আমার ২০১৮ স্পেশাল পর্ব
আমি নিজে সে অর্থে খুব যে টেডের ভক্ত তা বলা যায় না। কিন্তু যখন আমি কিছু বিষয় পড়াতে শুরু করলাম যেগুলোর সেরকম পাঠ্যপুস্তক নেই তখন আমি টেড বক্তৃতা শুনতে শুরু করলাম। এখন এতো বেশি টেড বক্তৃতা হয় যে, ফলো করা মুশ্কিল। তাই রেফারেন্স পেলে, দেখি। সেরকমই একদিন কোন একখানে নাইরোবির ১২ বছরের এক বালকের কথা পড়ি।
নাইরোবির জাতীয় উদ্যানে কোন বেড়া নেই। ফলে, হিংস্র এবং অহিংস্র প্রাণীরা সহজে গ্রামে চলে আসতেপারে। সেরকম একটা গ্রাম, নাইরোবির কাছেই, জঙ্গলের ধারে। প্রায় হাজার খানেক পরিবার বাস করে। জঙ্গল থেকে সেখানে প্রায়শ এসে পড়ে জেব্রা। আর জেব্রার পেছন পেছন?
ঠিক। সিংহ। সিংহ মামা!
সিংহ মানুষ খায় না, তবে গরু খেতে পছন্দ করে। সিংহ যখন গ্রামে আসে তখন সেটির আক্রমণের নিশানা হয় পোষা গরুগুলো। আর একবার গরুর মাংসের স্বাদ পেলে সিংহরা বারবার গ্রামে বেড়াতে আসতে চায়। গ্রামবাসীর আর উপায় কী। তখন তারা দল বেঁধে সিংহ মেরে ফেলে। তাতে অবশ্য পরিস্থতির তেমন উন্নতি হয় না।
সে গ্রামেরই এক কৃষক পরিবারের সস্তান রিচার্ড টুরেরে। ওদেরও খামারেও কিছু গরু আছে। ওর বাবা ওকে দায়িত্ব দেয় সিংহকে তাড়িয়ে দেওয়ার বুদ্ধি বের করতে, রাতের বেলায়। সহজ হলো যদি সিংহকে ভয় দেখিয়ে দেওয়া যায়। রিচার্ড একের পর এক উদ্যোগ নেয়।
তার প্রথম চেষ্টা – আগুন। আগুন জ্বালিয়ে রেখে সে ভয় দেখানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু কোন কাজ হলো না।
তারপর সে একটা কাকতাড়ুয়া বানালো। প্রথম দিন সিংহগুলো ফিরে গেল। কিন্তু পরদিন এসে দেখল “কাকতাড়ুয়া একই জায়গাতেই। কাজে, যা বোঝার বুঝে নিল”।
এ করতে করতে একদিন সে এক বিশেষ ঘটনা লক্ষ করলো। সেদিন রাতের বেলায় টর্চ হাতে সে হাটাহাটি করছিল খামারে। টর্চ নিয়ে হাটাহাটি করে সে বুঝতে পারলো চলমান আলোকে ভয় পায় সিংহ!!!
রিচার্ড বুজলো সে তার রাস্তা পেয়ে গেছে। সিংহরা চলমান আলোকে ভয় পায়!
কিন্তু প্রতিদিন রাতে টর্চ হাতে হাটাহাটি? অন্য কিছু কি করা যায় না? যদি এটিকে স্বয়ংক্রিয় করা যায়?
কিন্তু একটা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের অনেক দাম। ভাবলো সে নিজেই বানাবে।
গাড়ির ব্যাটারি, তার মায়ের রেডিও এবং মোটরসাইকেল থেকে একটা ইলেকট্রনিক ইউনিট – এ হলো তার যন্ত্রপাতি। আর এসব দিয়ে সে বানিয়ে ফেললো “সে আলো যা সিংহ ভয় পায়”। তার এই মেকানিজমের ফলে একগুচ্ছ টর্চের বাতি ক্রমান্বয়ে জ্বলে আর নিবে। এবং দূর থেকে দেখলে মনে হয় কেউ একজন হাতে টর্চ নিয়ে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যাচ্ছে। সিহংও তাই ভাবে!!!
সিংহগুলো ভয় পেয়ে যায় এবং আর কখনো তাদের খামারে আসেনি।
রিচার্ডের এ সাফল্য অন্যদেরকে তার প্রযুক্তি গ্রহণে আগ্রহী করে। ধীরে ধীরে তার এই পদ্ধতি ছড়িয়ে পরে সারাদেশে। এখন সহস্রাধিক খামারে রিচার্ডের এই পদ্ধতি সিংহ আর হিংস্রপ্রাণীকে খেদানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।
রিচার্ডকে আমন্ত্রণ জানানো হয় টেড-এ বক্তৃতা দেওয়ার জন্য (TEDx নয়, খোদ TED)। তাঁর এই বক্তৃতার জন্য সে সেগ্রেই ব্রিন আর বিল গেটসের সঙ্গে মঞ্চ শেয়ার করেছে।
তার ইংরেজি ওতো ভাল নয়। কিন্তু ওর যখন শেষ হয়, তখন সব লোক দাড়িয়ে তাকে সম্মান জানিয়েছে।
রিচার্ডের এই বক্তৃতা আমার ২০১৮ সালে শোনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা যা আমাকে আগামী দিনগুলোতে এগিয়ে যাবার রসদ যোগাবে।
আগ্রহীরা এই বক্তৃতা শুনতে পারে।
পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার জন্য ভাল বক্তা হতে হয় না, আইডিয়াটা গ্রেট হতে হয়।
6 Replies to “আমার ২০১৮ স্পেশাল পর্ব”
Leave a Reply Cancel reply
You must be logged in to post a comment.
Brilliant innovation though it was a very hard experience to test the implementation I think. Thanks, Munir Hasan sir for sharing the story with us.
“পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার জন্য ভাল বক্তা হতে হয় না, আইডিয়াটা গ্রেট হতে হয়।” – I just want to append “পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার জন্য ভাল বক্তা হতে হয় না, আইডিয়াটা গ্রেট হতে হয় এবং বাস্তবায়ন করে দেখাতেও হয়।”
বাস্তবায়িত না হলে কোন আইডিয়াকে আমি আইডিয়া বলি না। An idea is not an idea unless it is implemented and it is his/her idea who implemented it.
আমি মনে করি আজকের বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্যে যে ক’জন গুণী এখন ও অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাঁর মধ্যে অন্যতম একজন আপনি। বহু ফোরামে আমি আপনার এই মহতী উদ্যোগের প্রশস্তি বর্ণনা করি অন্যদের উৎসাহিত করার জন্যে। ধন্যবাদ মি: মুনীর হাসান। 2019 আপনার জীবনে বয়ে আনুক আরও কাজ করার সার্থকতা। সুস্থ থাকুন।অন্যের জীবনকে আলোকিত করার যে মহৎ প্রচেষ্ঠা তা সতত বজায় থাকুক। আপনার ও আপনার পরিবারের সকলের শান্তি কামনায়!
ধন্যবাদ
Thanks, for share.