শিখছি কোথায়, গরুর গুতায়!!!
পাশে চলছে জগদীশ বসু বিজ্ঞানক্যাম্প। এটি চতুর্থ আয়োজন। এবারের ক্যাম্পটি শহরের মধ্যে হচ্ছে। কারণ বাইরে নেবার সামর্থ-টাকা দুটোই আমাদের কমে গেছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, দেশে কনসার্টের যতো পৃষ্ঠপোসক তার তুলনায় বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক অনেক কম।
সেখানে আরিফুজ্জামান জানালো প্রথমবার ক্যাম্প থেকে ফিরে গিয়ে স তার ক্লাশের বন্ধুদের কনভি্স করতে পেরেছে যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলার জন্য। ওর ক্লাশের ৫০% ছেলে এখন রাস্তাঘাটে ময়লা ফেলে না! ওরা বলেছে ফিরে গিয়ে মাকে সাহায্য করবে, যা শিখছে সেটা বন্ধুদের জানাবে আর চেষ্টা করবে নিজেকে ছাড়িয়ে যাবার। বিজ্ঞান ক্যাম্পে এবার জোর দেওয়া হচ্ছে গবেষণার বিষয় খোঁজা, সার্চিং। থাকছে পিয়ারদের সঙ্গে কাজ করার খুটিনাটি। বিজ্ঞান ক্যাম্পে আজকে এটা বিশেষ ক্লাশ ছিল রোবটিক্সের। ওদের আগ্রহ দেথে মনে হল হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য রোবটিক্স নিয়েও নানা আয়োজন হতে পারে। মাসিক বিজ্ঞান চিন্তার একটা কভার স্টোরি করা হবে আগামী সময়ে এই নিয়ে। এবারের ক্যাম্পের উদ্দেশ্য গবেষণার পারিপার্শ্বিকতা। কেবল গবেষণা করলেতো হয় না, মাথায় রাখতে হয় আশেপাশের বিষয়। কারণ আশে পাশেই তো যতো প্রশ্ন! আচ্ছা, যখন কেউ কোন বল হাত থেকে ছেড়ে দেয় তখন সেটা কই পরে? নিউটনের মাথায় যদি আপেল না পড়ে কাঠাল পড়তো তাহলে কী হতো!!! কাল এসেছিলেন আরশাদ মোমেন। যাদের ক্লাশ করার জন্য আমি সব সময় প্রস্তুত থাকি তাদেরই একজন অধ্যাপক আরশাদ মোমেন। আমাদের ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের প্রাণপুরুষ।
কাল এসেছিলেন নাভীদ মাহবুব। বলেছেন কেমন করে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সিইওগিরি ছেড়ে হাসানোর মাধ্যমে পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন। তার ঘন্টা দেড়েকের সেশনে সবাই মন খুলে হেসেছে এবং হো হো করেছে। কিন্তু নাভিদ যাবার পর যখন জানতে চাইলাম কী পেল – তখন সবাই অনুপ্রেরণার কথাই বলেছে। “শিখছি কোথায়, গরুর গুতায়” – এইমন্ত্র। যা ভাল লাগবে সেটা করা। দেশে বা বিদেশে যেখানেই যাই না কেন মানুষের জন্য ভালবাসাটা যেন থাকে।
আমি যখন চলে আসছি তখন সেখানে হাজির হয়েছে ওদের পাঠ্যপুস্তকের ছবি মাহমুদুল হাসান সোহাগ। সোহাগ ক্যাম্প থেকে বের হয়েছে রাত ১১টায় তখনো কারও চোখে ঘুম নেই। যদিও ওরা সবাই ঘোম থেকে উঠেছে ভোর বেলায়।
আজ সকালে বিজ্ঞানের ক্যাম্পে ক্লাশ নেবেন লাফিফা জামাল আর সন্ধ্যায় যাবেন আমাদের সবার প্রিয় কাজি এম আহমেদ। অন্যরাতো থাকবেনই।
বিকেলের দিকে ক্যাম্পে যাবার চেষ্টা করবো ইনশা আল্লাহ।
ক্যাম্পের কথা বললেও সকালটা কিন্তু শুরু হয়েছে সম্মেলন দিয়ে। কাল ছিল ৫ম জাতীয় শিক্ষক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন। সেখানে শিখন ও শিক্ষণে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার শীর্ষক একটি উপস্থাপনা ছিল আমার। হয়তো ভিন্ন কথা বলেছি। বলেছি – ওয়ান ল্যাপটপ পার চাইল্ড সাফল্যের সঙ্গে ফেইল করেছে। সাফল্যের সঙ্গে কেন? কারণ সেটা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। বলেছে – আইসিটি কেবল, আমি আবার বলছি, কেবল একটা টুল মাত্র। সেটির ব্যবহারের সুফল পেতে হলে মূল জায়গাতে হাত দিতে হবে নতুবা অনেক দিন পরেও আমরা শিক্ষার মান উন্নয়নে আইসিটির সুফল পাবো না।
বলেছি আমরা যখন একটা সিনেমা দেখি তখন কিন্তু সিনেমাটাই দেখি সিনেমার গল্পটা দেখি, খুব একটা ভাবি না কোন ক্যামেরায় শ্যুটিং করা হয়েছে, সেরকম বই পড়ার সময় কোন প্রেস, সেটার কী কী গুন সেটাও আমরা দেখি না। তাহলে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে যখন শিক্ষার ব্যাপারটা সামনে আসে থখন কেন আমরা কোন প্রযুক্তি সে আলোচনা করি? করি, কারণ সেটা করতে আমাদের প্রলুব্ধ করা হয়। ট্যাব ওয়ালারা আমাদের সব বাচ্চাদের হাতে ট্যাব দিতে উদ্ধুক্ত করে কারণ সেটা তাদের ব্যবসা। ট্যাবের চাইতে বাচ্চার বেশি দরকার মাঠ, দরকার দাদীর কাছে গল্প শোনার দরকার আকাশ দেখার বাতিক। দরকার পুকুরে ঝাপিয়ে পড়ার উদ্যম দরকার তর্ক-বিতর্ক, বাস্তবে ফেসবুকে নয়। বলেছি শিক্ষকদের ওপর অহেতুক চাপ দেওয়া হয় ক্লাশে “আইসিটি” করতে। যদিও সব সমস্যার একটা মাত্র সমাধান হয় না। সমস্যা যেহেতু অনেক, সমাধানও অনেক হবে। মনে রাখতে হবে আইসিটি সমাধান নয়, সমাধানের অংশ বিশেষ।
এর পর সেখান থেকে গিয়েছিলাম বাংলাদেশে Cisco Networking Academy এর কনফারেন্সে। দীর্ধদিন পরে সেখানে গিয়ে একটু স্মৃতিতাড়িত হয়ে পড়েছিলাম কারণ আমাদের সাত্তার স্যার সেখানে ছিলেন। সিসকো নেটওয়ারর্কিং একাডেমি আমার জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্ট। এই একাডেমির শিক্ষার্থী ও পরে তার ইনস্ট্রাকটর হিসাবে আমি এমন সব কিছু শিখেছি যা আমার সারাজীবন কাজে লাগছে। প্রথম কোন আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে আমি গিয়েছিলাম এই একাডেমির সম্মেলনে। বাইরের জগতের ব্যাপারটা আমাকে অনেকখানি তাড়িত করে সেই সময়। কাল কথা বলার সময় সেগুলোও মনে হয়েছে। তবে, সেকানে গিয়ে স্যারদের অনুরোধ করেছি যেন তারা ৬ বিলিয়ন ডলার নিয়ে ভাবেন। প্রতিবছর আমাদের দেশ থেকে বিদেশী বিশেষজ্ঞরা বেতন-ভাতাদি বাবদ এইটাকাটা নিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক-বীমা-প্রাইভেট সেক্টর সবাই দক্ষ কর্মীর জন্য হা-হুতাশ করছে আর অনেকেই চাকরি পাচ্ছে না। এই গ্যাপ মেলানোর চেষ্টা করতে। বলেছি পৃথিবী একটা নেটওয়ার্কিং। এখন বাজার বন্ধেও দিন চলে কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে চলে না। তার ইন্টারনেটকে ধরে রাখার লোকদের তাই চাহিদা বাড়ছে ক্রমাগত। সেটাতে জোর দিতে। জানলাম একাডেমিতেও মেয়েদের সংখ্যাবাগানোর জন্য আলাদা উদ্যোগ আছে। উম্মে সালসাবিল সেটার জন্য কাজ করছে।
দুপুরে আর এক জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল সেটা আর হলো না। কারণ তার পরেই ছিল ওয়ান-ইফরা সম্মলনের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ব্যাপার।
একটা কনফারেন্সময় দিন আ কী!
শুভ সকাল।