লং লিভ চীন-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ
চীনের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে সেটা কমরেড মাও জে দং-এর সময়ের বা তার পরের সময়ের চীন – যাই হোক। সবচেয়ে বেশি শেখার আছে লম্বা পরিকল্পনার বিষয়ে।
চীনের একধরণের আর্থিক পরিবর্তন শুরু হয় ১৯৭৮ সালে এবং তারপরই সেখানে একটা বেবি বুম হয়। চীন সরকার তখন হিসাব করে বের করে ১৯৯৯-২০০০ সালে এক বিশাল তরুন-গোষ্ঠী কর্মবাজারে ঝাপিয়ে পড়বে। কাজে তারা সেই সময়ে ২০০০ সালকে কেন্দ্র করে তাদের হিসাব নিকাশ শুরু করে। কেন্দ্রে থাকে কীভাবে এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে কর্মী বানানো যায়। তখন তারা প্রথমে উপলব্ধি করে এতো এতো লোককে আসলে চাকরি দেওয়া অসম্ভব। তার চেয়ে বরং এমন কিছু করা দরকার যাতে তারা নিজেরাই একটা কিছু করতে পারে। হিসাবটা ছিল সোজা – সরকার ১০ জনের চাকরির ব্যবস্থা না করে ১ জনকে উদ্যোক্তা বানাবে তখন সে ব্যাটা বাকী ৯ জনকে চাকরি দেবে।
প্রশ্ন হচ্ছে ১ জনকে উদ্যোক্তা বানানোও কিন্তু কঠিন কারণ উদ্যোক্তার প্রোডাক্ট বিক্রির ব্যবস্থা করতে হয়, তার সাপ্লাই চেইনের ব্যবস্থা করতে হয়, তার প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করতে হয়। প্রথমে তারা ঢেলে সাচায় তাদের শিক্ষা যাতে একজন শিক্ষার্থী নিজেকে উদ্যোক্তা হিসাবে গড়ে তুলতে আগ্রহী হয়। মানে শিক্ষা ব্যবস্থাকে বানানো হয় “প্রবলেম সলভিং” মুখী। ফলে শুরু থেকে তারা প্রবলেম সলভিং-এ অভ্যস্থ হয়ে ওঠে। সেখানে সৃজনশীলতার নামে “কীভাবে সাতার কাটতে হয়?” জাতীয় প্রশ্নের উত্তর পরীক্ষার খাতাতে লিখতে হয় না। কোন এক পন্ডিতের কথার তোড়ে কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নের নাম সৃজনশীলতাও হয় না! (সেটার ফলাফল আজকে আমরা জানি – চীনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রোগ্রামিং কিংবা গণিতের বিশ্ব আসরে অন্যদের পেরে ওঠাটা কঠিনই বটে)।
পাশাপাশি তারা নতুন উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সরকারি-কল-কারখানা-প্রতিষ্ঠানের একটা চেইন বানাতোতে নজর দেয়। মানে হলো এরকম ছোট ছোট উদ্যোক্তারা তাদের প্রোডাক্ট মাঝারি/বড় প্রতিষ্ঠানের কাছে বেঁচে দেবে। আর বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের জন্য কাঁচামালের ব্যবস্থা করবে।
এ সময় চীনা কোম্পানিগুলো তাদের ৯০% প্রোডাক্টই এরকম ছোট ছোট এসএমই-দের কাছ থেকে নেওয়া শুরু করে। ফলে দ্রুত বদলাতে থাকে চেশের মানচিত্র।
পাশাপাশি শুরু হয় “দেশীয় পন্য কিনে হও ধন্য” টাইপের আন্দোলন। মানে হলো “দেশের টাকা দেশে রাখো” ব্যাপার। প্রথম দিকে তাদের পন্যের মান ভাল ছিল না কিন্তু জহরলাল নেহেরুর সেই বিখ্যাত “যতদিন ভারত ব্লেডে শেভ করা যাবে না ততোদিন ভারতীয়রা দাড়ি রাখবে” নীতি অবলম্বনের ফলে স্থানীয় বাজার নিজেদের হাতেই থেকে যায়। ফলে, চীনা উদ্যোক্তারা হয়ে উঠেন ক্রমাগত দক্ষ ও অভিজ্ঞ। কে না জানে “লোকাল এক্সপেরিয়েন্স, গ্লোবাল বিজনেস”। কাজে ওরা দ্রুত বিশ্ববাজারের জন্য গড়ে উঠে। এখন তো “মেড ইন চায়না” হয়ে গেছে “মেড ইন ওয়ার্ল্ডের” সমার্থক।
এটি আজকের চীনের মাত্র একটি গল্প। শিখতে চাইলে আমাদের জন্য অনেককিছুই আছে।
না চাইলে আমরা বরং নতুন করে বেইজিং-এ বৃষ্টি হলে দেশে ছাতা ধরার সংস্কৃতি আবার চালু করতে পারি।
চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর সফল হোক, চীনের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য সম্প্রসারিত হোক এবং বিশ্বর সব ভাল কিছু শেখার তৌফিক আমরা লাভ করি।
চীন-বাংলাদেশ বন্ধৃত্ব দীর্ঘজীবী হোক।
শুভ সকাল।