কোটি টাকা লাগবে যাদের-২

Spread the love

কোটি টাকা লাগবে যাদের-১

Venture1ব্যবসার এক পর্যায়ে বাড়তি টাকার দরকার হয়। আমাদের দেশে সাধারণত এই টাকা যোগাড় করা হয় ব্যাংক থেকে, কখনো কখনো চড়া সুদে। ব্যাংক থেকে টাকা পাওয়াটা অনেক সময় ভাগ্যের ব্যাপার। বিশেষ করে নতুনদের জন্য। এর অনেকগুলো কারণ-

ক. প্রথমত নতুন উদ্যোক্তা তার ভেঞ্ঞারটাকে এতই ভালবাসে এবং এতই প্যাশনেটভাবে কাজ করে যে, তার পক্ষে কতগুলো প্রয়োজনীয় কাগজ বানানোর সময় থাকে না, ইচ্ছেও করে না।

খ. শুরুরদিকে অনেক চড়াই উৎরাই পার হতে হয়। ফলে কারো কারো বিজনেজ প্ল্যান প্রতিদিন্ব পাল্টে যায়। কাজে সেটাকে কাগজে লেখা সম্ভব হয় না।

গ. শুরুর দিকে সব কাজই নগদে করতে হয় নানান উসিলায়। যেমন যাত্রাবাড়ি থেকে একটা বিল তুলে আসার সময় মতিঝিলে একজন পাওনাদারের টাকা শোধ করতে হয়। কাজে নগদ ছাড়া উপায় থাকে না কারণ চেক নিলে তো দুইদিন যাবে। এই করতে গিয়ে অনেকেই প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক একাউন্টও খুলতে পারে না।

ঘ. অনেক সময় জরুরী টাকা দরকার হয় যা কিনা গ্রোথেও কাজে লাগে কিন্তু কাউকে সেটা বুঝিয়ে বলাটা সম্ভব হয় না।

এই সমন্ত বিবেচনায় আমাদের নতু উদ্যোক্তারা খুব সহসা ব্যাংক থেকে কিছু পেতে পারে না। বাকী থাকলো মামা-চাচারারা। সেখানে আবার খুব বেশি টাকা পাওয়া যায় না।

এখন দেশে বেশ কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সৃস্টি হয়েছেন। আমার জনামতে চারটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি আছে। এদের পাশাপাশি এখন গোটা কয়েক বিদেশী ভেঞ্চার কোম্পানিও দেশে আসার উদ্যোগ নিয়েছে। গত এক বছরে আমার হিসাবে চারটি বিদেশি কোম্পানি দেশে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। দেশীয় কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগের পরিমাণ তার চেয়ে বেশি বৈ কম নয়।

তবে, আমরা এই সম্পর্ক জানি কম। কারণ একটা হল আমাদের গোপনীয়তার সংস্কৃতি। অনেক উদ্যোক্তা বিনিয়োগ নেওয়ার ব্যাপারটাকে গোপন রাখতে চান। কারো কারো ধারণা, তিনি যে বিনিয়োগকারী নিয়েছেন এটা বেশি লোক না জানাই ভাল!

কিন্তু আমার মনে হয় এই সংস্কৃতি ভাঙ্গা দরকার।

বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারাটাও একজন উদ্যোক্তার সাফল্যের বড় মাপকাঠি। কাজে এন সাফল্যের কথা ফলাও ভাবে বলা দরকার যাতে অন্যরাো শিখতে পারে। শেখার ক্ষেত্রে অনেককিছুর লিস্ট আছে। আমাদের উদ্যোক্তাদের এই সব বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে।

এই নিয়ে আমার আগের একটা পোস্টে আমি বিনয়োগকারীরা উদ্যোক্তার মধ্যে কী খুঁজেন তার কথা লিখেছি। এর মধ্যে আমাদের চাকরি খুঁজবনা গ্রুপ খেকে উদ্যোক্তা বিনিয়োগকারী মেলবন্ধনের একটি প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছি। এই কার্যক্রমের মটো হল – এক পা পেছনে, দুই পা সামনে। আমাদের ফরমে অনেকেই বিনিয়োগ চয়েছেন কিন্তু বিনিয়োগকারীকে কোম্পানিতে আত্তীকরণে রাজী হোন নি যা থেকে বোঝা যায় তারা বিনিয়োগকারী এবং ঋণদাতাকে একই মনে করছেন। অনেকেই আমার সঙ্গে কথা বলার সময় বলেছেণ ওনাকে কতটাকা ফেরত দিতে হবে?

অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদেরকে ব্যাংকের সঙ্গে তুলনা করতে হচ্ছে। এই জন্য আমার মনে হল আসরে আমাদের উদ্যোক্তাদের এই ব্যাপারে কিছু অভিজ্ঞতা বিনিময় হওয়া দরকার। সেভাবে আমরা সেশনগুলোকে সাজাবো

  • বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে তাদের চাদিদা সম্পর্কে জানা,
  • ফিরে গিয়ে কেমন করে হোমওযার্ক করতে হবে সেটা সম্পর্কে প্রস্তুতি,
  • যারা দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ সফল হয়েছেন তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময়, এবং
  • উদাহরণ সৃষ্টি,
  • এনজেল ইনভেস্টরদের নেটওয়ার্ক তৈরি, ইত্যাদি।

ধারাবাহিকভাবে আমরা এই কাজগুলো করব।

পাশাপাশি নিজেদের পড়াশোনার ব্যাপারটাও চালিয়ে যেতে হবে।

আমার নিজের পড়াশোনাও অব্যাহত রেখেছি। আগের পোস্টে বিনিয়োগকারীদের চাহিদা সামনে রাখার কথা বলেছিলাম উদ্যোক্তাদের।

এখন আমি পড়ছি জাপ্পোসের সিইও টনি সেই-এর বিখ্যাত বই ‘ডেলিভারিং হ্যাপিনেজ’। সেখানে টনি তার বিনিয়োগকারী ও বোর্ডমেম্বার ম্যানেজের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু প্রশ্ন তৈরি করেছেন। এগুলো স্টাডি করলে আমাদের বিনিয়োগ প্রত্যাশী উদ্যোক্তাদের খুবই উপকার হবে বলে আমার ধারণা। প্রশ্নগুলো এখানে দিয়ে দিলাম-

১. তোমার কি আসলেই বিনিয়োগকারী দরকার? বিনিয়োগ বাদ দিয়ে খুব আস্তে আস্তে কী বাড়া যাবে? অর্থাৎ বিনিয়োগ না নিয়ে তুমি এখন যেভাবে বাড়ছো সেভাবে কি তুমি এগিয়ে যেতে পারো?

২. তোমার বিনিয়োগকারী কতোটা সক্রিয়ভাবে কোমার সঙ্গে যুক্ত হবে? তুমি নিজে কী চাও? বিনিয়োগকারী সক্রিয়ভাবে কতোটা যুক্ত হলে তুমি খুশী হবে?

৩. টাকা ছাড়া বিনিয়োগকারী আর কি কি ভ্যালু এড করতে পারে? যেমন কানেকশন, উপদেশ, অভিজ্ঞতা?

৪. বিনিয়োগকারীরা তো এক সময় চলে যেতে চাইবেন। ওনারা কত সময় পরে চলে যেতে চাইবেন? কোটা সময় তুমি পাবা?

৫. টাকাপয়সা চাড়া যদি বিনিয়োগকারীরা বাড়তি কিছু দেন, তার বিনিময়ে তারা কী চান? কীভাবে তারা অগ্রািকার ঠিক ককরতে পারবে?

৬.তোমার বিনিয়োগকারীরা কী তোমার কোম্পানির ভিশন-মিশনকে ওউন করবে? নিজেদর ভাববে?

৭. অনেক সময় দেখা যায়, লক্ষ্যপূরণে দ্রুত এগুনোর জন্য লাভের খাতায় বেশি যোগ করা যায় না। এটা কী ওনারা মানবেন?

৮. চিন্তা চেতনায় বিনিয়োগকারী এবং পার্টনাররা কতোটা ফ্লেস্কিবল?

৯. বিনিয়োগকারীদের কে নিয়ন্ত্রণ করে?

১০. বিনিয়োগকারী/পার্টনারদের কোর ভ্যালু কি তোমার কোর ভ্যালুর সঙ্গে মিলে?

আগামীতে আমি আরো কিছু লেখা লেখার চেষ্টা করবো। তবে, অলসদের কাছে বেশি প্রত্যাশা করতে নেই।

 

সবার জীবন পাই-এর মত সুন্দর হোক।

 

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version