গ্রহণ লেগেছে আজ …
গ্রহণ নিয়ে নতুন করে চিন্তা হিসাবে সূচনা হয় যখন আমরা মালিবাগে বিজ্ঞান চেতনা কেন্দ্র গঠন করি। সেখানে আমরা নানান বিষয় নিয়ে আলাপ করতাম (পড়ো পড়ো পড়োতে বিস্তারিত লিখেছি) যার একটি বড় অংশ ছিল আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব tপ্রকাশ হয়েছিল ১৯১৬ সালে। সে তত্ত্বে বলা হয়েছে সূর্যর মতো ভারী বস্তু স্থানকে বাকিয়ে ফেঁলে। কাজে সেখানে দিযে আসার সময় আলোও বেঁকে যায়। এটি কেবল বোঝা সম্ভব সূর্যগ্রহণের সময়। ১৯১৯ সালে সেরকম একটা সুযোগ আসলো। তবে, দেখা যাবে ব্রাজিলের আমাজনের জঙ্গল থেকে। স্যার আর্থার এডিংটন (ওনাকে বলা হতো জেনারেল থিউরি অব রিলেটিভিটির পণ্ডিত। একবার এক সাংবাদিক তাঁকে জিঙ্গাষা করেছিল – আচ্ছা, মাত্র তিনজন লোক নাকি আপেক্ষিকতা তত্ত্ব বোঝে? ভুরু খুঁচকে এডিংটন বলেছিলেন – আর একজন কে? মানে উনি আর আইনস্টাইন ছাড়া আর েই বা এটা বোঝে! স্যার আর্থার এডিংটন পরে আমাদের চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটারামনকে বামন তারাতে নামিয়ে এনেছিলেন। তবে, সে অন্য গল্প) দলবল নিয়ে আমাজনে ছুটে যান। চাঁদ যখন সূর্যকে ঢেকে ফেললো তখনই এর পেছনের তারাগুলোর আলো এস পড়লো পর্যবেক্ষণকারীদের ফিল্মে। এক্সপোজার শেষে সকল কিছু শেষ করে এডিংটন যখন আইনস্টাইনের তত্ত্বের নিশ্চিত প্রমাণ পেলেন ততক্ষণে বার্লিনে আইনস্টাইন ঘুমিয়ে পড়েছেন। কিন্তু এক সাংবাদিক আইনস্টাইনকে ঘুম থেকে তুলে এই খবর দিল। সঙ্গে এও জানতে চাইলো – যদি তাঁর তত্ত্ব প্রমাণিত না হতো তাহলে আইনস্টাইন কী করতেন।
গম্ভীর আইনস্টাইন বলেলেন- আমি ঈশ্বরের জন্য করুণা বোধ করতাম!!!
আমরা ঠিক করলাম আমরা মানে বিজ্ঞান সংস্কৃতি পরিষদ, অনুসন্ধিৎসু চক্র ও বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশন, সিদ্ধান্ত হলো আমরা ঢাকা সদরঘাট থেকে একটি বড় জাহাজ নিয়ে সরাসরি সুন্দরবনে চলে যাব। সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করবো। তিন রকমের চাঁদা ধার্য করা হলো। চাকরিজীবীদের জন্য, ছাত্রদের জন্য এবং ভলান্টিয়ারদের জন্য। মোট এক লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা পকেটে নিয়ে আমি জাহাজে উঠলাম। সেদিন অনেক গ্যান্জাম ছিল। তিন দলের জনসভা ছিল। তারপরও আমরা কেমনে কেমনে উঠলাম ‘মাছরাঙ্গা’ জাহাজে। শুরুতেই কয়েকজন নেমে গেলেন। তবে, আমরা ঠিকই রওনা দিলাম। মোট ২১৭ জনের একাডেমিক নেতা আমাদের প্রিয় (এখন প্রয়াত) এ আর খান স্যার। স্যারের সঙ্গে এসেছেন (প্রয়াত) নওয়াজিস আলি খান, বুয়েটের দিপ্তী ম্যাডাম, মগের মুল্লুকের নিজাম স্যার প্রমূখ। আমাদের খাবারদাবার টিমের দায়িত্ব নিলেন অনন্য রায়হান ও সেলিম ভাই। সিজার আর বেনু ভাই হলেন ওভারওল। আর সবক’টা টিমকে চালানোর দায়িত্ব এ বান্দার। অনুসন্ধিৎসু চক্রের পাপ্পু আর এসোসিয়েশনের শাওন (এখন ডাক্তার) হলো আমার সমন্বয়কারী। আর আমাদের সঙ্গে আশ্চর্য মানুষ সাইফুল ভাই, এখন চ্যানেল আই-এর সম্পাদক। (সে এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা। পাঁচদিনের ঐ মিশন শেষে মহাকাশ বার্তা একটা বিশেষ সংখ্যা বের করেছিল। সেটাতে বিস্তারিত লিখেছি)।
৫ দিন একটি জাহাজে ২০০+ কয়েকরকমের লোক নিয়ে যাওয়ার ঐ ঘটনা আমাকে প্রথমবারের মতো একটি বড় কিছু করার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা দিয়েছে। যা আমাকে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক আয়োজন এর সঙ্গে যুক্ত থাকার সাহস যোগায়।
বিশ্ববাসীর গ্রহণের অভিজ্ঞতা চলতে থাকুক।
[এখানকার সব ছবি তুলেছেন আমাদের প্রিয় দীপেন ভট্টাচার্য। তিনি ছবিগুলো তুলেছেন আমেরিকা থেকে ২১ আগস্ট। প্রকাশের অনুমতি দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা]