আজ ও আগামী দিনের নায়ক – অবতরনিকা

Spread the love

এই দৃশ্য আমরা হর হামেশা দেখি। তবে, সিনেমার পর্দায় আর কি।

ডরমিটরি থেকে নায়িকা বের হবে। ক্লাশে যাবে। আমাদের নাযক ওৎ পেতে থাকবে এবং সুযোগ মতো একটা ধাক্কা খাবে বা ধাক্কা খাওয়ার ভান করবে। ফলে নায়িকার হাত থেকে বই পত্র পড়ে যাবে। নায়ক কাচুমাচু হয়ে, দু:খিত হয়ে হয়ে সেগুলো তুলে দিতে দিতে নায়িকার দিকে তাকিয়ে বলবে – তুমি? তোমার সঙ্গে  না ক’দিন আগে এক পার্টিতে দেখা হল! আমি তমুক।
নায়িকা মাত্র সপ্তাহ খানেক হল এই ভার্সিটিতে এসেছে। কাজে কোথায় কার সঙ্গে আলাপ হয়েছে বলা মুশ্কিল।

টুকটাক কথা বলতে বলতে ক্লাশের দিকে আগাবে দুইজন। এক সময় বিদায় নেওযার কালে নায়ক, “আমরা কী একদিন আইসক্রিম খেতে পারি।”

ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে নায়িকা রাজি হবে।

নায়িকা দৃষ্টিসীমার বাইরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝোপঝাড় থেকে নায়কের বন্ধুরা বের হয়ে আসবে। তাদের মধ্যে থাকবে আমাদের প্রমির মতো কেও। খুশীতে নায়ক তাদের নিয়ে যাবে স্টারে। চলবে লেগরোস্ট আর সেলফি তোলা!!

ক’দিন পরে, নির্ধারিত দিনে মাঞ্জা মেরে নায়ক হাজির হবে ডরমিটরির রিসেপশনে। এবং হতবাক হয়ে দেখবে নায়িকা তার জন্য একটা চিরকুট রেখে গেছে – দু:খিত। আমি আজকে যেতে পারছি না। আমার পড়া আছে। পড়তে গেলাম।”

হতবিহবল নায়ক কী করবে?

নায়ক কী করবে সেটা বলার আগে বলে নেই, এটি কোন বাংলা সিনেমার পর্ব নয়। এমনকী বাঙ্গাল মুলুকেরও নয়। কয়েক হাজার মাইল দূরে কানাডার কুইনস বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটছে।

আমাদের নায়কের অরিজিন আবার দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখানেই সে বড় হয়েছে। ক্লাশ ফোরে উঠতে না উঠতেই স্কুল লাইব্রেরি আর পাড়ার লাইব্রেরির সব বই তাঁর পড়া। এমনকী এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা পড়াও শেষ। মোটামুটি জীবন্ত বিশ্বকোষ। খাওয়ার টেবিলে প্রায়শ দাদী নানান প্রশ্ন করে এবং নিখুঁত উত্তর দিয়ে নায়ক নায়ক হয়ে ওঠে।
ফার্স্ট ফরোয়ার্ড দিয়ে আমরা নায়ককে নিয়ে যাই তার হাইস্কুলে। সেখানে বেচারা প্রতিদিনই মার খায় একদল বখাটের হাতে। তবে, মরে না, মার খেয়ে সহ্য করতে থাকে। তার ভাই দূর থেকে তাকে দেখে আর মার খাওয়া শেষ হলে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এসব কিছু কিন্তু তার গ্রেড ঠেকাতে পারে না। ক্লাসে কেও তাঁর সঙ্গে পড়ালেখাতে পারে না।

নায়ক বুঝে ফেলে প্রিটোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকাতে থাকলে তাকে বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে যেতে হবে। সুযোগ খুঁজতে থাকে এবং ইন্টারনেট বিহীন যুগে চিঠি লিখে, পরীক্ষা দিয়ে কানাডায় যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়্।
শুনেছে কানাডায় এক মামা আছে। তার ঠিকানা নিয়ে হাজির হয়ে সেখানে। কিন্তু বিধি হলে বাম কী করবেন রাম! মামা চলে গেছেন অন্য কোথাও। তারপর একবছর অড জব করে পড়ালেখার টাকা জমিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি! ওয়াটারলুর পরিবর্তে কুইনস বেঁছে নিয়েছে কারণ ওয়াটারলুর তুলনায় কুইনসের ছাত্রীরা বেশি সুন্দরী! এর মধ্যে তাঁর ভাইও এসে পড়েছে সেখানে।

ফ্ল্যাশ ব্যাক শেষ। আমরা আবার ফিরে যাই ডরমিটরির রিসেপশনে। বেচারা নায়ক। কীভাবে বন্ধুদের মুখ দেখাবে এখন?

ভাবতে ভাবতে স্মরণ করে নায়িকার কোন একজন বন্ধুর কথা। মনে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়। ক্যামেরা নায়কের দৌড়ের দৃশ্যটা ধরে রাখে এবং দৃশ্য থেকে নায়ক যখন বের হয়ে যায় তখনই সেখানে দৃশ্যান্তর ঘটে।

স্টাডিরুম। এক কোণার একটা টেবিলে বসে নিবিষ্ট মনে পড়াশোনা করছে আমাদের নায়িকা। ক্যামেরা জুম করে নায়িকাকে দেখায় তারপর ক্যানভাস বড় হতে থাকে এবং অবাক হয়ে আমরা দেখি আমাদের নায়ক হাতে চকলেট ফ্লেবারের আইসক্রিম নিয়ে ক্যামেরায় ঢুকে পড়েছে। আমাদের মতো নায়িকাও অবাক হয়ে দেখে তার প্রিয় আইসক্রিম নিয়ে আমাদের নাযক তার সামনে দাড়ানো!

কেমনে? ঔ যে দৌড়ে বন্ধুর কাছে গিয়েছে, সেখানে তার কাছ থেকে শুনেছে নায়িকার ফেবারিট আইসক্রিম কোনটা। সেটা নিয়ে নায়ক হাজির হয়েছে নায়িকার কাছে। যা সে একবার ভাবে, সেটা সে করেই ছাড়ে!

কাট।

এই লেখার সঙ্গে নায়কের ছবি আছে। কাজে অনেকেই হয়তো আমার গল্পের নায়ককে চিনে ফেলেছেন। যারা চিনেন নাই তাদের জন্য বলি, আমাদের নায়কের নাম এলন মাস্ক। আমি বলি ভবিষ্যতের নায়ক।

এলন মাস্কের নাম আসলে আসে পেপালের নাম। ঠিক ধরেছেন এলন পেপালের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তবে, আর সব আইটি আইকনের মতো এলন কেবল আইটিতে নিজেকে আটকে রাখেননি। কাজে তিনি স্পেসএক্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান চালান।

সবচেয়ে বড় কথা এলনের আর একটা কোম্পানির নাম হচ্ছে টেসলা মটর।

নিকোলা টেসলার কথা মনে আছে তো? সেই নিকোলা টেসলা যে সব স্বপ্ন দেখতেন সেগুলোকেই বাস্তবে নামানোর কাজে নেমে পড়েছেন এলন মাস্ক।

এই এলন মাস্ককে নিয়ে এসলে ভ্যান্স ইয়া মোটা একটা বই লিখেছেন। সেটাই পড়ছি এখন। গতকাল ১৬ জুন বাড়ি আসা যাওয়ায় চারভাগের একভাগ পড়া হয়েছে। ইদানীং লিখতে পারি না বলে কয়েকপর্বে তার গল্পটা লেখার ইচ্ছাটা আছে। দেখা যাক কতদূর পারা যায়।

এখন পর্যন্ত মেসেস একটা – পড়, পড় এবং পড়

আল্লাহ ভরসা।

 

 

 

 

 

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version