নিজের উদ্যোগ শুরু করুন ৩- বীমা বীমা বীমা

Spread the love

১৯৯২ সালের ২৭ জুন আমার কর্মজীবন শুরু হয়, বুয়েটের তৎকালীন কম্পিউটার সেন্টারে, সহকারি প্রোগ্রামার হিসেবে। বেতন- ১৬৫০ টাকার স্কেলে সাকল্যে ৪ হাজার ২৩০ টাকা। তখন অবশ্য জানতাম না কম্পিউটার সেন্টারে অফিস টাইম শেষে অনেক কনসালটেন্সী ও অন্যান্য কাজ করা যায়। সে যাকগে, চাকরির পর প্রথম বাড়ি গেলাম সেপ্টেম্বরে। বাবা শুধু বললেন আমি যেন চেক বই সঙ্গে নেই। কেন সেটা বললেন না।

৪ সেপ্টেম্বর সকালে বাসায় এক ভদ্রলোক আসলেন। বাবা আমাকে ডেকে পাঠালেন ড্রয়িং রুমে। তারপর যা বললেন সেটার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। তাও এলিকোর একটা লাইফ পলিসিতে সই করলাম। এবং একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকার চেক লিখে দিলাম। তারপর মা’র কাছে গজগজ করলাম কেন বাবা আমাকে এই “ফালতু খরচে” ঠেলে দিলেন।

কিন্তু ২০১০ সালে আমি এই এনডাউমেন্ট পলিসির ম্যাচিউরিটির পুরো টাকাটা যখন একত্রে পেলাম তখন বেজায় খুশি হই। কারণ তৎক্ষনাৎ হাউস বিল্ডিং লোনের মূলধন অংশের কিছুটা পরিশোধ করে ফেলতে পারলাম। আম্মাকে  সেটা জানিয়ে বললাম বাবাকে একটা ধন্যবাদ জানাতে।

নাজমা খাতুন। ছবি-প্রথম আলো

শুক্রবার সকালে আমার এই এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করার কারণ নতুন যে বই লিখছি- নিজের উদ্যোগ শুরু করুন। সেখানের একটা চ্যাপ্টার হলো বীমা সংক্রান্ত – নিজের, প্রতিষ্ঠানের ও কর্মীদের। উদ্যোক্তা নিজের জন্য তো বটেই সন্তানদের জন্যও শিক্ষা বীমা করে রাখতে পারেন। ছোট প্রিমিয়াম একসময় অনেক কাজে লাগে।

আমার নিজের অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি আমাদের বেশিরভাগ উদ্যোক্তা জীবন বীমা বা সেরকম কিছু করতে চান না। কারণ সঞ্চয় হিসেবে এটি তেমন লোভনীয় নয়। কিন্তু আল্লাহ না করুক, আপনার যদি বড় কোন অসুখ হয, হাসপাতালে থাকতে হয় তাহলে আপনার নিজের সঞ্চয়ে টান পরতে পারে। এ সময় এরকম একটা পলিসি আপনাকে অনেক সহায়তা করতে পারে। আর ম্যাচিউরিটি শেষে আপনি একটা থোক টাকা পাবেন যা আপনার কাজে লাগতে পারে।

বেশিরভাগ তরুণ উদ্যোক্তারা এখন যে বয়সে আছে তাতে তাদের পলিসি প্রিমিয়াম খুব বেশি হওয়ার কথা না।

এবার কর্মীদের কথা ভাবুন। এই যে কোভিড চলছে, খোঁজ নিলে দেখবেন যে সব প্রতিষ্ঠান কর্মীদের জন্য গ্রুপ বীমাসহ নানাবিধ স্কিম করেছে তারা অনেক সহায়তা পেয়েছে। কাজে আপনার কর্মীদের জন্য শুরু থেকে এমন কিছু ভাবা উচিৎ। এই টাকাটাকে খরচ হিসেবে ধরা যাবে না। বিনিয়োগ হিসেবে ধরতে হবে। তাহলেই আপনার আর দুশ্চিন্তা হবে না।

যাদের ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট তারা প্রোডাক্টেরও বীমা করতে পারেন, পারেন নিজের মেশিনারির বীমা করতে। এগুলো আপনাকে হঠাৎ কোন বিপদ থেকে বাঁচাবে।

আমাদের দেশে উদ্যোক্তারা কখনও নিজের শারিরীক সুস্থতা নিয়ে সময় দেন না। কাজে আর্থিক নিরাপত্তাও সেভাবে ভাবেন না। কিন্তু এটা ভাবাটা জরুরী।

কারণ তাতে আখেরে উদ্যোক্তারই লাভ।

 

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version