মোর নাম এই বলে …

Spread the love

প্রথম আলোর কুড়ি বছর হয়ে গেল।
বাংলাদেশে এক সময় বলা হতো- কুড়িতে বুড়ি। তবে, সে কথাটা প্রথম আলোর বেলাতে মোটেই যে মানায় না তা আজকের প্রথম আলো দেখলেই বোঝা যায়। আজ প্রথম আলো’র প্রথম পাতায় এক আশ্চর্য অন্য বাংলাদেশের ছবি।
তারুণ্যের শক্তি যে বাড়ছে সেটির খবর। পাকিস্তানকে হারিয়ে ফুটবলে জয়। আর সব ব্যবসায়ী যে কর ফাঁকি দিয়ে বড় হওয়ার ধান্ধায় থাকে না সেটার খবর। গত ৩ বছরের মতো এবারও প্রথম আলো মিডিয়া জগতের শীর্ষ করদাতা।
কাল রাতেই খবরটা জেনেছিলাম। তখন থেকে আমাদের সম্পাদক মতি ভাইর একটা কথা কানে অনুরণন করে যাচ্ছে – প্রথম আলো একটি সংবাদপত্র। এটি একটি ব্যবসাও বটে!!!
আমাদের দেশে কী এক আশ্চর্য কারণে ব্যবসাকে ভালো চোখে দেখা হয় না। আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন আমার দাদীর মত থাকা স্বত্ত্বেও আমার বাপ-চাচারা আমার ফুফুর একটা বিয়ের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিলেন পাত্র ব্যবসায়ী বলে!
২০১১ সাল থেকে “চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব” প্ল্যাটফর্ম গড়তে গিয়ে আরও ম্যালা কিছু টের পেয়েছি। এবং টের পেয়েছি ব্যবসা-বিদ্বেষী এই জাতির মন-মানসিকতায় বিচিত্র সমস্যা আছে। যেমন বাংলা ভাষাতেই কেবল কতগুলো শব্দ আছে যা আর কোন ভাষাতে নেই। যেমন – মুনাফাখোর, তদবির ‘বাণিজ্য’, গ্রেফতার ‘বাণিজ্য’।  মানে হলো মুনাফা করা খারাপ। পৃথিবীতে যতো খারাপ কাজ হবে তার সঙ্গে বাণিজ্য শব্দটাকে জুড়ে দিতে হবে!!!
এ কারণে সংবাদপত্রও এ দেশে একটু অন্যরকম। কর্মীদের ঠিকমতো বেতন না দেওয়া, তাদের অর্থ কষ্টে রাখা, আগেকার দিনে কোটার নিউজপ্রিন্ট বাজারে বিক্রি করে দেওয়া এবং খবরের ‘ভয়’ দেখিয়ে অন্য ‘বাণিজ্য’ আদায় করা – এ ছিল আমাদের সংবাদপত্র জগতের বড়ো অংশের চিত্র।
কিন্তু ১৯৯৮ সালের আজকের দিনে প্রথম আলোর প্রকাশ সেই ধারাটাকেই ভেঙ্গে দেওয়ার শুরু এবং আজ ২০ বছর পরে সেটি অনেক বেগবান। কারণ প্রথম আলো “একটি ব্যবসাও বটে’।
অন্য একটি কারণে প্রথম আলো বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে অনন্য। সেটি তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার। মিডিয়া ইআরপি এ দেশে প্রথম আমরাই ব্যবহার করতে শুরু করি। সর্বাধুনিকর ডেটাসেন্টারের কথা না হয় থাক।

আজকের মতিভাই-এর লেখা পড়লে এই পত্রিকার দর্শন এবং তার কাজের ধরণের একটা রেখা সবাই পেয়ে যাবেন। কােজ ঐ লাইনে না যাই।
এই প্রথম আলোর শুরুর আগে থেকেই আমি প্রথম আলোর সঙ্গে আছি। মতি ভাই যখন একতার সম্পাদক তখন, ৯০ সালের দিকে, তিনি একতাতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির লেখা ছাপাবেন বলে ঠিক করেন। তখন কে জানি (প্রকৌশলী নিমাই সরকার??) আমার থেকে লেখা নিয়ে যেতেন এবং সেগুলো একতাতে ছাপা হতো। পরে ভোরের কাগজে আনিসুল হক যখন মেলা আর সঞ্জীব চৌধুরী যখন সম্পাদকীয় পাতার পাশের তিনকলামে একটি নতুন আয়োজন শুরু করেন তখন থেকেই আমি মতি ভাই, সাজ্জাদ ভাই, আনিস ভাই, সুমি আপাদের সঙ্গে। আমাকে সেখানে নিয়ে যান আনিসুল হক।

তারপর থেকে এই দীর্ঘযাত্রা। প্রথম আলোর সঙ্গে আমার কুড়ি বছর। এই কুড়ি বছরে আমার প্রায় সব আজগুবি, আজাইরা এবং টাকা খরচের ধান্ধায় মতি ভাই আনন্দের সঙ্গে সায় দিয়েছেন। আর এসব শুরু হয় ১৯৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিনে। এলিফেন্ট রোডে একটি চারতলা ভবনের নিচতলায় একটি স্যাতস্যাতে বাড়িতে আমি থাকি। সেদিন রাত ১১টার দিকে সম্পাদককে ফোন করে বলেছিলাম – এসএসসি পরিক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে যারা মেধা তালিকার সামনের দিকে তাদের সংবর্ধনা দিতে চাই। মতি বললেন – দিয়ে দাও।
সেই যে সাহস পেয়ে গেলাম তারপর থেকে গণিত অলিমইয়াড হোক, তারুণ্যের জয়োৎসব হোক, বিজ্ঞান মেলা হোক কিংবা স্কুল বিতর্ক হোক – যা যা প্রস্তাব নিয়ে গেছি – পাস, পাস!
বুয়েটে চাকরি করার পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান উপদেষ্টার অফিসে চাকরি করার পাশাপাশি তাই আমার প্রথম আলোর সঙ্গে থাকাতে কখনো কোন ছেদ ঘটেনি। এর মধ্যে ২০১৩ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত আমি ছিলাম খন্ডকালিন, কাজ ছিল কম্পিউটার প্রজন্ম ও পরে বিজ্ঞান প্রজন্ম সম্পাদনা করা।
২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আমি এই হাউসেই পূর্ণকালিন। এটিই এখন আমার ‘সেকেন্ড হোমের চেয়ে একটু বেশি’। কোন কোনদিন রাতে বাসায় ফিরলে আমার স্ত্রী বলে – ঘুমুতে আসছো? মতি ভাইকে বলো াফিসে বিছানার ব্যবস্থা করতে, তাহল েআর কয় ঘন্টার জন্য বাসায় ফিরতে হবে না।

আমার বন্ধুদের অনেকেই অবাক হয়ে ভাবে আমার মতো একজন প্রকৌশল বিদ্যায় ডিগ্রী পাওয়া লোক সংবাদপত্রে কী করে। আমি হাসি।

কারণ আমি জানি, এই যে আজকের আমি, বিদুষীর ভাষায় “আমার বাবা গণিত অলিম্পিয়াডের স্যার’ – এসব প্রথম আলোরই কীর্তি।

আমার আমি হয়েছি আমি প্রথম আলোর কল্যানেই।

আর তাই কেউ যখন আমার কাছে জানতে চাই আমি কে?

তখন আমি গভীর আনন্দ নিয়ে বলি – আমি প্রথম আলোর লোক

শুভ জন্মদিন প্রথম আলো।

Leave a Reply Cancel reply