বেচারা আইনস্টাইন
সে সময় পদার্থবিজ্ঞানের রাজা কে?
আইন্টাইন। কোন কোন স্তুতি বাক্য এমন লেবেলে চলে গিয়েছে যে মোটামুটি তারে দেবতা বানানো হয়ে গেছে। যদিও আইনস্টাইন কিন্তু মোটেই ক্লাসের ফার্স্ট বয় ছিলেন না। কিন্তু ততোদিনে আইনস্টাইন তো আর যুবক নাই। নতুন কিছু মেনে নেওয়া তার জন্য কঠিন। কেন জানি তার মনে হল কোয়ান্টাম বলবিদ্যাটা আসলে অসম্পূর্ণ। তিনি বলতে চাইলেন – কণার ভর-বেগকে যে আমরা ঠিক মতো একই সুক্ষ্ণতায় মাপতেপারি না এটা আমাদের দোষ, যন্ত্রের দোষ। সলভে সম্মেলনে তাই তিনি উঠে পড়ে লাগলেন কোয়ান্টাম তত্ত্বকে অসম্পূর্ণ প্রমাণ করতে। মনে আছে, প্রতিদিন সকালে একটা নতুন চ্যালেঞ্জ তিনি তরুন বিজ্ঞানীদের সামনে দিতেন। তবে, বেচারা কিন্তু বিকাল নাগাদ বোরের নেতৃত্বাধীন হাইজেনবার্গ, স্রডিঞ্জারদের কাছে হেরে যেতেন। ফলাফল হতো উনি পরের দিন আবার একটা কোন থট এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে হাজির হতেন। তবে, শেষ পর্যন্ত ওদের সঙ্গে যুক্তিতে আর হিসাবে না পেরে তিনি রণে ভঙ্গ দেন।
কিন্তু, মাথার মধ্যে ছিল যে, কোয়ান্টাম মেকানিক্সে ঝামেলা আছে। ১৯৩৫ সালে তিনি পলোনস্কি আর রোজেনবার্গকে নিয়ে একটা কুটাভাষ দাড় করালেন। ইপিআর প্যারাডক্স নামে এটা বিখ্যাত। ঘটনাটা খুবই সিম্পল।
একজোড়া পরস্পর বিজড়িত কোয়ান্টাম কণাকে পরস্পরের উল্টোদিকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যেমন ঢাকা থেকে একটা ছুটবে তেতুলিয়ার দিকে আর একটা টেকনাফের দিকে। এখন টেকনাফের দিকে ধাবমান কণাকে কুমিল্লাতে ভরবেগ মাপা হবে। সেটা মাপলেই তো পঞ্চগড়ের দিকে ধাবমানটার সব হিসাব পাওয়া যাবে কারণ তারা বিজড়িত। আর যদি কুমিল্লারটাকে কিছু করা হলে পঞ্চগড়েরটা টের পায় তাহলে তো ইনফরমেশন আলোর চেয়ে দ্রুতবেগে চলে গেল!!!
হে, হে হে। এটা তো সম্ভব না। কোন কিছু তো আলোর চেয়ে বেশি গতিতে যেতে পারে না। সেখানে তো আপেক্ষিকতার বিশেষতত্ত্ব খাঁড়া নিয়ে দাঁড়ায় আছে। এই প্যারাডক্সে তাই আইনস্টাইন আমদানী করলেন কিছু লুককায়িত চলকের, হিডেন ভ্যারিয়েবল। উনি বললেন এই চলকগুলো ঘটনা ঘটাবে কিন্তু তাতে আপেক্ষিততা তত্ত্বের ক্ষতি হবে না!
১৯৫৫ সালে বেচারা আইনস্টাইন যখন মারা যান তখনো তিনি বিশ্বাস করতেন যে, কোয়ান্টাম মেকানিক্সে ঝামেলা আছে। নীলস বোররা যাই বলুক।
ইপিআর প্যারাডক্স দীর্ঘদিন নতুনদের ঝামেলার মধ্যে রাখে। কারণ এই তথাকথিত হিডেন ভ্যারিয়েবলগুলো মাপার কোন ইকুয়েশন বানানো যাচ্ছিল না। ১৯৬৪ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন বেল এটার একটা সুরাহা করলেন। তিনি বের করলেন হিডেন চলকের একটা লিমিট। তার চেয়ে বেশি হলে ঘটনাটা ভুতড়ে হবে।
সেই থেকে বেলের অসমতাকে কেন্দ্র করে নিত্য নতুন পরীক্ষা করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। অবশেষে রোনাল্ড হেনসন ও তাঁর দল এটার একটা হেস্তনেস্ত করছে বলে এই সপ্তাহের নেচার পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। তাদের পরীক্ষায় এক মাইল দূরের দুইটা ইলেকট্রন থেকে ফোটন কণা ছেড়ে দেওয়া হয় তৃতীয় একটা ল্যাব বরাবর। ফোটন দুইটা বিজড়িত এবং ইলেকট্রন দুইটাও তাই। তারপর ১৮ দিন ধরে তারা ইলেকট্রন দুইটাকে নিবিড় দেখার মধ্যে রেখেছেন। দুর্ভাগ্যবশত ওনারা এমন কিছু পাননি যাতে বলা যায় লুক্কায়িত চলকরা আছে!
অনেকের ধারণা এর মাধ্যমে অবসান হবে হিডেন ভ্যারিয়েবলের। এবং আরো একবার ওপারে বসে আইনস্টাইন বেচারার মত চেয়ে দেয়ে দেখছেন। তবে, হেনসনের ধারণা এই পরীক্ষা থেকে সূচিত হবে কোয়ান্টাম ক্রিপটোগ্রাফির নতুন মাত্রা।রাসেলের সেই বিখ্যাত উক্তি- বিজ্ঞান একটা প্রশ্নের জবাব দিয়ে নতুন ১০টি প্রশ্নের সূচনা করে।
এর কী প্রয়োগ হবে তা নিয়ে আমার কোন আগ্রহ নেই। লোকজন সেটা দেখুকগা। আমি বরং মজা পাচ্ছি আইনস্টাইনের হতবিহবল চেহারা দেখে। আজ ভোররাতে ঘুম না হওয়ায় ওপারে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে এসেছি।
মনের দু:খে একটা রুবিক কিউব মেলানোর চেষ্টা করছেন। বেচারা!!!
One Reply to “বেচারা আইনস্টাইন”