হারিয়ে যাওয়া শিশুদের জন্য

Spread the love

আচ্ছা প্রতিবছর বাংলাদেশে কতো ছেলে-মেয়ে হারিয়ে যায়? কোন পরিসংখ্যান আমি কখনো পড়িনি, তাই বলতে পারবো না। ছোটবেলায় শিবরামের বাড়ি থেকে পালিয়ে পড়ে বাড়ি পালানোটাকে এক্সাইটিং মনে হতো। তবে, আসলে সেটা মোটেই তা নয়। আর যেটুকু জানতে পেরেছি তাতে বোঝা যাচ্ছে যারা হারিয়ে যায় তাদের মধ্যে ২-৩ শতাংশ কেবল বাড়ি থেকে পালায়। বাকীরা হয় ‘চুরি’ হয় অথবা বেশি হয় দুর্ভাগ্যের শিকার। যেমন ময়মনসিংহের কোন একটি বালক একদিন হাটতে হাটতে এসে পড়ে রেলস্টেশনে। সামনের ট্রেনে উঠে পড়ে। মাথায় চিন্তা এ ট্রেনে আবার সে ফিরবে বাড়িতে। ঢাকাতে নেমে এদিক সেদিক ঘুরে আবার ট্রেনে উঠে পড়ে। টেরও পায় না যে এই ট্রেনটা আসলে ময়মনসিংহ যাবে না, যাবে চট্টগ্রামে! চট্টগ্রামে নামার পরই ‘ হি লস্ট’।!

এরকম একটি ছেলে ঝালকাঠির নাহিদ। ‘ঝলক’ লঞ্চে করে এসে পড়ে ঢাকায়। বাঁধা পড়ে যায় অন্যদের মতো। সেতুর উদ্ধারকর্মীদের সহায়তায় ৫ বছর পর সে ফিরে আসে নিজের গ্রামে কিন্তু ততোদিনে বাবা-মা চলে গেছেন ওপারে। সে হয়ে যায় এতিম। কখনো প্রতিবন্ধী সন্তানকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে যায় তাদের অভিভাবকরা।

অভিভাবকহীন ও ভাগ্যহত ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কাজ করে একটি সামাজিক সংগঠন লিডো। ওদের একটি হোম আছে বছিলার ওয়াশপুরের গার্ডেন সিটিতে। ফরহাদ হোসেন নামের এক উদ্যমী তরুনের চেষ্টায় ২০০০ সাল থেকেই তারা কাজ করছে।
সেই হোমের পাশে কয়েক কাঠা জমিতে একটি ভিন্ন খেলার জগত তৈরি করে দিয়েছে পাড়া নামের স্থপতিদের একটি কমিউনিটি। কেবল বাঁশ আর রশি দিয়ে গড়ে তোলা এই সুন্দর স্থাপনাটির নির্মানের সঙ্গে আমার স্থপতি ভাগনিটিও জড়িত ছিল। গত শুক্রবার (৫ মে ২০১৭) তঐ স্থাপনাটির একটি উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান হয়েছে। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে, শিল্পী ঔ হোমের ছেলে-মেয়েরাই।

আমি আর আমার মেয়ে আমাদের ডটার ডে আউটে গিয়েছিলাম সেখানে। গিয়েছিলাম মূলত বাঁশের স্থাপনাটা দেখতে। ফিরে এসে ফেসবুক থেকে কিছু ছবি যোগাড় করে সেগুলো ফেসবুকে একটা এলবাম করে দিয়েছি।

তবে, আমি যখন সেখান থেকে ফিরে আসি তখন নিজের মধ্যে অনেক চার্জ অনুভব করেছি। সেটা লিডোর উদ্যোক্তা ও ভলান্টিয়ারদের জন্য। কুড়িয়ে পাওয়া শিশুদের তাদের বাবা-মার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টাটা সফল হোক। আমার অনেক দোকান। না থাকলে আমিও ওদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যেতাম। কাজটা কতোটা কঠিন সেটি ওদের সঙ্গে কথা বললে টের পাওয়া যায়। গত বছর তারা কতোজনকে বাবা-মার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে সে সংখ্যাটা আমি ভুলে গেছি। শ’পাঁচেকতো হবেই। যাদের ওরা ফিরিয়ে দিতে পারে না তারাই হোমে আশ্রয় পায়।

 

লিডোর এই উদ্যোগের সঙ্গে চাইলে আপনিও যুক্ত হতে পারেন। ওদের ওয়েবসাইটফেসবুক পেজে যোগাযোগ করা যাবে।

লিডোর উদ্যোগ সফল হোক।

 

জগতের সব শিশু মায়ের কোলে স্থান পাক।

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version