তুমি কেমন করে কথা কও, হে গুনী?

Spread the love

আমেরিকা হল একটা পরিসংখ্যানের দেশ। হুমায়ুন আহমেদের এই নিয়ে একটা মজার রচনা আছে। আমি নিজেও পরিসংখ্যানের ভক্ত, তবে তাদের মত নয়। প্রতিবছর ওরা একটা জরিপ করে – কোন জিনিষকে সবাই বেশি ভয় পায়। সাপ? সুঁই? হাইট নাকি তেলাপোকা। যারা সঞ্জীবের লোটা কম্বল পড়েছে তারা জানে তেলাপোকা কী জিনিষ। তেলাপোকা কিন্তু যা তা পোকা না। কারণ “অতিকায় হস্তী লোপ পাইয়াছে কিন্তু তেলাপোকা টিকিয়া আছে”। তবে, এসবকে হার মানিয়ে ২০১৪ সালে এই তালিকার শীর্ষে কী ছিল?

তেমন কিছু না। কথা বলা। স্পস্ট করে বললে সবার সঙ্গে কথা বলা, জনারন্যে বকবক। ইংরেজিতে আদর করে বলে – পাবলিক স্পিকিং!!!

কিন্তু পাবলিকের সামনে যদি কথা বলতেই না পারো, তাহলে তো জীবনের অর্ধেকটাই গোল্লা খেতে হয়। তা সেটা কোন কিছু বেঁচা হোক, কাউকে পটানো হোক কিংবা কোনো মবকে ঠেকানো হোক। সবই তো জনারন্যে বকবক।

প্রশ্ন হলো, ভাল পাবলিক স্পিকার হওয়ার কী কোন ধনন্বরী আছে?
আমি ঠিক জানি না। তবে, এই নিয়ে আমি কিছু পড়াশোনা করেছি এবং নিজের চারপাশের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে নিয়েছি। তাতে মনে হচ্ছে, চেস্টা করলেই যে কেও ভাল জন-বক্তা হতেই পারে।
কয়েকটা বিষয় খালি ঠিক করতে হবে-

ক. পড়, পড় এবং পড় – ভাল বক্তা হতে হলে ভার পাঠক হতে হবে। আমাদের দেশে যাদের কথা আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনি যেমন আবদুল্লাহ আবু সাইদ স্যার, জামিলুর রেজা স্যার, মতি ভাই কিংবা জাফর ইকবাল স্যার। তাদের মধ্যে একটা বড় মিল হল তারা সবাই প্রচুর পড়েন। জামিল স্যার যে কী পরিমাণ পড়তে পরেন তা বলা মুশ্কিল। পাল্লা দিয়ে পড়েন মতিভাইও। এটা কেবল এই দেশে নয়, সারাবিশ্বেই তারাই ভাল বলেন যারা বেশি পড়েন। কারণটা কী – কারণটা হলো যতো বেশি পড়া যায় ততো বেশি জানা যায়। আর যতো বিচিত্র কিসিমের পড়া যায় ততো নিজের মতো করে বলার দক্ষতা বাড়ে। কাজে ভাল বক্তা হতে হলে পড়তে হবে প্রচুর। এখন থেকেই শুরু করে দাও। আমার করা একটা তালিকা আছে এটা তোমার কাছে লাগতে পারে।
খ. ফোকাস, ফোকাস, ফোকাস- এটি হল গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের দ্বিতীয়টা। কথা বলার সময় ফোকাস থাকতে হবে। কেবল আড্ডার সময় ছাড়া। আড্ডার সময় যা কিছু বলা যায় তাতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু কোন একটা অনুষ্ঠানে বা কোন সেমিনারে বা কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের আলাপে বিষয় সংশ্লিষ্টতায় ফোকাস থাকতে হবে। নন-ফোকাস লোকজনকে মানুষ পছন্দ করে না।

গ. মিথস্ক্রিয়া – এটা এক ধরণের এনগেজমেন্ট। অনেকের ধারণা এনগেজমেন্ট মানে হলো মাঝখানে শ্রোতাদের সঙ্গে বাতচিৎ করা করা তাদের প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া। ব্যাপারটা কিন্তু ঠিক তা নয়। এনগেজমেন্ট মানে কেবল সরাসরি কথা বলা নয়। আমি নিজে একটা ছোট উদাহরণ দিতে পারি। আমি আমার কোন কোন বক্তৃতায় জীবন রঙ্গিন করার নানান তরিকার কথা বলে শেষ করি এভাবে “যদি এর কোনো কিছুতেই তুমি জীবনকে রঙ্গিন করতো না পারো, তাহলে আজকে বাসায় ফেরার সময় গাউছিয়া থেকে রং কিনে নিয়ে যাও। তারপর বাসায় বালতিতে পানির সঙ্গে মেলাও। তারপর” এরপর আমি আর কথা বলি না। বালতিটা মাথার ওপরে ধরে পানিটা নিজের গায়ে ফেলার একটা অভিনয় মতো করি। এবং কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকি। এই চুপ থাকাটার অর্থ হলো শ্রোতাকে সম্পূর্ণ দৃশ্যটা ভিজুয়্যালাইজ করার সুযোগ দেওয়া। কাজে এনগেজমেন্টের জন্য খালি শ্রোতার কাছে জানতে চাওয়াটাই একমাত্র উপয়া নয়। নিজের স্টাইল খুঁজে পেতে হবে।

ঘ. ডেলিভারি দেওয়া – একজন ভাল জন-বক্তা কেবল মুখেই কথা বলেন না, তার হাত-পা, জেস্টার সবই কিন্তু কোনো না কোনো মেসেজ দেয়। সেটা কিন্তু খুব দরকারি। মনে রাখতে হবে, জন-বক্তৃতা কিন্তু সংবাদ পাঠের ব্যাপার নয়! কাজে শারীরিক ব্যাপারটাকে বাদ দেওয়া যাবে না। সবচেয়ে ভাল হচ্ছে শ্রোতাদের সঙ্গে আই কন্ট্যাক্ট করা। খুবই কার্যকরী।

ঙ. গল্প বলা : ছোটবেলা থেকে আমরা গল্প শুনতে ভালবাসি। কাজে জন-বক্তাদের গল্প বলিয়ে হতে হবে যদি জনপ্রিয় হতে হয়। সব ধরণের গল্প বলতে জানতে হবে। আর এটা সম্ভব হবে যদি ক সূত্রটা মেনে চল। গল্প বলার সময় যদি সম্ভব হয় তাহলে গল্পটা হয় নিজের সঙ্গে অথবা শ্রোতাদের সঙ্গে মিলিয়ে বলতে হবে। তো গল্প কাস্টোমাইজেশনের সময় খেয়াল রাখতে হবে।
=আপনি তো অনেক দেশ ঘুরেছেন তাইনা।
– জি, আমার দাদা দেশ ঘুরতে ভালবাসতেন। বাবাও। তাই আমিও দেশে দেশে ঘুরি।

=আপনার তো তাহলে বিভিন্ন দেশের খাবারের অভিজ্ঞতা আছে।

-হ্যা। আমার দাদার সেই অভিজ্ঞতা ছিল। আমার বাবাও খেতে ভালবাসতেন।

=ও আচ্ছা। আপনি কি ব্যাচেলর?
– নিশ্চয়ই। আমার দাদা ব্যাচেলর ছিলেন। আমার বাবাও ব্যাচেলর ছিলেন। আমিও তাই ব্যাচেলর।

!!! সাধু সাবধান।

চ. ধৈর্য : ভাল জন বক্তার একটি বিশেষ গুন হলো থামার ধৈর্য। তারা ঠিকই সময়ে সময়ে থামে যাতে শ্রোতারা পুরো বিষয়টা হৃদয়ে ধারণ করার সময় পায়। এটি আসলে গ টিপসের একটু এক্সটেনশন। যেমন তুমি তুলনা করলে ইউরোপের জনগোষ্টীর সঙ্গে বাংলাদেশের জনসংখ্যা। সংখ্যাগুলো বলার পর যদি তুমি না থাম তাহলে শ্রোতা বেচারা মোটেই ধাতস্ত হতে পারবে না।

এগুলোই মোটামুটি ভাল বুদ্ধি একজন ভাল জন-বক্তা হওয়ার।

“চেষ্টা করিলে বাঙ্গালীর অসাধ্য কিছু নাই।”

 

 

 

 

 

Leave a Reply Cancel reply