জমজমাট এনএইচএসপিসি

Spread the love

কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে গান গায় সন্ধি। শেষ গানে আমন্ত্রণ জানালো সামনে দর্শক আসনে বসা খুদে প্রোগ্রামারদের। প্রথমে সাহস করে ১/২জন করে আসতে শুরু করলো। ঠিক সেই মুহুর্তে মিলনায়তনে প্রবেশ করলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, এমপি। মন্ত্রী সহোদয়কে যখন তাঁর আসনে বসালাম ততক্ষনে সন্ধি মাইকে ডাকাডাকি শুরু করেছে, পলকের মধ্যে সেটি গণদাবীতে পরিণত হলো। সবার অনুরোধে মঞ্চে একদল খুদে প্রোগ্রামারদের মধ্যে হাজির হলেন মন্ত্রী। প্রথমে সবার সঙ্গে গলা মেলালেন। তারপর নিজেই গাইলেন – শ্রাবণের মেঘগুলো জড়ো হলো আকাশে, এখনি নামবে বুজি শ্রাবণী …

যারা সেখানে ছিলেন না তারা আগে রেকর্ড করা গানটি শুনে নিতে পারেন

https://www.youtube.com/watch?v=PArayCQa5M4

না শ্রাবণী আমাদের মিলনায়তনে নামেনি তবে তা সারাদিনের কঠিন পরিশ্রম, পরীক্ষা, প্রবলেম সলভ করা সহস্রাধিক খুদে প্রোগ্রামার ও কুইজারের মনকে জয় করে নিয়েছে। ঠিক এভাবে ৭ এপ্রিলিল কেআইবিতে জাতীয় হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা ২০১৭ এর সামাপনী পর্বটি এক অসাধারণ উচ্চতায় পৌঁছে।

তার আগে সকালে ১৯টি আঞ্চলিক ভ্যেনুর বিজয়ীরা পৌঁছে গেছে ঢাকার কেআইবিতে। কেউ বাবা-মায়ের সঙ্গে, কেউ বড় ভাই-এর হাত ধরে আবার কেউ কেউ বন্ধুরা মিলে। কুমিল্লা ইস্পাহানী পাবলিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা এসেছে তাদের নিজেদের স্কুল বাসে চড়ে। খুব ভোরে, ভোর ৫টায় প্রথম দেখা গেছে নাটোরের সিংড়া থেকে আসা ২২ জন প্রতিযোগীকে। সবাইকে নিয়ে বেলুন উড়িয়ে শুরু হয়ে যায় চূড়ান্ত পর্ব। বেলুন ওড়ালেন শিক্ষার্থীদের প্রিয় মন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

সেখান থেকে মন্ত্রীর সঙ্গে আমরা হাজির হই ড্যাফেডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সোবহানবাগ ক্যাম্পাসের সেএসই ভবনে। সেখানে চারটি ল্যাবে দেড় শতাধিক জুনিয়র ক্যাটাগরির খুদে প্রোগ্রামার ব্যস্ত তাদের প্রোগ্রাম সলভিং-এ। সেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইটি। সেখানে আরো ১৮০ জন সিনিয়র প্রতিযোগী। আমি ঠিক জানি না, সম্ভবত এটাই দেশের প্রথম মাল্টিসাইট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট (আমার ভুলও হতে পারে)। সে যাকগে, বিভিন্ন রুমে নানান এলাকা থেকে আগত ছেলে-মেয়েদর প্রোগ্রামিং করতে দেখে মনটা জুড়িয়ে গেল। এদের কেউ এসেছে আনোয়ার উপজেলা থেকে কেউ সিংড়া থেকে কেউ মহেশপুর থেকে। আইআইটির লাউঞ্জে বসে হলো তুমুল আড্ডা। তেব অহেতুক আড্ডা নয়। ঘুরে ফিরে বিষয়বস্তু কীভাবে আমাদের দেশে প্রোগ্রামিং কালচারকে এগিয়ে নেওয়া যায়, ছড়িয়ে দেওয়া যায়, সরকারি আইসিটি কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়কে কীভাবে আরো সম্পৃক্ত করা যায় এসবই। জানা গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আইসিটি সেন্টার হবে ১০ তলা। সেটির স্থান নির্বাচন হয়ে গেছে। সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরও কীভাবে কম্পিউটিং ফ্যাসিলিটি বাড়ানো যায় সেটি নিয়েও ভাবরা চিন্তা করা হল। সেখান থেকে মন্ত্রী মহোদয় চলে গেলেন অন্য প্রোগ্রামে।

আমি আর লাফিফা জামাল ছুটলাম কেআইবিতে। ততক্ষণে সেখানে কুইজ পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আমাদের কুইজারদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। কথা বলতে বলতেই অনেক কিছু জানা হলো। আমরা জানলাম বরিশালের এক মেয়েকে তার বাবা-মা ডাক্তার বানাতে চান কিন্তু সে হতে চায় প্রোগ্রামার। ও যখন বাবা-মার কথা বলছিল তখন তাকে আমি বললাম তোমার বাবা-মা যদি তোমার ভাল না চাইতেন তাহলে কী তোমাকে এখানে আনতেন। তবে, বাঁধ খুলে দিলে যেমন হয় তেমন করে অনেকেই এই কথাগুলো বলতে চাইলো। তাদের কথাগুলোরই একটা চমৎকার বর্ণনা পাওয়া যাবে জাফর ইকবাল স্যারের এই লেখাতে। পাশাপাশি অনেকে অনেক সুন্দর সুন্দর প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে একটা হলো ছুটির সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বড় ভাই-আপুরা যেন তাদের প্রোগ্রামিং শিখতে সাহায্য করে! কেই কেউ জানতে চেয়েছে কেমন করে ভাল প্রোগ্রামার হবে। তবে, ওদের প্রস্তাবের সবটা জুড়ে ছিল দেশের জন্য ভালবাসা।
এমন করতে করতে দুপুরের বিরতি।
খাওয়াদাওয়ার পর কথা ছিল মাহমুদুজ্জামান বাবু ভাই দুইটি গান গাইবেন। বাবু ভাই-এর দেরি হচ্ছে দেখে আমি জাফর ইকবাল স্যারকে মঞ্চে তুলে দিলাম। স্যার ওদের সঙ্গে আর ওদের বাবা মার সঙ্গে খোলামেলা কথা বললেন। জানালেন শিক্ষা কমিশনে দুইটি পাবলিক পরীক্ষার কথা বললেও কারা জানি চার চারটে পাবলিক পরীক্ষা চালু করে দিয়েছে। আগে কেউ গোল্ডেন ফাইভ পেলে স্যার তাকে উৎসাহ দিতেন। এখন স্যারের তার জন্য করুনা হয়। বেচারা!!! না জানি পাঠ্য বই, গাইড বই, পত্রিকার পাতার গাইড বই মুখস্ত করতে হয়েছে!!!
স্যারের কথা শেষ বাবু ভাই দুইটি ঘটনার কথা বললেন আর গাইলেন – ভোর হবে এবং বাংলার গান।
বাবু ভাই-এর গানের পর মঞ্চে আসলো সন্ধি। সন্ধি চমৎকার করে সন্ধি করলো প্রোগ্রামিং আর গানের। তার গানের কথায় বসে গেল খুদে প্রোগ্রামারদের আনন্দ যাত্রার খবর। আর তার শেষ গানে কী হলো সেটার কথাতো শুরুতে বলেছি।

 


সমাপনী পর্বে অনেকের সঙ্গে আমিও কথা বলেছি। মাননীয় মন্ত্রী বলেছেন সরকার আগামী দিনগুলোতে কী কী উদ্যোগ নিচ্ছে। জানালেন হাইটেক পার্কের কথা যেখানে আমাদের শত শত প্রোগ্রামাররা কাজের সুযোগ পাবে। জানালেন ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আইসিটি হবে আমাদের হাতিয়ার।

তারপর পুরস্কার বিতরণ।
জুনিয়রদের প্রোগ্রামিং-এর ফলাফল দেখা যাবে এখানে। আর সিনিয়ররা এখানে। কুইজের ফলাফলও প্রকাশিত হয়ে যাবে সহসা।
সব শেষ ছবি আর সেলফি আর জাল স্যারের অটোগ্রাফ।

চমৎকার একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে গেছে আমাদের সহস্রাধিক খুদে প্রোগ্রামার ও কুইজার আর আমাদের ব্যাটারিগুলো চার্জ করে দিয়ে গেছে।

 

তোমাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।

হ্যাপি কোডিং।

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version