আমার যতো পুরানো বই

Spread the love

১৯৮৮ সাল থেকে আমি দৈনিক সংবাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাতায় লিখতে শুরু করি। প্রথমে টুকটাক অনুবাদ। আবদুল্লাহ আল মুতী স্যার তখন সেই পাতার পরামর্শক। তার কাছেই আমার হাতে খড়ি। মোটামুটি কযেক বছর পরে, হকিংকে নিয়ৈ লেখা একটি লেখার মার্জিনে তিনি লিখলেন “লেখাটি ভাল হয়েছে” নিচে স্বাক্ষর আ. ম. শ!!!

আনিসুল হক মাঝখানে কাগজ আর মোজাম্মেল বাবুর পূর্বাভাস পত্রিকায় আমার লেখা ছাপতেন। ভোরের কাগজ বের হলে আনিসুল হক সেখানে মেলার দায়িত্ব নেন। আমার ওপর ভার পড়ে এমন বিষয় নিয়ে লিখতে যা কী না ঠিক বিজ্ঞান নয়, বিজ্ঞানের ভেতরের খবর। বিজ্ঞান চেতনা নামে আমি একটা কলাম লেখা শুরু করলাম, নতুন একটা স্টাইলে। গল্পের ঢঙ্গে, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। মনে নাই, কতো দিন লিখেছি তবে লিখতে লিখতে এমন হল যে, যদি কোন শখের জ্যোতিষী শুনতো যে আমি আশে পাশে আছি তাহলে বেচারা হাত দেখতো না!!! সেই লেখাগুলো নিয়ে ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রামের উদ্যমী সংগঠক নাসিমুল গণির চেষ্টায় আমার প্রথম বই বের হয়। আমি তখন বুয়েটের কম্পিউটার সেন্টারে চাকরি করি। সেখানকার সুলতান আহমেদ বইটি কম্পোজ করলেন, সুদীপ্ত প্রিন্টার্স‌এর বাবু ভাই যত্ন নিয়ে বইটি ছাপলেন। ঢাকায় আগামী প্রকাশনীর স্টলে সেটি বিক্রি হতো। তবে, চট্টগ্রামের একুশে মেলায় নাসিম ভাইদের স্টলে সেটি মোটামুটি বিক্রি হযে গেল। আমি একদিন সকালে প্লেনে করে চট্টগ্রাম গেলাম! আজাদী আর পূর্বকোণে ছাপা হল আজ মেলায়… হাহাহা…

নাসিম ভাই সবাইরে (যারা আগে বই কিনেছে) ধরে আনলেন। আমি বসে বসে অটোগ্রাফ দিলাম।

এর মধ্যে অনেকদিন গেছে। আবার নাসিম ভাই ২০০৮ সালে বইটির দ্বিতীয় মুদ্রণ করলেন। কিন্তু এবারও বেশি কপি ঢাকায় আসলো না। এই বই এখন আর পাওয়া যায় না।

ধাঁধার অঙ্ক, অঙ্কের ধাঁধা

এটি একটি সংকলন পুস্তক। ভোরের কাগজে কাজ করার সময় কোন একদিন মুন্নী (মুন্নী সাহা) ইস্টিকুটুম পাতার জন্য লিখতে বলে। ইস্টিকুটুম ছোটদের পাতা। লিখতে হবে ছোটদের জন্য। আমি ভেবেছিলাম লিখতে হবে বিজ্ঞানের কিছু। কিন্তু, মুন্নীর ইচ্ছে ছিল ভিন্ন। একটি ধারাবাহিক রচনা, গণিত নির্ভর, মজার গল্পের ঢঙ্গে। তবে, মজার যেনো হয়। সবচেয়ে ভাল হয় যদি যুক্তি আর সংখ্যা থাকে! আর ছিল একটি দাবী : একটি চরিত্রও বানাতে হবে। প্রথম লেখাটিতে ছোট আপা বলে একটি চরিত্র বানানোর চেষ্টা হলেও পরে মনে হল মুখ্য চরিত্রটি ছোট একজন হলেও ভাল। সে হিসাবে রিমার আমদানী। রিমা আমার ছোট বোন। গল্পের আবহতে তাই থাকলো। গল্পের বোকা বনে যাওয়া পাত্রটি হলাম আমি, একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। সেই বয়ানে লেখা ‘গল্পে গল্পে ধাঁধা’। সমসাময়িক সব বিষয় সেখানে আসতো : যমুনা ব্রিজ, জনতার মঞ্চ কিংবা নতুন চালু হওয়া সুবর্ণ এক্সপ্রেস। গল্পের প্রয়োজনে সেখানে হাজির হতেন কাজি নজরুল ইসলাম, জামিলুর রেজা চোধুরী, নওয়াজিস আহমেদ প্রমূখ! গল্পগুলোকে বই আকারে প্রকাশের বুদ্ধি দেন মশিউল আলম। সে সময় আমি প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আমার বড় ছেলের জন্মের। তার প্রথম জন্মদিনে বাবার উপহার হিসাবে এর পান্ডুলিপি তৈরি করতে শুরু করি। তখন কি জানতাম আমার বড় ছেলে জাওয়াদ হাসান খুব বেশি দিন এই পৃথিবীতে থাকতে আসেনি!

গল্পে গল্পে ধাঁধা প্রকাশ করেন আলমগীর ভাই (অবসর)। তিনিই আমাকে জোর করেন এর পরের পর্ব লেখার জন্য। ততদিনে, আমার গল্পের মূল ক্যারেকটার পাল্টে গেছে। আমার ছেলে বুমবুম তখন এই গল্পের নায়ক। তার গল্পের কথক তার খালা। ভাই-বোনের পর্ব শেষ হয়ে তখন শুরু হয়েছে খালা‌-বোনপোর গল্প। এগুলোর অনেক প্রকাশ ইস্টিকুটুমে, সুমি আপার হাত ধরে। আমার আর রীমা কিংবা বুমবুম আর তার খালার গল্পে অনেক বিখ্যাত ধাঁধা আর ধাঁধাকারদের কথা এসেছে। স্যাম লয়েড থেকে আমাদের গ্রামের বুড়ো! বিখ্যাত ক্লাসিকগুলোর সঙ্গে আমাদের লোকজ ধাঁধা। হরির উপর হরি, হরি শোভা পায়, হরিকে দেখিয়া হরি হরিতে লুকায়! বুমবুমের ধাঁধাগুলো নিয়ে আমার পরের বই ধাঁধায় ধাঁধায় গল্প। মুন্নী সাহা নাই প্রথম আলোতে, সুমী আপা ছোটদের পাতা দেখেন না! কাজে আমাকে দিয়ে ছোটদের জন্য লিখিয়ে নেওয়ার কেহ নাই!

নিজে থেকে কয়েকটা লেখা হয়েছে গণিত ইশকুলে আর বিজ্ঞান প্রজন্মে। সেগুলো নিয়ে একটি বই করার জন্য তাম্রলিপির প্রকাশক স্নেহাস্পদ রনির যন্ত্রণা। কাজে হলো ‘অঙ্কের ধাঁধা, ধাঁধার অঙ্ক’। ততোদিনে আগোর দুটোর কপিও শেষ। কাজে তিন বই মিলে হলো আমার ধাঁধা সংকলন!

এই সংকলন বের করার পেছনে একটি তাগিদ হলো গণিত অলিম্পিয়াড। গণিতের যতো বই বের হয়েছে তার বেশির ভাগই বড়োদের জন্য। ছোটরা যারা ত্রি-ফোরে পড়ে তারা কি দিয়ে শুরু করবে? তাদের জন্য এই বই!

যারা গণিত ভালবাসে

এটি হাল আমলের বিভিন্ন লেখার সংকলন। গণিত ইশকুলেরই সব। একটা দুটো আছে বিজ্ঞান প্রজন্মের। এই বইটি যারা ষষ্ঠ শ্রেণীর বা উপরের ক্লাশের তাদের জন্য। এটিতে আমি কিছু গাণিতিক বিষয় ব্যাখ্যা করেছি যা তাদের গাণিতিক যুক্তি আর শৃঙ্খলা বুজতে সহায়তা করবে। সেভাবে লেখা হয়েছে।এখানে আমি কিছু অনেক পুরাোন টেকনিক আলাপ করেছি। যেমন ম্যাজিক স্কোযার কত সহজে বানানো যায়। কিংবা মৌলিক সংখ্যার ছক। এগুলো ছাড়াও নেপিয়ারের অস্থির মতো ব্যাপারটাও আছে। এখানে একটা লেখাতে আমি বাংলাভাষার সবচেয়ে বড় পেলিনড্রম শব্দটি লিখেছি। আমার এই বইতে আমি কয়েকটা সমস্যার সমাধান করেছি একাদিক পদ্ধতিতে। মূলত এটা বোঝানোর জন্য যে, গনিতের সমস্যা সমাধানের নানান রাস্তা আছে। যার যেমন ইচ্ছে। যুক্তি আর পদ্ধতি ঠিক হলো সব ঠিক। েই বই-এর একটা চ্যাপ্টার হলো আমার লিথুনিয়ান বন্ধুর দেওযা দুইটি সমস্য। ঐ দুইট সমসযা ঠিক মতো পড়লে বোঝা যাবে চিন্তার জগৎ কেমন করে স্বচ্ছ হযে ওঠে।  এই বইটি আমার স্ত্রীকে উৎসর্গ করা। পূর্বের জন্মে অনেক ভাল কাজ করলে মানুষ এমন স্ত্রী পায়!

এটর প্রকাশক তাম্রলিপি। অস্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ারা এটি পড়তে পারে।

আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড এবং আমাদের গণিত উৎসব

এটি গণিত অলিম্পিয়াডের ইতিহাস, আমাদের দেশে শুরু হওয়ার গল্প এবং আইএমওতে আমাদের অংশগ্রহণের দলিল। সময় প্রকাশণীর ফরিদ ভাই‌এর পীড়াপীড়িতে এটির প্রকাশ। এটিতে ফাউ হিসাবে আছে গণিত উৎসবের নিয়ম কানুন আর প্রথম কয়েকটি গণিত অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন! তবে, এই বইটির ঐতিহাসিক মূল্যটা বেশি। আমাদের গনিত অলিম্পিয়াড ধারাবাহিকভাবে বিবর্তিত হয়েছে এবং এখনকার ফর্মে এসেছে। পআগে প্রতিবছর আমি তিনটা আবশ্যিক রেখা লিখতাম। একটা হবে, আসো- একটা আমরা গেছিলাম আইএমওতে এবং একটা ফিরে। প্রথম দিককার অনেক বর্ণনা এখানে পড়ে অনেকেই বের করে ফেলতে পারবে হাততালি কেন গণিত অলিম্পিয়াডের একটি বিশেষ অনুসঙ্গ। এই বইতে আমাদের গণিত অলিম্পিয়াডের নিয়মাবলীটা সংযোজন করে রেখেছি যাতে পরবর্তী সময়ে কেও যদি জানতে চায় সে যেন জানতে পারে।

এই বইটার সর্বশেষ মুদ্রণের কিছু কপি পাইলেও পাওয়া যেতে পারে সময় প্রকাশনীর স্টলে।

সুডোকু মিলিয়ে আনন্দ ও যত সুডোকু তত মজা

গণিত অলিম্পিয়াড যাতে একঘেযে হযে না যায় সেজন্য আমি সারাক্ষণই নানান কিছু খুঁজে বেড়াতাম। তারপর যাই যাই দিনের সৌজনে সুডোকু সম্পর্কে জানতে পারি। তখন মনে হল আরে এটা তো সিম্পল ম্যাথ। সে সময় কযেকজনকে দেখলাম কেবর ট্রায়াল এন্ড এররের মাধ্যমে সুডোকু মেলায়। ভাবলাম তাহরে নিয়মগুলো বের করা যাক। তারপর বেশি কিচু বই নিয়ে আসলাম। সেগুলো পড়ে নিজে সমাধান করতে শিখলাম। তারপর ভাবলাম সবাইকে শিখিয়ে দেওয়া যাক। ২০০৯ সালে সুডোকু মিলিয়ে আনন্দ লিখে ফেললাম।বই যেন বড় না হয় সেজন্য নিয়মগুলো বলে ছেড়ে দেই। তাপর ১০০ সুডোকু সমাধান করে দেই।

কিন্তু একটা মানসিক অতৃপ্তি রয়েই যায়। কারণ, নিয়মগুলো বলে ছেড়ে দিয়েছিলাম। যত সুডোকু তত মজাতে সেগুলোর কার্যকারণ ব্যাখ্যা করেছি। করতে গিয়ে দেখলাম লেখার চাইতে মেলানো অনেক সহজ!! সেই চেষ্টা চালিয়েছি। যারা সুডোকু মিলাতে ভালবাসে তাদের মেলানোর আনন্দ যেন বাড়ে তার জন্য এই বই। দুইটা বইতে আমি মোটামুটি সুডোকু মেলানোর জন্য যত ধরণের টেকনিক আছে তার প্রায় সবগুলি বলে দিয়েছি। প্রথমটি বের হবার পর দেশের সেরা সুডোকুবিদ জামিল স্যারকে একটা বই দিয়েছিলাম। স্যার এখনো প্রতিদিন একটা সুডোকু মেলান। আর আমি ছেড়ে দিয়েছি। অলসদের এই জ্বালা।

তাম্রলিপির স্টলে একটা-দুইটা থাকলেও থাকতে পারে।

ওপেন সোর্স ও আমাদের ভবিষ্যৎ

আমরা যখন একটা কিছু শুরু করতে চাইতাম তখন আমরা জাফর স্যারের শরনাপন্ন হতাম। মুক্ত দর্শন নিয়ে আমাদের কাজগুলোর শুরু হয় মুক্ত সফটওয়যার দিয়ে। ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি স্যার শুভ নববর্ষ নামে একটি কলাম লিখেন প্রথম আলোতে, মুক্ত সফটওয়্যার নিয়ে। তারপরই আমরা মুক্ত দর্শনে ঢুকে পড়ি। মুক্ত দর্শন আর তার নানান দিক নিয়ে বেশ কিছু লেখা আমি লিখেছি। এখনও লিখছি। সেগুলোরই সংকলন এই গ্রন্থটি। বলা যেতে পারে এটি হলো বিডিওএসএন কী, কেন টাইপের একটা লেখার সংকলন। মুক্ত দর্শনের ব্যাখ্যার পাশাপাশি উইকিপিডিয়া সহ এর নানান প্রয়োগ নিয়েই নিবন্ধগুলো লেখা।

আমাদের মত দেশগুলোতে যেখানে উত্তরের দেশগুলো জ্ঞানের দাসত্ব তৈরি করতে চায় সেখানে মুক্ত দর্শন আসলেই বুদ্ধির মুক্তির হাতিয়ার। ভৌগলিক পরাধীনতার চেয়ে আজকাল অনেকবেশি কঠিন আকাশ আর সাইবার অধীনতা। সেই স্বাধীনতার লড়াই‌-এ ওপেন সোর্সই আমাদের সবচেয়ে বড় সহায়। আমাদের মুক্ত দর্শন আন্দোলনের নতুন কর্মীরা এটা পড়তে পারে।

এটি পাওয়া যাবে বিজ্ঞান একাডেমির স্টলে।

গড়ের মাঠে গড়াগড়ি

একদম যারা ছোট , মানে ক্লাস ত্রি থেকে ফাইভে পড়ে, তাদেরকে কীভাবে গণিতের নানান কনসেপ্ট সহজে বোঝানো যায়? এই ভাবনা থেকে গল্পের ছলে এই বইটা লেখা। আমি আর সুবিন মিলে একটা গণিতের কোর্স করিয়ে ছিলাম ঐ বয়সের ছেলে-মেয়েদর। ওদের পড়ানোর জন্য আমার একটা নোট তৈরি করতে হল। এটি হল সেই নোটের লিখিত রূপ। পড়ে এটার এক্সটেনশন হিসাবে শিক্ষক ডট কমে একটা প্রাথমিক গণিতের কোর্স করিয়েছি। এখানে প্রথম নীতি থেকে আমি ব্যাপারগুলো ধরতে চেয়েছি। যেমন লসাগুর কথা বলা যাক। লঘিষ্ট, সাধারণ এবং গুনিতক এগুলো আলাদা করে বুঝানোর একটা চেষ্টা। উদাহরণটা আমি দিলাম একটা ছক আকারে, একটা গুনিতক টেবিল বানিয়ে। তারপর বোঝালাম সাধারণ মানে কী? তারপর সেগুলোকে গোল করলাম। তারপর বললাম এর মধ্যে যেটি সবচেয়ে ছোট সেটিই ঐ তিনটি সংখ্যার লসাগু। এই লেখাতে সেটি দেখা যাবে।

এই হচ্ছে মোটামুটি আমার যত বই। এর বাইরে বাংলা একাডেমির বিজ্ঞান বিশ্বকোষ আর শিশু একাডেমির শিশু বিশ্বকোষেও আমি কাজ করেছি সংকলক হিসাবে।
েই বছর আমরা তিনটা বই-এর প্ল্যান ছিল। এখন বছর বলতে ২০১৬ সালকে যদি ধরি, তাহলে প্ল্যানটা অক্ষত আছে।

 

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version