রুবাই-এর স্কুলের শেষদিন
গবেষণা শেষ হওয়ার আগেই ওকে বাসার কাছে, ধানমন্ডিতে একটা স্কুলে দেই। সেখানকার প্রিন্সিপাল একজন বিখ্যাত ব্যক্তি। তাঁর কাছে গিয়ে বললাম- আমার ছেলেকে কিন্তু কোন হোমওয়ার্ক দেওয়া যাবে না। তিনি ক্লাস টিচারকে ডেকে বলে দিলেন।
তো, আমি সকালে ওকে দিয়ে আসি। নিয়েও আসি। তবে, একদিন দেখলাম ও বাসায় কী জানি করে। কী?
-হোমওয়ার্ক!!!
দৌড়াতে দৌড়াতে গেলাম স্কুলে। সব শুনে প্রিন্সিপল ক্লাসটিচারকে ডাকলেন। জানা গেল, ওর ক্লাসের অন্য বাচ্চাদের অভিভাবকরা কমপ্লেইন করেছে “ছুটির দুইদিন বাচ্চা বাসায় কিছুই করে না। কাজেই হোমওয়ার্ক দিতে হবে”। তাই উনিও ক্লাসে হোমওয়ার্ক দিতে শুরু করেছেন। প্রিন্সিপল আমার কথা শুনে ওনাকে আবার বলে দিলেন, বাকীদের দিলেও ফারদীমকে হোমওয়ার্ক দেওয়া যাবে না।
ঐদিনই আমি ঠিক করে ফেলেছি যে, এই স্কুল হবে না। এর মধ্যে রুবাই-এর মা খোঁজ খবর করে স্কুল ঠিক করেছে, গুলশানে!!! (আমার বাসা এলিফেন্ট রোড)। স্কুলের নাম স্যার জন উইলসন স্কুল। নার্সারীতেই রুবাই স্কুল চেঞ্জ করে সেখানে চলে গেল। প্রতিদিন সকালে ওকে স্কুলে রেখে আমি গার্ডিয়ান ওয়েটিং রুমে বসে থাকতাম। রুবাই কিছুক্ষণ পরপর এসে আমাকে দেখে যেতো। ক’দিন পরে আমি ট্রান্সফার হলাম ওদের গানের ক্লাসে। তার কয়েকদিন পর থেকে ওকে রেখে চলে আসি!
সেই রুবাই। আজ আল্লাহর রহমতে তার স্কুল জীবন শেষ করলো। আজকে ওর গ্র্যাজুয়েশন সিরোমনি ছিল। ক’দিন পরেই ওর এ লেভেল পরীক্ষা।
আজ সকালে বাপ-বেটা সাড়ে ৯টার দিতে স্কুলে পৌছেছি। ওর ক্লাস টেনের সিরোমনি হয়েছিল গুলশান ক্লাবে। তখন ওদের স্কুলের সাতারকুল ক্যাম্পাসটার কাজ শেষ হয়নি। এবার নিজের স্কুলের হলরুমে!
একটা চমৎকার ভাষনও দিয়েছে। চার ভ্যালেডিকটোরিয়ান – ওদের ক্লাসের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে, ক্লাস টেনের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। ক্লাস টেনের যে ছেলেটি ভ্যালেডিকটোরিয়ান হয়েছে ওর নামও রুবাই-এর নামের সঙ্গে মিল। ফারদিন হোসাইন। ফারদিন আমাদের গণিত অলিম্পিয়াডের দুইবারের ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন।
অনুষ্ঠান শেষে যখন রুবাইকে বন্ধুদের সঙ্গে রেখে আমি ফিরে আসছিলাম তখন ভেবেছি অনেক কিছু লিখবো। কিন্তু এখন আর লিখতে চাই না। যদিও ওদের স্কুল নিয়ে লেখার আছে অনেক কিছু।
শুধু এটুকু আল্লাহর কাছে বলবো তিনি যেন রুবাইকে কামিয়াব করেন।