দাম মাত্র ২৭ বিলিয়ন ডলার!!!

Spread the love

বুয়েটে ভিস্যাট বসানোর পর আমার ওপর দায়িত্ব পড়লো বুয়েটে ইন্টারনেট সার্ভিস চালু করার। এর আগে আমাদের শুধু ই-মেইল সেবা চালু ছিল, টেলিফোনের মাধ্যমে। একটা টেলিফোনে আমাদের ই-মেইল সার্ভার কানেক্টেড ছিল ব্র্যাক বিডিমেইলের সঙ্গে। আর একটা টার্মিনাল সার্ভার হয়ে ১৬টা পিএবিএক্স ফোন ছিল অথেনটিকেশন সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত। ফ্রি-রেডিয়াস নামে একটি সিস্টেম সেখানে চলতো। এই টোটাল সিস্টেমটা চালাতেন বিডিমেইলের লোকেরা।

তো, আমি ভাবলাম শুরু করি টার্মিনাল সার্ভার দিয়ে কারণ একটা এক্সট্রা সার্ভার ছিল। তো, লিনাক্সের ম্যানড্রেক ভার্সন ব্যবহার করে আমি কাজ শুরু করলাম। তারপর দেখলাম একটা সমস্যা। টার্মিনাল সার্ভার ঠিকই কানেক্ট হয় কিন্তু তারপরই ছেড়ে দেয়। সহজ সমাধানের উপায় হলো শহরের বিখ্যাত কোন সিসএডকে ফোন করা। আমিও তাই করলাম। তিনি সব শুনে বললেন-

“আপনার লিনাক্স কোনটি?”

-ম্যানড্রেক। ভার্সন অমুক (এখন মনে নেই)।

“এটাই সমস্যা। আপনি স্ল্যাকওয়ার (Slackwire) ব্যবহার করেন তাহলে প্রবলেম সলভ হয়ে যাবে। ঢাকা শহরে কেউ ম্যানড্রেক ব্যবহার করে না।”

এই প্রথম আমি স্ল্যাক শব্দ শুনলাম। আমি অবশ্য ঐ বড় ভাই-এর উপদেশ নেইনি। খুঁজে বের করেছিলাম কেন আমার টার্মিনাল সার্ভার কথা বলে না আমার ম্যানড্রেকের সঙ্গে। তারপর সেই সহজ সমাধানটা করেছি।

যাকগে, গত কয়েকদিন ধরে স্ল্যাক(Slack) এর কথা সামনে আসাতে পুরোনো এই স্ল্যাকওয়্যারের কথা মনে পড়লো। কয়েক বছর আগে থেকেই এই নতুন স্ল্যাকের কথা জানি। একটা কোলাবোরেটিভ এপ। মানে টিম বা অফিসের কাজ ম্যানেজ করার জন্য একটা মেসেজিং এপ। তবে নিজের ব্যবহার করার শখ হয়নি। কারণ আমার টিমগুলো ছোট। একটা সারাক্ষণ আমার চোখের সামনে থাকে। আর একটা কোন কথা শুনে না। কাজে কী লাভ?

ইন্টারনেটের বিকাশের পর থেকে তাকে পূঁজি করে একই টিমের লোকজন  নানা জায়গা থেকে কাজ করতে শুরু করলো। তখন তাদের জন্য যোগাযোগের একটা বড় মাধ্যম হলো ই-মেইল। টু/সিসি/বিসিসির মারপ্যাচে লোকজন নিজের কাজের নির্দেশ পেল এবং আবার সেটা আপডেট করলো। স্ল্যাক হলো এই কাজে ই-মেইলের একটা সহজ রিপ্লেসমেন্ট। নির্দিষ্ট চ্যানেলে গিয়ে শুধু কাজের কথা লিখলেই টিমের সবাই কিন্তু বুঝতে পারছে। দেখা গেল এটি বেশ কাজের। কাজের বলেই প্রতিদিন ১ কোটি ২০ লাখ টিম এই সেবা ব্যবহার করে। তবে, এসব কারণে আমি নতুন করে স্ল্যাকের কথা শুনি নাই। শুনেছি কারণ গত সোমবার (বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর) সিআরএম সফটওয়্যারের অন্যতম পুরোধা সেলসফোর্স মাত্র ২৭.৭ বিলিয়ন ডলারে স্ল্যাককে কিনে নিয়েছে!!! এটি গত কয়েকবছরের মধ্যে অন্যতম বড় মার্জার বলা যায়। এর আগে ফেসবুক কিনেছে হোয়াটসএপকে ১৯.৬ বিলিয়ন ডলারে। মাইক্রোসফট কিনেছে লিংকডইনকে ২৬ বিলিয়ন ডলারে। লিংকডইনকে সেলসফোর্স কিনতে চেয়েছিল যদিও। তো, স্ল্যাকের দাম উঠলো ২৭.৭ বিলিয়ন ডলার।  কেন?

দেখা যাক স্ল্যাক কেমন করে এই উচ্চ মূল্যে উঠেছে।

যে কোন জায়গা থেকে এটি শুরু করা যায়। তবে গল্পের শুরু হয়তো ২০০৯ সালে। কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে। স্টুয়ার্ট বাটারফিল্ডের হাতে কিছু সময় এবং মাথার মধ্যে অনেকে খেলতে পারে এমন অনলাইন গেম বানানোর পোকা। ভাবছে নতুন কিছু করা যাক। স্টুয়ার্টকে লোকজন চেনে ফটো শেয়ারিং ওয়েবসাইট ফ্লিকারের একজন সহ-উদ্যোক্তা হিসেবে। স্ত্রী ক্যাটেরিনা ফেকের সঙ্গে এই উদ্যোগ। এই ফটো শেয়ারিং সাইটটা ২০০৫ সালেই ইয়াহু কিনে নিয়েছে। গুগলের ফটো সার্ভিস জনপ্রিয় হওয়ার আগে আমাদের অনেকে এই সার্ভিসের ভক্ত ছিল। তবে, ফ্লিকারের জন্ম কিন্তু একটি গেম বানানোর জন্য। গেম নেভারএন্ডিং নামে একটি গেম বানানোর জন্য ফ্লিকারের জন্ম হয়েছিল। কিন্তু গেমটা শেষ পর্যন্ত ক্লিক করেনি। কিন্তু সাইড কাজ হিসাবে ফটো শেয়ারিং-এর ওয়েবসাইট ফ্লিকারের জন্ম ও ২২ মিলিয়ন ডলারে ইয়াহুর কিনে নেওয়া। তারপর স্টুয়ার্ট ইয়াহুতে চাকরি করেন ২০০৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত। এর মধ্যে ২০০৭ সালে স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে।

১৯৭৩ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের ডামাডোলের সময় কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া অঙ্গরাজ্যের লন্ড গ্রামে স্টুয়ার্টের জন্ম। নরমা ও ডেভিড বাটারফিল্ডের ঘরে। নাম রাখা হয় জেরেমি বাটারফিল্ড। ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ না নেওয়ার জন্য ডেভিড আমেরিকা থেকে পালিয়ে সেখানে চলে যান। জন্মের পর স্টুয়ার্টের পাঁচ বছর কেটেছে কমিউনের সঙ্গে। থাকে একটা লগ-কেবিনে যেখানে বিদ্যুৎ বা পানি সাপ্লাই নাই। ৫ বছর পর ডেভিড পরিবার নিয়ে ভিক্টোরিয়া প্রদেশে চলে যায়। সেখানে স্টুয়ার্ট সেন্ট মিখায়েল ভার্সিটি স্কুলে পড়াশোনা শুরু করে। নিজে নিজেই কোডিং শেখে এবং নিজেই নিজের নাম রাখে স্টুয়ার্ট। স্কুলের ওয়েবসাইটের কাজ করে ও কিছু টেকা-টুকাও আয় করেছে সে সময়। এরপর ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে দর্শনে বিএ ডিগ্রী ও ১৯৯৮ সালে কেমব্রিজ থেকে মাস্টার্স করে।

২০০০ সালে স্টুয়ার্ট জেসন ক্লেসনের সঙ্গে মিলে গ্রেডফাইন্ডার নামে একটা স্টার্টআপ খাড়া করে সেটা বিক্রি করে। তারপর কিছুদিন ফ্রিল্যান্স ওয়েব ডিজাইনার হিসাবে কাজ করে। ২০০২ সালে আবার জেসন ক্লেসনের সঙ্গে মিলে শুরু করে লিডকর্প নামের প্রতিস্ঠান। এবার সঙ্গে ছিল তাঁর স্ত্রী ক্যাটেরিনা ফেইক। গেম নেভারএন্ডিং নামের মাল্টিপ্লেয়ার অনলাইন গেম বানানোর চেষ্টা তারা করলেও সেটি সফল হয়নি। কিন্ত তাদের ফটো শেয়ারের ওয়েবসাইটটি ইয়াহু কিনে নেয় যা আমরা আগেই জেনেছি।

ইয়াহুর কাজ ছেড়ে ২০০৯ সালে স্টুয়ার্টের হাতে ভাল সময় এবং টাকাকড়িও মন্দ নেই। কাজে দ্রুত নিজের টিম বানালেন স্টুয়ার্ট। সঙ্গে নিলেন ফ্লিকারের চিফ সফটওয়্যার আর্কিটেক্ট ক্যাল হেন্ডারসন, ফ্লিকারের আর একজন কর্মী এরিক কস্টেলো এবং ইয়াহু অধিগ্রহণের পর ফ্লিকারে কাজ করা ইয়াহুর কর্মী সার্গুয়েল মৌরাশভকে। তাদের পরিকল্পনা হলো – একটি দৃষ্টি নন্দন নন-কমব্যাট ম্যাসিভলি মাল্টিপ্লেয়ার অনলাইন গেম। কোম্পানির নাম টাইনি স্পেক (Tiny Speck)। জন্ম হলো গ্লিচের (Glitch)। ওয়েবসাইটে লেখা – ‘we are working on something huge and fun and we need help। এটি মধ্য ২০০৯ সালের কথা। সে সময় টেকক্রাঞ্চের এক রিপোর্টারের লেখা থেকে জানা যাচ্ছে, “টাইনি স্পেক কোম্পানি সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যাচ্ছে না। তারা কী করবে সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। শুধু তারা জানিয়ে দিচ্ছে তারা একটা কিছু তৈরি করবে”। মজার ব্যাপার হল এই রিপোর্টার কিন্তু টাইনি স্পেকে ঠিকই বিনিয়োগ করেছে। কারণ তার ধারণা –এটা একটা এনিমেটেড মুভির মতো গেম এবং ফাটাফাটি হবে।

২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের ২৭ তারিখে ব্রাউজার ভিত্তিক গেম গ্লিচ আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু এক্সেসিবিলিটির দোহাই দিয়ে নভেম্বরেই সেটা বেটা স্টেটে চলে যায়।ঐ সব সমস্যা কিন্তু সমাধান হলো না। পরের এক বছর অনেক খাটাখাটনি করেও গেমটা আর দাড়ালো না। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে গ্লিচ বন্ধ হয়ে গেল।

গ্লিচ নিয়ে কাজ করার সময় স্টুয়ার্ট ও দলবল একটা সহজ বুদ্ধি করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের। সেটা হলো একটা কমিউনিকেশন চ্যানেল। নিজেরাই বানিয়ে নিয়েছে। ২০১২ এর শেষের দিকে যখন তাঁরা টের পেল গ্লিচের কপাল মন্দ তখন তারা এই ইন্টারনাল কমিউনিকেশন চ্যানেলটার প্রতি নজর দিল। কয়েক মাসের মধ্যে অর্থাৎ মার্চ ২০১৩ সালের মধ্যে মোটামুটি একটা অবস্থাতে গেল তাদের এই কমিউনিকেশন সেটআপ। নিজেদের টিমের অনেক কাজ তারা সেখানে করলেও কিন্তু সেটা একটা মাত্র টিম। রিলিজ করলে যখন অনেক টিম একসঙ্গে ব্যবহার করতে চাইবে তখন কী হবে?

এই চিন্তা থেকে “আমরা আমাদের বন্ধুদের হাতে পায়ে ধরলাম যেন কয়েকজন আমাদের স্ল্যাক ব্যবহার করে”। একটি পডকাস্টে স্টুয়ার্ট সেই সময়কার দুইটা প্রতিস্ঠানের কথা স্মরণ করেছেন। এর একটি হলো কোজি যা কিনা বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের নিয়ে কাজ করে এবং আর একটি মিউজিক সার্ভিস আরডিও(Rdio)। এছাড়া আরও কয়েকটি প্রতিস্ঠান সেটি ব্যবহার করতে শুরু করলো।

সঙ্গে সঙ্গে স্ল্যাগ দলবল আবিস্কার করলো টিমের সাইজ বড় হলেই স্ল্যাকের আচরণ পাল্টে যেতে হবে। স্টুয়ার্টের সরল স্বীকারোক্তি – আরডিও শুরুতে কেবল তাদের ফ্রন্টএন্ড ডেভেলপারদের জন্য স্ল্যাক ব্যবহার করলেও অচিরেই তাদের ১২০ জন কর্মী এতে যোগ দিল। আর আমরা টের পেলাম স্কেল-আপের ঝামেলা”।

এই ফীডব্যাকটা খুবই জরুরী ছিল। তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে স্ল্যাকের নানান ফিচার ঠিক করলো। বিশেষ করে কোন টিমের সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকলে সেটা কীভাবে সামাল দিবে সেটাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। স্টুয়ার্ট জানাচ্ছেন তখন তাদের একটাই কাজ – ফাডব্যাক বিশ্লেষন এবং সে অনুযায়ী স্ল্যাকের পরিমার্জন।

সামারের মধ্যে মোটামুটি বেশ অগ্রগতি হলো এবং ২০১৩ সালের আগস্টে (শুরুর সাত আট মাসের মধ্যে) তারা স্ল্যাকের প্রিভিউ রিলিজ করে দিল। স্টুয়ার্টের ভাষায় “এটা বেটা রিলিজ ছিল। কিন্তু আমরা সেটা বলি নাই। কারণ কেউ কেউ মনে করতে পারে এটাতে এখনও অনেক কাজ বাকী”।

এই রিলিজের জন্য তারা হায়ার করলো একটা পিআর ফার্ম। পিআর ফার্মটি এটা আর্টিকেল ও কয়েকটা নিউজ প্রকাশ করলো। যেখানে স্ল্যাকের সিইও স্টুয়ার্ট বাটারফিল্ড লোকজনকে অনুরোধ করেছেন তাদের এপ ব্যবহার করে দেখার জন্য। প্রথম দিনেই ৮০০০ লোক যোগ দিল। দুই সপ্তাহের মধ্যে সেটি ১৫০০০ এ উঠলো।

পিআর এই কাজটা করতে পারলো দুইটি কারণে। একটা হলো স্টুয়ার্টের আগের সাফল্য। এছাড়া প্রায় মাস খানেকধরে স্ল্যাক টিমের সঙ্গে পিআর টিমের যোগাযোগের ফলে তারা গল্পটা ঠিক মতো তুলে ধরতে পারলো। পত্র-পত্রিকায় তাদের নিউজ প্রকাশের পর বন্ধুবান্ধবদের সহায়তায় স্ল্যাক টিম একই নিউজ একাধিকবার স্যোসালমিডিয়াতে শেয়ার করলো। সেটি চোখে পড়লো যারা ব্যবহার করছে তাদের। তারাও সেই আলোচনায় যোগ দিল। বাটারফিল্ডের হিসাব হলো – পত্রিকায় নিউজ করতে পারাটা হলো ২০%। ৮০%ই হলো স্যোসাল মিডিয়াতে সেটা নিয়ে আলোচনা করা, সরব থাকা”।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার দেওয়ার সময় অনেকেই ভাবে “বেশি হয়ে যাচ্ছে। আগেই তো দিছি একবার”। কিন্তু এই চিন্তাটা মোটেই ঠিক নয় বলে মনে করেন স্টুয়ার্ট। তাঁর বক্তব্য সোজা। টপ অব দ্যা মাইন্ডে থাকতে হবে।

স্ল্যাকের কাছ থেকে আর একটা বড় বিষয় শেখার আছে। সেটা হলো রিলিজের পর প্রোডাক্টের প্রতি নজর দেওয়া। সেটা বেটা রিলিজ হোক বা ফাইনাল রিলিজ হোক। প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট অব্যাহত রাখতে হবে। এবং এই জন্য সকল ফীডব্যাকই জরুরী। স্ল্যাক প্রায় ৬ মাস তাদের প্রিভিউ রিলিজে স্টিক ছিল। এ সময় সকল ফীডব্যাকই তারা বিবেচনা করেছে।

এই সময় তারা বিভিন্ন টিমকে দলে দলে আমন্ত্রণ জানায় এবং লক্ষ করে তাদের যোগ দেওয়ার ফলে এপের অবস্থা। কিছু কারেকশন করে আবার রিলিজ দেওয়া এবং আবার পর্যবেক্ষণ – এটা চলতেই থাকে।

তবে, এই ছয় মাসে তাদের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হচ্ছে সফটওয়্যার সেলস। শুরু থেকে তারা ব্যক্তির কাছে এপ বিক্রির চেষ্টা করেনি। শুরু থেকে তারা টিমের কাছে বিক্রির চেষ্টা করেছে। ফাংশানাল টিম, বড় টিম এবং সবশেষে প্রতিস্ঠান। এখানে স্টুয়ার্ট একটা বিশেষ বুদ্ধি খাটালেন। কারণ এই ধরণের কোলাবোরেটিভ টিম সফটওয়্যার বাছাই-এ সবাই সব সময় একমত হয় না। যে কেউ একটা ভেটো দিতে পারে। স্টুয়ার্ট এই ভেটো এভয়েড করলেন এ ভাবে।“পাচজনের পছন্দ, পাঁচ জন্যই আসেন”। তারপর তারা জোর দিলেন কিছু কাগজপত্র বা প্রমোশনাল ম্যাটেরিয়াল বানানোতে। “স্ল্যাক কী, কেন ব্যবহার করতে হয়, কীভাবে ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়া যাবে এমন ম্যাটেরিয়ালগুলো আমরা বানিয়েছি ব্যক্তিকে টার্গেট করে। কিন্তু পাশাপাশি আমরা দলনেতাদের জন্যও প্রচুর ম্যাটেরিয়াল তৈরি করেছি। কারণ আমরা চেয়েছি দলনেতাদের যেন সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো প্রচুর রসদ থাকে হাতের নাগালে”।

গ্রুপ কমিউনিকেশনে স্ল্যাকের কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। কাজে বলা যায় নতুন এই ফিল্ডে টিকে থাকার জন্য অনেক খাটাখাটনির প্রয়োজন। ব্যবহারকারীদের জন্য প্রচুর নির্দেশিকা তৈরির ব্যাপারটা তাই তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রধান নির্বাহীর ভাষ্য হচ্ছে, “২০-৩০% ব্যবহারকারী আমরা পেয়েছি অন্যান্য গ্রুপ-মেসেজিং সিস্টেম যেমন হিপচ্যাট, ক্যাম্পফায়ার বা আইআরসি থেকে”। কিন্তু মেজরিটি আসলে বলেছে তারা “এরকম কিছু” ব্যবহার করে না। কিন্তু আরও ভালভাবে জানার চেষ্টা করাতে বোঝা গেল তাদের কেউ মেসেঞ্জার, কেউ এডহক ই-মেইল, কেউবা এসএমএস ব্যবহার করে। কেউ কেউ গুগল+ পেজ বা ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করে নেয়। স্ল্যাক এদেরকেও টার্গেট করে।

তবে, ব্যক্তির চেয়ে কোম্পানির কাছে কোনকিছু বেচা কিন্তু ওতো সোজা না। ছোট স্টার্টআপের বেলায় একটি টিম হয়তো একটি কোম্পানি কিন্তু বড়দের বেলায়? সেজন্য টিম বলতে স্ল্যাক কোম্পানিকে না বুঝিয়ে যে কোন টিমকে বোঝায়। মানে হলো কোন প্রতিস্ঠান হয়তো প্রাতিস্ঠানিকভাবে স্ল্যাক ব্যবহার করছে না কিন্তু এর কোন মিড-ম্যানেজার স্বাচ্ছন্দ্যে তার টিম নিয়ে স্ল্যাকে ঢুকে যেতে পারে। দেখা গেল এডোবের ৯টা গ্রুপ পেইড ভার্সন কিন বসে আছে।

স্টুয়ার্ট ও তার দলবল কাস্টোমারদের যতো জানায়, তার চেয়ে বেশি শোনার জন্য কান পেতে রাখে। একটা ডেডিকেটেড টিম রাখা হয় যারা কিনা সার্বক্ষণিকভাবে টুইটারে নজর রাখে। পাশ্চ্যাত্যে বেশিরভাগ ব্যবহারকারী তাদের রিভিউ প্রকাশ করে টুইটারে, এক লাইনে। যে কোন সমালোচনা স্ল্যাক টিম গ্রহণ করে। যখনই কোন অভিযোগ পাওয়া যেত সেটাই ঠিক করা হতো।

স্ল্যাকে সবাই চ্যানেল তৈরি করে। একটি ছোট টিমের জন্য এমন চ্যানেলের সংখ্যা বাড়লেও সেটা ম্যানেজযোগ্য কিন্তু যখনই কিনা টিমের সাইজ বড় হয়ে যাচ্ছে তখনই নতুন কারও পক্ষে বোঝাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে সে কোথায় যোগ দিবে। আরডিও টিমের এমন সমস্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্ল্যাকওয়ালারা এটির সমাধান বের করে ফেলে। সেটা হলো প্রত্যেক চ্যানেলের একটা ডেসক্রিপশন যোগ করে দেওয়া এবং কতোজন মেম্বার আছে সেটা জানায় দেওয়া। এভাবে ব্যবহারকারীদের ফিডব্যাকই স্লাককে শক্তিশালি করে গড়ে তোলে।

কতোটা শক্তিশালী?

সেটা আমরা ১ ডিসেম্বর ২০২০ এ বুঝতে পারলাম। ২৭.৭ বিলিয়ন ডলারে সেলসফোর্স কিনে নিলো স্ল্যাককে।

এরফলে সেলসফোর্স আর স্ল্যাকের লাভ কী হবে সেটা এই পোস্টের উপজীব্য নয়। আমি বুঝতকে চেয়েছি স্ল্যাকের মতো বিলিয়ন ডলার কোম্পানি থেকে কী কী শেখার আছে। সেটিই বর্ণণা করেছি এই পোস্টে।
যারা সামারি করতে পারছেন না তাদের জন্য হয়তো সামারিটা করে দেবো আর একটা পোস্টে অথবা প্রকাশিতব্য বই-এ।

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version