এই খাঁচা ভাঙতে হবে

Spread the love

বড় বোনের জন্য আমাকে কখনো ফার্মেসীতে যেতে হয়েছে কী না সেটা আমার জানা নেই। যতদূর মনে পড়ে আমার স্ত্রীর জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনাটাই প্রথম। এখনও তাই আছে। প্রথম দিকে আমি ব্যাপারটা সেভাবে কখনো খেয়াল করি নাই। কিন্তু কিছুদিন পরে আমি লক্ষ করলাম ফার্মেসীর লোকটা একটি গোপন জিনিষ দিচ্ছে এমনভাবে কখনো পেপারে কখনো প্যাকেটে মুড়ে প্যাড ডেলিভারি দেয়। সেই বনানী হোক কিংবা এলিফেন্ট রোড – সব জায়গার দোকান। আজ শুনলাম বসুন্ধরাতে যে বড় শপিং মল সেখানে অন্য সব কিছু জালিব্যাগে দেয় কিন্তু প্যাডটা দেওয়া হয় দেখা যায় না এমন ব্যাগে মুড়ে!!!

এলিফেন্ট রোডে আমি যে এপার্টমেন্টে থাকি তার সামনে একটা ভয়াবহ চারতলা বাড়ি আছে। ওই বাসা থেকে প্রায়শ রাস্তায় কিংবা আমাদের এপার্টমেন্টের চিলতে উঠানে এসব ছুড়ে ফেলা হয়। এ হচ্ছে সে জিনিষ যা কিনা একটি মেয়ে তার জীবনে ১২০০০ থেকে ১৬০০০টি ব্যবহার করে!!!!

এটি তার স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত কিন্তু কেউ পাত্তা দেয় না।

মেয়েদের মাসিকতো সৃষ্টির শুরু থেকে। কাজে তখন থেকেই কোন না কোনভাবে এ সময়টাতে মেয়েরা কিছু ব্যবহার করেছে। তবে ঘাটাঘাটি করে পাচ্ছি গণিতবিদ হাইপেশিয়া তাঁর এক প্রেমিকের প্রতি তার ব্যবহৃত কাপড়ের বান্ডিল ছুড়ে মেরেছিলেন যাতে ঐ ব্যাটা আর সামনে না আসে। এখন মেযেরা যে প্যাড ব্যবহার করে সেটি চালু হয়েছে ১৮৮৮ সালে। মানে বেশিদিন হয়নি।

বছর কয়েক আগে বিশ্বব্যাংকের  এক সেশনে এক ছেলে একটা কমদামী প্যাডের প্রস্তাব নিয়ে আসে। তার বক্তব্য ছিল আমাদের গার্মেন্টসের বিশাল সংখ্যক মেয়ে এ অতি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। কারণ হিসাবে দেখালো দাম। সে সময় আমি একটু আগ্রহী হয় কারণ কেবল গার্মেন্টেসের প্রায় ৯০% মেয়ে স্বাস্থ্যকর প্যাড ব্যবহার করে না। এমনকী আমি যখন আরও খোঁজাখুজি করলাম তখন জানলাম ইউনিভার্সিটির মেয়েদেরও একটা অংশ এ ব্যাপারে অসচেতন। ১২০ টাকার প্যাড ব্যবহারে আপত্তি কিন্তু অবলীলায় ৩০০ টাকার বার্গার খাওয়া হয়ে যায়। তার মানে ঝামেলাটা টাকাতে নয়। এর পর আমি আর এটা নিয়ে ভাবি নাই।

আজ আবার এ কথাগুলো মনে পড়লো কারণ সাহিলা রেহনাজ। আজ বিজ্ঞানচিন্তার আয়োজনে জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে সাহিলা তাঁর প্রজেক্ট ও অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেছে। সাহিলা আমাদের দেশের মেয়ে যে কী না এখন পর্যন্ত গুগলের বিজ্ঞানমেলায় গ্লোবাল ফাইনালিস্ট হয়েছে। ওর প্রজেক্ট ছিল মাটিতে মিশে যায় (বায়োডিগ্রেডেবল) প্যাড বানানো। যার নাম দিয়েছে ও শ্রেষ্ঠ প্যাড।
এখানে জানতে পারলাম প্রচলিত প্যাডগুলোর দুইটি সমস্যা। এক নম্বর হলো এতে শোষক হিসাবে যে সিনথেটিক ব্যবহার করা হয় সেটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আর একটা প্যাড সম্পূর্ণ মাটিতে মিশে যেতে মাত্র ৫০০ বছর সময় লাগে।

সালিহা তাই তার প্যাডটা বানিয়েছে নারিকেলের চোবড়া-টোবড়া দিয়ে যা শতভাগ বায়োডিগ্রেডেবল এবং ৬ ঘন্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।

https://www.youtube.com/watch?v=HHvGwxKNBsw

সালিহা অনেক কিছু বলেছে। আর আমার খালি মনে হয়েছে বাংলাদেশের কোটি কোটি মেয়ে এই প্যাড ব্যবহার করেনা বলে স্বাস্থ্যঝুকিতে থাকে। আর এ নিয়ে কেউ কথাও বলে না।

অদ্ভুত না!

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version