স্কুল অব রোবটিক্স
কিন্তু, আমার মনের মধ্যে ঘুরে রেদওয়ানের কয়েকটি কথা যা সে বেইজিং থেকে আমাকে জানিয়েছিল – “স্যার, চিনের প্রতিযোগীদের গড় বয়স মনে হয় ১০ বছর।… ওদের মধ্যে কয়েকটা ছেলে-মেয়ে আছে যাদেরকে কনটেস্টে ঢোকানোর আগে মা’রা ফিডার খাইয়ে দিচ্ছে!!! … কথা বলতে পারে না ঠিক মতো কিন্তু প্রোগ্রামিং করতে পারে, রোবট নাড়াতে পারে…!
আমি ভেবেছি এদের সঙএগ আমার নাতি-নাতনিরা কেমন করে লড়বে? লাইন ফলোয়ার রোবটের কথা আমি শুনেছি পাস করার পর আর আমার পরের জেনারেশন সেটা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে। অথচ ওরা স্কুলেই সব করে ফেলছে। ফলে, ওদের ভিত্তি হচ্ছে সবল এবং উপর দিকে ওরা যখন যাচ্ছে তখন আর সমস্যা হচ্ছে না।
আমি ভাবি, রোবট অলিম্পিয়াডতো ম্যাথ অলিম্পিয়াড নয়, শুধু খাতা কলমে হয়ে যাবে। অনেক ইনস্ট্রুমেন্ট লাগবে। ২০১৮তে আমরা মাত্র তিনটে আইটেমে অংশ নিতে পেরেছি। বেশিরভাগগুলোতে তাকিয়ে ছিলাম।
তো, এ থেকে উত্তরণের উপায় হলো রোাটিক্স চর্চ্চাটা বাড়ানো। আমাদের মোস্তফা মুন্না তার সিরেনা টেকনোলজিস দিয়ে এক রকম চেষ্টা করছে। কিন্তু ঢাকার বাইরে কেমনে যাবো?
একটা উপায় হলো স্কুল অব রোবটিক্স – ২/৩ দিনের ইনটেনসিভ ট্রেনিং। ম্যাসল্যাবকে বলা হলো প্ল্যান করতে। প্ল্যান করে দেখা গেল ম্যালা টাকা লাগে। ৪০ জনের একটা ক্যাম্প করতে, যদি ভ্যেনু ফ্রি পাওয়া যায় তাহলেও গড়ে ৭০০০ টাকা লেগে যাচ্ছে প্রথমটা এরেঞ্জ করতে। তো কী হবে এই স্কুলে?
ইলেক্ট্রনিক্স ও রোবটিক্স নিয়ে শূন্য জ্ঞান বিদ্যমান এমন শিক্ষার্থীদের জন্য এইস্কুলে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে রোবটিক্সের বেসিকের সঙ্গে। একটি আরডুইনো নিয়ে ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রোগ্রামিংয়ের হাতেখড়ি নিয়ে শিক্ষার্থীরা তিনদিন শেষে নিজেরা প্রত্যেকে তৈরি করবে একটি করে লাইন ফলোয়ার রোবট ও একটি করে অবসট্যাকল এভয়ডার রোবট। স্কুল শেষে শিক্ষার্থীদের রোবোটিক্স কিটটা দিয়ে দেওয়া হবে। যা দিয়ে তারা তাদের পরবর্তী ধাপের কাজ গুলো অনুশীলন করতে পারবে। স্কুলের পড়ুয়ারা ইলেকট্রনিক্সের বেসিক বিষয়গুলো যেমন রোধ, ভোল্টেজ, বিদ্যুৎ, ধারক ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা, আরডুইনোর সম্পর্কে বেসিক ধারণা ও হাতেকলমে ১০ টি প্রোজেক্ট, বিভিন্ন রোবটের ব্যাপারে প্রাথমিক ধারণা পাবে।
চতুর্থশিল্প বিপ্লবে রোবটের কর্মক্ষেত্র হবে বিশাল। এই বড় অংশের নির্মাতা হবে যারা রোবোটকে প্রোগ্রাম করে সঠিক কাজ করাতে সক্ষম হবে। সেই লক্ষ্যে শিশুদের রোবট তৈরীর জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি নতুনদের উৎসাহী করতে এই স্কুলের ধারণা আমরা কার্র্মযকর করার চেষ্টা করছি।
আমাদের প্রথম স্কুলটা হবে রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) এ আগামী ২৬ জুলাই থেকে। ৫ম-৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত হতে যাওয়া এই সামার স্কুলে অংশ নিচ্ছে ৪০ জন শিক্ষার্থী।
সামার স্কুলের রেজিস্ট্রেশন এখনও চলছে। নিবন্ধনের বিস্তারিত জানা যাবে এই লিংকে
এই সেশনটা আমরা করতে পারতাম না যদি না অনলাইনে ফুড অর্ডার ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হাংরিনাকি’ এগিয়ে না আসতো। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় আমরা এই আয়োজনটি করতে পারছি। আর বরাবরের মতো বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগী ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)।
এরই মধ্যে অনেকেই নিবন্ধন করে ফেলেছে।
এই পর্বটি সফল হলে আমরা সারাদেশে এই স্কুলটা চালাবো। তখন আবার আমি বের হবো স্পন্সরশীপের ঝুলি হাতে নিয়ে। কেউ না কেউ তো এগিয়ে আসবেনই।