নাইজেরিয়ান ড্রপ আউটদের ফ্লাক্স
এই চারজন তরুণ নাইজেরিয়ার ওবাফেমি আওলোও ইউনিভার্সিটি (OAU)-তে পড়তো কম্পিউটার সায়েন্সসহ বিভিন্ন প্রকৌশলে। ভার্সিটিতে তাদের খাতির হয়। ওদের চারজনের মধ্যে একটা মিল হলো সবাই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করতে ভালবাসে। চারজন হলো বেন লুয়ান, অসেজেলে অরুকপে, আকিনটান্ডে ইসরায়েল ও আইমোডি লাসাকি (বাপরে বাপ উচ্চারণ করতে গিয়ে আমার দাঁতই ভেঙ্গে গেল)। ২০১৯ সালে ওরা চারজন মিলে প্রতিস্ঠা করে ফিনটেক কোম্পানি ফ্লাক্স।
তারও আগে থেকে ওরা ক্লাশ বাদ দিয়ে প্রোগ্রামিং-এ সময় দিতে শুরু করে। একটা কাজ করে ওরা বেশ কিছু টাকা পায় যা কিনা ওদেরকে রেমিট করা হয় ইংলন্ড থেকে, পাউন্ড স্টার্লিং-এ। টাকাটা পেতে ওদের সপ্তাহের বেশি সময় লেগে যায় এবং নানা হ্যাসেল তাদের পোহাতে হয়।
কিন্তু “এটা ২০১৯ সাল এবং টাকা স্থানান্তর তো এতো কঠিন হওয়া উচিত না”। সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে জানায় লুয়ান। তাদের মনে হয়েছে সরকারি মুদ্রায় আন্ত-বর্ডার লেনদেনে জটিলতা থাকবেই কারণ এর সঙ্গে রেগুলেটরি ব্যাপার স্যাপার থাকে। তখন তাদের মাথাতে এই চিন্তাটা আসে যে যদি টাকাটা এমন কোন মুদ্রায় রূপান্তর করা যেত যা কিনা সহজে বর্ডার ক্রস করতে পারে তাহলে তো এই সমস্যা থাকতো না।
এই সময় তারা দেখলো ফ্লাট মুদ্রা এক দেশ থেকে অন্যদেশে স্থানান্তরের সময় নানান ব্যাংক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভিতর দিয়ে যায়। এতে খরচও বেড়ে যায়। আফ্রিকাতে ফান্ড ট্রান্সফারের খরচ এমনকী ৯% পর্যন্ত হতে পারে!
ফ্লাক্সের জন্য ঠিকমতো সময় দেওয়ার জন্য তারা চারজনই ভার্সিটর পড়ালেখা ছেড়ে দিল। চার ড্রপআউটের ফ্লাক্স জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং তারা পেয়েছে পল গ্রাহামের ওয়াই কম্বিনেটরে যুক্ত হওয়ার সুযোগ। তাদের ফান্ডিং-এর ঘটনাও শুরু হয়ে গেছে।
সিএনবিসেকে দেওয়া ঐ সাক্ষাতকারে লুয়ান, যে কিনা প্রধান নির্বাহী হিসাবে কাজ করছে, জানিয়েছে তারা “হার্ড ওয়ার্ক” করেছে। এবং সে কারণে এগিয়ে যেতে পারছে।
বেশ কিছুদিন ধরে আফ্রিকার স্টার্টআপদের সম্পর্কে পড়ালেখা করতে গিয়ে টের পেয়েছি ওরা মোটামুটি অন্যরকম, আউট অব দ্যা বক্স চিন্তা করতে পারে। রিস্ক নিতেও ভালবাসে। ওদের স্টার্টআপগুলো এরই মধ্যে গ্লোবাল বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে পেরেছে। গত দুই বছরে আফ্রিকার স্টার্টআপে বৈশ্বিক ভিসিদের বিনিযোগ যথাক্রমে ১.৪ বিলিয়ন (২০১৯) ও ১.৩ বিলিয়ন (২০২০) ডলার।
এই চিন্তন-কাঠামোর সঙ্গে ওদের দেশের সংস্কৃতি, শিক্ষা-ব্যবস্থার কোনো সম্পর্ক আছে কিনা এটা নিয়ে ভাবা যায়। নাইজেরিয়ার পড়ালেখা নিয়ে তাই একটা আলোচনা করছি আমার ফেসবুক প্রোফাইলে। সেটা চলুক।
ফ্লাক্সের এই যাত্রা পড়তে গিয়ে আমি কয়েকটা বিষয় ভেবেছি। টাকা পেতে এক সপ্তাহ লেগেছে তো কী হয়েছে – পাউন্ড স্টার্লিং-এর টাকা পেতে লুয়ানদের সপ্তাখানিক সময় লেগেছে। এটা বাংলাদেশে হলে হয়তো ১০দিনও হয়ে যেতে পারতো। বাংলাদেশের কারো বেলায় যখন এমনটা ঘটে তখন সে কী করে? তখন সে ফেসবুকে জানতে চায় – অমুক ব্যাংকে তো আমার ১০ দিন লেগেছে আর অনেক কাগজ দিতে হচ্ছে। কোন ব্যাংকে গেলে আমি কম সময়ে টাকাটা পাবো?
এটির একটা কারণ হলো সম্ভবত আমরা সমস্যার রুট ক’জে যেতে চাই না। তার চেয়ে সমস্যা কীভাবে বাইপাস করে নিজেকে সামলে নেওয়া যায় সেটা ভাবি। যেমন দেশে পেপাল নেই, ঠিক আছে জুম দিয়ে কাজ চালাই। রাস্তায় জ্যাম বেড়ে গেছে। এলিফেন্ট রোড থেকে শ্যামলির অফিসে যেতে সময় লেগে যাচ্ছে, তাহলে বাসা বদল করে শ্যামলি চলে যাই। এই স্যারের কোর্সে অনেক এসাইমেন্ট, হোমওয়ার্ক থাকে, স্যার অনেক প্যারা দেয়, কাজে অন্য স্যারের কোর্সে নিবন্ধন করি।
এর একটা কারণ আমি বের করেছি সেটা হলো ছোটবেলা থেকে আমরা শিখেছি “য পলায়তি, স জীবতি” – মানে হলো যে পালায় সেই বাঁচে। কাজে সমস্যার সমাধান না করে আমরা সমস্যাকে বাইপাস করতে থাকি।
এভাবে আমরা পালাতে পালাতে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র হয়ে বেঁচে থেকে ফেসবুকে বিপ্লব করতেই থাকি।