তারিফের জন্য শত তারিফ

Spread the love

তারিফকে আমি প্রথম কবে দেখেছি? ঠিক স্মরণ করতে পারি না। মনে হয় জহুরুল হক – আবদুল্লাহ আল মুতী স্মারক বক্তৃতামালার যে পর্বে রাগিব হাসান জনমানুষের বিশ্বকোষ নিয়ে বক্তব্য রেখেছে সেদিন। অথবা অন্য কোন দিন। তবে, তাতে কিছু যায় আসে না।
ধীরে ধীরে নিম্ন স্বরের কথা বলার এই তরুন অনেকদূর এসেছে নিজের চেষ্টায়। সিএসই থেকে ডিগ্রী নিয়ে কিছুদিন মুক্ত সফটে কাজ করেছে। এখন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামিং কোচ। এবং এরই মধ্যে এনএসইউ দলকে ওয়ার্ল্ড ফাইনালে নিযে গেছে। একা না, কিন্ত সামনের কাতারের কাজটা ওরই।
তারিফের কারণে আমি সাহস করেছি আগামী কয়েক বছরেরর মধ্যে আমাদের একটা অল গার্লস টিম যাবে ওয়ার্ল্ড ফাইনালে। ও আমাদের মেয়েদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজটা করবে মনের আনন্দে।
তবে, ওর প্রথম যে কাজটা, যে কারণে প্রথম আলোর প্রথম পাতায় ওকে নিয়ে আমি লিখেছি সেটাও কম না। সেটি সে ছোট থাকতেই করেছে।
তারিফ আমার সঙ্গে অনেক কাজ করেছে। সামনে আরো করবে যতদিন না আমরা বলবো “ওর যোগ্যতা নাই বলে ও বিদেশে যেতে পারছে না”। যদি না সে রেগে মেগে গুগল-ফেসবুকে চলে না যায়।

বিডিওএসএন, উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ কিংবা এটুআই-তে ওর কিছু ছবি দিয়ে ওকে জন্মিদনের শুভেচ্ছা জানাই।

শুভ জন্মদিন তারিফ। শতায়ু হও।

===২০০৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি এই লেখাটা ছাপা হয়েছে, প্রথম আলোর প্রথম পাতায়====

কোন একটা মেলায়

আমাদের শহীদ দিবস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হয়েছে প্রায় নয় বছর। ১৯৯৯ সালের নভেম্বরে ইউনেসকোর স্বীকৃতি পাওয়ার পর জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো ২০০০ সালের জানুয়ারিতে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে গ্রহণ করে। অথচ এত দিনেও এ দেশগুলোকে দিবসটির ইতিহাস ও তাত্পর্য জানানোর দায়িত্ব পালন করতে পারেনি আমাদের সরকারগুলো।

তবে একটি ব্যক্তিগত উদ্যোগের কল্যাণে বিশ্বের লাখ লাখ পাঠক এবার ইন্টারনেটে বাংলা ভাষার গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। বিশ্বের বৃহত্তম বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার ইংরেজি সংস্করণের প্রথম পাতায় কাল বৃহস্পতিবার থাকবে আমাদের ভাষা আন্দোলন ও শহীদ মিনারের গৌরবগাথা। ঢাকার কিশোর তারিফ এজাজের একান্ত চেষ্টা ও একদল বাংলা উইকিপিডিয়ানের পরম মমতায় সম্ভব হয়েছে এ কাজটি।

গণিত অলিম্পিয়াডের ভলান্টিয়ার

জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোয় একুশে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সংক্রান্ত তথ্য পৌঁছে দেওয়ার সরকারি উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। তারা একটি ওয়েবসাইট খোলারও উদ্যোগ নেয়। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এ সিদ্ধান্তটি বাতিল করে। সরকার নিবৃত্ত হয়ে যাওয়ায় অনেকে ক্ষুব্ধ বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছিলেন। কিন্তু কল্যাণপুরের সদ্য স্কুল পেরোনো তারিফ এজাজ বেছে নেন প্রতিবাদের ভিন্ন ভাষা। তিনি লক্ষ করেছিলেন, তথ্যের জন্য বিশ্বব্যাপী মানুষ ক্রমশ ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। আর সেখানে তথ্য অনুসন্ধানের প্রথম ধাপেই আসে ইন্টারনেটভিত্তিক মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার নাম।

তারিফ জানিয়েছেন, প্রথম আলোর সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্র ‘প্রজন্ম ডট কম’-এর (৩১ মার্চ ২০০৫) একটি নিবন্ধের কথা তাঁর মনে পড়ে। সেখানে একদল স্বেচ্ছাসেবীর কথা প্রকাশিত হয়েছিল, যারা উইকিপিডিয়ায় বাংলাদেশ ও বাংলায় ভুক্তি লেখার কাজ করছেন। তা পড়ে তারিফ মনস্থির করেন, উইকিপিডিয়ার মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের তথ্য পৌঁছে দেবেন বিশ্ববাসীর কাছে।

নীলক্ষেত থেকে বদরুদ্দীন উমরের একটি বই কেনার মধ্য দিয়ে তারিফের উদ্যোগের শুরু। এর মধ্যে বাংলা উইকিপিডিয়ানদের দলে যুক্ত হয়েছেন তিনি। তখনো তারিফের ইন্টারনেট সংযোগসহ কোনো কম্পিউটার ছিল না। কেবল বড় ভাইয়ের নতুন মোবাইল সেট ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছেন। তার মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের নানা তথ্য যোগ করতে শুরু করেন ইংরেজি উইকিপিডিয়ার নিবন্ধে। ডানা মেলতে শুরু করে তারিফের স্বপ্ন। কোনো বিশ্বকোষের জন্য এই প্রথম তাঁর লেখা। পদে পদেই নানা ঝামেলা। জ্যেষ্ঠ উইকিপিডিয়ানদের পরামর্শ নিতে শুরু করেন তিনি। যুক্ত ও যাচাই হতে থাকে তথ্য, বাড়তে থাকে নিবন্ধের মান। ফেব্রুয়ারি ২০০৭ সালের ভেতর নিবন্ধটি একটি সন্তোষজনক চেহারা নেয়। এ পর্যায়ে উইকিপিডিয়ান আদিত্য কবির ও দ্বৈপায়ন চক্রবর্তী এর মানোন্নয়নে শরিক হন। গত ১৬ জুলাই নিবন্ধটি উইকিপিডিয়ার সর্বোচ্চ সম্মান ‘নির্বাচিত নিবন্ধ’র মর্যাদা পায়। নির্বাচিত নিবন্ধগুলো উইকিপিডিয়ার প্রথম পাতায় স্থান পায়। উইকিপিডিয়ার প্রশাসক রাগিব হাসান এ নিবন্ধটি এবারের একুশে ফেব্রুয়ারিতে উইকিপিডিয়ার প্রথম পাতায় স্থান করে দেওয়ার জন্য আবেদন করেন। সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এটি আগামীকাল উইকিপিডিয়ার প্রথম পাতায় থাকছে। একই দিন প্যারিসে ইউনেসকোর সদর দপ্তর থেকে ২০০৮ সালকে আন্তর্জাতিক ভাষাবর্ষ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেওয়া হবে।

এটি আমাদের দ্বিতীয় বছরের সমাবেশ, বই মেলার সামনে। কষ্ট করে খুঁজলে তারিফকে পাওয়া যাবে

তারিফ এখন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার কৌশল বিভাগের ছাত্র। তারিফ বলেন, ‘উইকিপিডিয়ায় যে কেউ তথ্য যোগ করতে পারেন, সেটি সম্পাদনা করতে পারেন। ইংরেজি উইকিপিডিয়া অনেক সমৃদ্ধ। আমাদের জোর দেওয়া দরকার বাংলা উইকিপিডিয়াকে সমৃদ্ধ করার কাজে।’

তারিফের সংগঠন বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের উদ্যোগে ফেব্রুয়ারি মাসকে বাংলা উইকি মাস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। তারিফ আশা করছেন, এতে নতুন অনেকে উদ্যোগে শামিল হয়ে বাংলা ভাষার বৃহত্তম বিশ্বকোষটি গড়ে তুলবেন।

 

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version