আউটসোর্সিং ও ভালোবাসার গল্প
তো, আমরা তাকে পটালাম। প্রথমে সে একটা ১৬ পৃষ্ঠার বুকলেট লিখে দিল। বিডিওএসএনের অফিস তখন কাটাবনে, জামিল সারওয়ার ট্রাস্টের অফিসে। সেখানেই আমরা প্রথমে একটা সেমিনার করলাম। তারপর একে একে সারাদেশ জুড়ে সেমিনার কর্মশালা করতে শুরু করলাম। সুবিন একদিন রাগ করে বলেই ফেললো – বিডিওএসএনের নাম হয়ে গেছে বাংলাদেশ আউট সোর্সিং নেটওয়ার্ক!!! তারপর সুফি ফারুক, আল-আমিন, শাওন, রাজিব, মোর্শেদ অনেকেই যুক্ত হয়ে গেল। আর তার কিছুদিন পরই এই সেক্টর খান একাডেমির পাল্লায় পড়ে গেল। আর এখনতো সেটা পড়েছে আউটসোর্সিং শেখানোর (লার্নিং) নাম করে ভাউচার বানানোর(আর্নিং) খপ্পরে।
বাবা-মা’র বক্তব্য খুব সোজা। বললেন, “বাবা, আমার ছেলেটিকে আপনি বাঁচান”।
আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম। শেখর (আসল নাম নয়)-কে আমি চিনি। ও তো কারও সাতে পাঁচে থাকে না। তাহলে?
ওনারা ব্যাখ্যা করলেন – “ছেলেকে এতো কষ্ট করে কম্পিউটারে পড়াইছি। পাস করে এসে সে এখন আমাদের সঙ্গে ময়মনসিংহ শহরেই থাকে। চাকরি বাকরি করে না। বেশিরভাগ সময় দিনের বেলাতে ঘুমায়। মাসের শুরুতে ওর মা’র কাছে ৫০ হাজার টাকা দেয়। আবার আমি টাকা চাইলেও দেয়। দুই হাতে টাকা খরচ করে। অথচ ও সারাদিন বাসাতেই থাকে। কোন অফিসে যায় না। তাহলে ও টাকা পায় কোথা থেকে? আমার বাবা ভয় হয়। আমি জেনেছি ও আপনার কথাই শুনে। আপনি যদি ওর একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেন”।
শেখরকে ঢাকায় আসতে বললাম। ও এসে আমার সঙ্গে দেখা করলো। বললাম – তোমার ফ্রিল্যান্সিং কেমন চলছে? মাসে কেমন থাকে?
শেখর বললো – লাখের ওপরে থাকে। কিন্তু মনে শান্তি নেই।
কেন- জানতে চাইলাম।
“বাবা-মা ফ্রিল্যান্সিং-এর ব্যাপারটা বুঝতে চান না। ওনাদের ধারণা আমি কোন ভাল কাজ করি না। ঘ্যান ঘ্যান করে যেন আমি একটা চাকরি করি। স্যার, আপনিই বলেন – কেউ কি একজন ফ্রেশ সিএসইকে এক লক্ষ টাকা দেবে?
শুনলাম শেখর তার বাবা-মা’কে বলেছে – চাকরি করলে ও বড়জোর ২০-২৫ হাজার টাকা পাবে। বাবা-মা তাতেই রাজি।
সেদিন ওর সঙ্গে অনেকক্ষণ আলাপ হলো। শেষমেষ শেখর ঠিক করলো ও চাকরি করবে এবং দ্রুত পড়াশোনার জন্য বিদেশ চলে যাবে। কয়েক মাস পড়ে একদিন রাস্তায় দেখা হল। জানলাম – শেখর একটা সফটওয়্যার ফার্মে ২০ হাজার টাকায় চাকরি করে এবং মনের দু:খে আর ফ্রিল্যান্সিং করে না।
একযুগ আগের এই ঘটনা মনে পড়ে গেল আমাদের রুয়েলের লেখা আউটসোর্সিং ও ভালবাসার গল্প পড়ে। একজন ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং করা তরুণের এই গল্প পড়ে আমার এক যুগ আগের শেখরের কথা মনে পড়ে গেল। বুঝলাম এখনো আমাদের সমাজের একটা বড়ো অংশ ফ্রিলান্সিং-এর ব্যাপারটাকে মেনে নেয়নি। যদিও এর মাধ্যমে কতো শত লোক “ঘরে বসে বড়ো লোক” হয়ে গেছেন”।
সাধারণত কোন বই পড়লে আমার স্পয়লার দেওয়ার খায়েশ হয়। কিন্তু এবার সেটা করছি না। আমি বরং সবাইকে বলবো ১০ মিনিটের স্বল্পদৈর্ঘ নাটকটা দেখতে।
https://www.youtube.com/watch?v=qbHSHybI1WE&fbclid=
তবে, নাটকে মূল বিষয়টা ফুটে উঠলেও বই-এর স্বাদ এখানে পাওয়া যাবে না। বইটা আলাদা করে কিনতে হবে এবং আমার মতো এক বসাতে পড়তে হবে।
যে সমস্ত ফ্রিল্যান্সারের প্রেমিকার বাবা-মা ব্যাপারটা বুঝতে চান না, তারা এই বই হবু শ্বশুর বাড়িতে পাঠাতে পারেন।