শজনেডাঁটায় ভরে গেছে গাছটা
“কুমড়ো ফুলে ফুলে
নুয়ে পড়েছে লতাটা,
শজনে ডাঁটায়
ভরে গেছে গাছটা,
আর আমি
ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি।
খোকা, তুই কবে আসবি?
কবে ছুটি?”
কবিতায় যে রকম ডাঁটার কথা আছে, সেরকম আমি ভাবতাম সজনের মনে হয় কেবল ডাঁটায় হয়। এর ফুল এবং ফল দুটোয় সুস্বাদুভাবে খাওয়া যায় সেটা জানতাম না। কিন্তু আজ বাসায় ফেরার পর গৃহকত্রী দেখলাম তার স্টক থেকে একটি নকশার পাতা বের করলেন! বাহ নকশা বের হয় মঙ্গলবার। কাল আর একটা নকশার দিন এসে গেল। কিন্তু কেন এই সংরক্ষণ?
জানতে চাইলে পড়ে শোনালেন –“আমরা যাঁরা সাধারণ মানুষ, তাঁরা কবিদের মতো বিমূর্ত সৌন্দর্য আর ভালবাসায় ভুলি না। তাঁরা জানি, পেট থেকে ভালোবাসা উৎসারিত হয়ে অনন্তের দিকে ধাবিত হয়। আর সেজন্যই যখন জীবনানন্দ সাদা শজনে ফুলের সৌন্দর্যের গুনগান করেছেন, তখন গেরস্তের বাড়িতে রান্না হয়েছে শজনে ফুরের বড়া, মৌরলা মাছ দিয়ে শজনে ফুলের চচ্চড়ি, শর্ষেবাটা দিয়ে শজনে ফুল, শজনে ফুলের বাটি চচ্চড়ি কিংবা পোস্ত দিয়ে শজনে ফুল। প্রজন্মের পর প্রজন্মে নারীকুলে চর্চ্চা হওয়া এসব মূর্ত কবিতাও কম কাব্যিক নয়”।
আমি ঠিক জানি না, বাংলা ভাষাতে এত কাব্যিকভাবে আর কেউ কোনদিন রেসিপি লিখেছে কিনা। কিন্তু, এ রেসিপি পড়ে বোঝা যাচ্ছে সেই খাবারের স্বাদ কেমন হবে। আমার মতো পেটুকের বেলায় এর তো কোন বিকল্প নেই।
রেসিপি দিয়ে লেখকও আশ্বশ্ত করেছেন “ঠিকঠাক মতো রান্না করতে পারলে শজনে ফুলের এই কবিতা হবে অনবদ্য। কবি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সৌন্দর্যবোধ ও ভালবাসার মধ্যে পার্থক্য এখানেই, একজনের ভালোবাসা বিমূর্ত, আর একজনের ভালোবাসা বস্তুবাদের চূড়ান্ত নিদর্শন”।
“শজনেডাঁটায় ভরে গেছে, গাছটা’ শিরোনামে এই অসাধারণ, অনবদ্য রন্ধন সাহিত্যের অতুলনীয় নমুনাটি ছাপা হয়েছে ১০ মার্চের প্রথম আলোর সাপ্তাহিক ফিচার পাতা নকশা’য়। লিখেছেন রজত কান্তি রায়।
বাঙ্গালির ঐতিহ্যের শজনে নিয়ে এমন রসময় লেখা আগে কেউ লিখেছে? মনে হয় না।
কেবল রেসিপি নয়। জানা গেল সেই বিখ্যাত প্রবচন, “থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়’-এর পেছনের খবর। আমি নিশ্চিত আমার এই লেখা যারা পড়ছেন তাদের ৮০% আমার মতো জানেন না, এ হলো ‘কলার থোড়, কুমড়োর বড়ি আর খাড় শজনে’ যা কিনা বাঙ্গালি তরকারির অন্যতম প্রধান উপকরণ। বাঙ্গালির রান্না ঘরে ঘুরে ফিরে এসব রান্না হতো বলে প্রবাদটির উৎপত্তি।
এই লেখাতে একটি সজনে ফুল আর একটি সজনেডাঁটার রেসিপি দিয়েছেন লেখক। পড়েই আমরা গুষ্ঠিশুদ্ধ প্রেমে পড়েছি। গিন্নি নকশার ঐ পাতাটি সংরক্ষণ করে রেখেছেন। আমার ওপর আদেশ হয়েছে শজনের ফুল যোগাড় করা।
কাল থেকে সেই কাজই করবো।
ধন্যবাদ রজত কান্তি রায়, রন্ধন সাহিত্যে নতুন মাত্রা যোগ করার জন্য।