদক মুন্নী সাহা। আমি গেলেও যাই দুপুরের পরে বা সন্ধ্যায়। আর যেদিন পেস্টিং থাকতো সেদিন হয়তো আগেভাগে।
তো, মুন্নীই আমাকে খুব চেপে ধরলো আমি যে মাঝে মধ্যে অঙ্কের ধাঁধাগুলো আড্ডার মধ্যে বলি, সেগুলোকে একটা সিরিজ আকারে লিখতে। তবে, সেটি কোন ধারাবাহিক রচনা হবে না। প্রতি সখ্যাতেই উত্তর বলে দিতে হবে।  রাজি হই না, হই না করেও শেষ পর্যন্ত রাজি হলাম। তারপরই মুন্নী একটা বাহানা তুললো যে, এ রচনায় একটি চরিত্র তৈরি করতে হবে এবং সেটি একটি মেয়ে হতে হবে, বুদ্ধিমতী, চটপটে এবং অঙ্কে ভাল!
আমি প্রথমে একটা চরিত্র সৃষ্টি করার চেষ্টা করলাম –ছোটখালা বলে। কিন্তু সেটার সঙ্গে পাতার একটা দূরত্ব তৈরি হলো।
কাজে দ্বিতীয় লেখাতেই পুরো আবহটা বদলে গেল। গল্পের কথক হয়ে গেল একজন সদ্য পাস করা স্নাতক যে কিনা তার বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ভার্সিটিতে শিক্ষক হয়েছে। অলস টাইপের। চশমা পড়ে। ওরা  ক্যাম্পাসেই থাকে। তবে, লেখাগুলতে কথকের নাম অবশ্য কখনো বলা হয়নি। আর তার ছোটবোনের নাম হলো রীমা। রীমা হাইস্কুলে পড়ে, বুদ্ধিমতী এবং অঙ্কে ভাল। রীমার কাছে গল্পের কথকের নানান বিষয়ে হার নিয়ে শুরু হলো গল্পে গল্পে ধাঁধা নামে এক অসমসাহসী চেষ্টা!!! বাংলাদেশে ধাঁধা নিয়ে একটা সিরিজ গল্পের মতো লেখা। আমাদের তখন এক্সপেরিমেন্ট করার বয়স।
মুন্নীর বকা, কখনো চা-পুরি খাইয়ে আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নেওয়া এসব করতে করতে দীর্ঘদিন ধরে লেখা চললো। এক পর্যায়ে মুন্নীর বদলে সুমী আপা সে পাতার দায়িত্ব নিলেন, কিন্তু গল্পে গল্পে ধাঁধা চলতে থাকলো।
ঐ গল্পগুলোতে আমি খুব যত্ন করে আমাদের দেশীয় আবহাওয়াতে বিশ্বের ক্লাসিকাল ধাঁধাগুলোকে নিয়ে আসতাম। কেউ যদি খুঁজতে চায় তাহলে সেখানে যমুনা সেতু, সুবর্ণ এক্সপ্রেস থেকে শুরু করে জনতার মঞ্চ, চট্টগ্রামের রাউজানে আমাদের বাড়িতে কাজী নজরুলের “বাতায়ন পাশে গুবাক তরু” কবিতা লেখা সবই পেয়ে যাবে। আরও ভালমতো খুঁজলে পাওয়া যাবে জামিলুর রেজা স্যার, নওয়াজেশ আলী খানসহ অনেক ব্যক্তিত্বকেও।
তো, আমার গল্পে গল্পে ধাঁধা বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৮ সালে। পরের বছর বের হয় ধাঁধায় ধাঁধায় গল্প। সেখানে অবশ্য গল্পটা খালা –বোনপোর গল্পে পরিণত হয়। দুটো বই প্রকাশ করে অবসর। কয়েকবছর পরে তাম্রলিপির রনি আমাকে পরামর্শ দেয় বই দুইটিকে এক মলাটে নিয়ে আসতে। ততোদিন আমি অঙ্কের ধাঁধা, ধাঁধায় অঙ্ক নামে আর একটি পাণ্ডুলিপি তৈরি করে ফেলি। তো, তিনটি পুস্তককে এক মলাটে নিয়ে তৈরি হয় “অঙ্কের ধাঁধা, ধাঁধায় অঙ্ক” বইটি।
আজ রনি এসে বললো, বই-এর প্রায় ১০ হাজার কপি এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে গল্পে গল্পে ধাঁধারও বিশ বছর হয়ে গেছে। এই বিশ বছরে আরও অনেক ছেলেমেয়ে নতুন নতুন ধাঁধা পড়ার জন্য তৈরি হয়েছে।  এখন তো ইন্টারনেট আর স্মার্টফোনের যুগ আমি কেন সেসব নিয়ে ধাঁধা তৈরি করি না।
আমি রনিকে বকা-ঝকা দিয়ে ফেরৎ পাঠিয়ে দিয়েছি। এমনিতে আমার নানান দোকান। আমার মতো অলস একটা লোকের মাথায় যদি নতুন একটা বই-এর ভুত চাপে, সেটা কি ঠিক হবে?
ও যাবার পর ভাবলাম – বিশ বছর!!! কেমন করে? মনে হয় এই সেদিন। গল্পে গল্পে ধাঁধা প্রকাশের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন প্রথম আলোর মশিউল ভাই। সেই দুইটিরও তিন সংস্করণের রয়্যালটির টাকা পেয়েছি যদিও সেটি খুবই কম ছিল। মনে হয় এক বই থেকে ৫ টাকা পেতাম।

বাসায় ফেরার জ্যামে বসে বুঝলাম রনিকে তাড়িয়ে দিলেও আমার মাথার মধ্যে ধাঁধার ব্যাপারটা মনে হয় রয়ে গেছে। মনে হলো আচ্ছা রনি যে বলে গেল নতুন ধাঁধা বানাতে, কী দিয়ে বানানো যায়।

ভাবতে ভাবতে চোখ গেল হাতের মোবাইল ফোনে। আরে দেশে নাকি এখন ১২ কোটি মোবাইল ফোন। তাহলে  নম্বর দিয়েই হোক না কেন কোন নতুন ধাঁধা। তারপরই খেয়াল হলো – আরে দুদিন পরেই না বিশ্বকাপ। তাহলে কী ধাঁধার সমাধান করে জানা যাবে কে হবে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন?
তো, যে ভাবা সে কাজ। আর তা থেকেই পেয়ে গেলাম একটি নতুন ধাঁধা।

আপনার মোবাইল নম্বরটি কাগজে লিখুন। এটি ১১ ডিজিটের (অঙ্কের) একটি সংখ্যা যদিও ০ দিয়ে শুরু, তার মানে ১০ অঙ্কের সংখ্যা আসলে। অসুবিধা নেই। এখন এই ১১টি  অঙ্ক দিয়ে আপনি নতুন একটা সংখ্যা তৈরি করুন (নতুন অঙ্ক আমদানী করা যাবে না)। এটি ১০ অঙ্কের হতে পারে, ১১ অঙ্কের হতে পারে এমনকী ৭-৮ অঙ্কেরও হতে পারে। এখন দেখুন কোন সংখ্যাটি বড়।
দেখেছেন।
বড় সংখ্যা থেকে ছোট সংখ্যাটি বিয়োগ করুন। কাগজ কলম ব্যবহার করুন না হলে ভুল হয়ে যেতে পারে!
এবার বিয়োগফলের অঙ্ক(ডিজিট)গুলো যোগ করুন। মানে বিয়েগফল যদি হয় ১২৩ তাহরে এ তিনটি অঙ্কের যোগফল হবে ১+২+৩=৬। মনে রাখুন সংখাটি। এটি আপনার ম্যাজিক সংখ্যা।
নিচের ছবিতে দেখুন। বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী নয়টি দেশের পতাকা আছে।


আপনি আপনার হাতের কলমটি প্রথমে আর্জেন্টিনার পতাকার ওপর রাখুন। তারপর গুনতে শুরু করুন ঘড়ির কাটার দিকে, মানে ডান দিকে। এবং এক এক করে যোগ করবেন। মানে আজেন্টিনা ১, ব্রাজিল ২, দক্ষিণ কোরিয়া ৩ এভাবে।

আপনাকে হয়তো একাধিকবার চক্কর দিতে হবে। আপত্তি নাই।

আপনি যখন আপনার ম্যাজিক সংখ্যাতে পৌছে যাবেন, তখনই থামুন।

যে পতাকায় আপনি থামবেন সে দেশই এবারের বিশ্বকাপ জিতবে।

 

 

সবাইকে গল্পে গল্পে ধাঁধার শুভেচ্ছা।

[দয়া করে রনির দল ভারি করবেন না। আলসেমি আমার খুবই প্রিয়]

Leave a Reply Cancel reply