দ্বিগুন, দ্বিগুন, খাটুনি আর কষ্ট!
১৯৭১ সাল আমাদের জন্য যেমন গৌরবের অহংকারের তেমনি তা এক বিরাট অর্জনের বছর কম্পিউটারওয়ালাদের কাছে। ১৯৭১ সালে পৃথিবীর মানচিত্রে একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়।
ঠিক সেই বছরেই, মাত্র কয়েকজন লোকের হাতে গড়া ইন্টেল নামের একটি কোম্পানি আমেরিকাতে ৪০০৪ নামের প্রথম মাইক্রোপ্রসসেরটি বাজারে ছাড়ে। মাইক্রোপ্রসেসর হলো মূলত ট্রানজিস্টর সমৃদ্ধ একটি সমন্বিত ইলেকট্রনিক সার্কিট। আর ট্রানজিস্টর হলো একটা সুইচ – অফফ বা অন, ০ বা ১। কাজে শূণ্য-একের নতুন এক জগতের উন্মোচন। আর তা থেকেই শুরু নতুন যুগের ইলেকট্রনিক্স ও কম্পিউটারের।
৪০০৮ মাইক্রোপ্রসেসরটির ১২ বর্গমিলিমিটারে দুই হাজার ৩০০টি ট্রানজিস্টর। দুইট ট্রানজিস্টরের মধ্যে দূরত্ব ১০ হাজার ন্যানোমিটার। এককগুলো খুবই ছোট হলেও মানুষের কাছে বোধগম্য। একটা ভালমানের মাইক্রোস্কোপ দিয়ে একটি বাচ্চা ছেলেও ২৩০০ ট্রানজিস্টর গুনতে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে এই যে ট্রানজিস্টরের আকার ছোট হতে থাকা, এটি কী অনাদি কাল ধরে চলবে!
মাইক্রোপ্রসেসর বানানোর আগেই ১৯৬৫ সালে গর্ডন মুর তাঁর একটি নিবন্ধে হিসাব নিকাশ করে বলেন, “চিপসের ক্ষমতা প্রতি বছরেই দ্বিগুন হবে।” তবে, পরে তিনি হিসাবটা আবার করে বলেন না প্রতি বছর নয়, প্রতি দুই বছরেই ইণেকট্রনিক চিপসের ক্ষমতা দ্বিগুন হবে। মানে একই জায়গায় দ্বিগুন সংখ্যক ট্রানজিস্টরকে রাখা যাবে! এটি মুরের আইন নামে পরিচিত।
মুরের আইনের ৫০ বছর পূর্তিতে এখন নতুন একটা চিন্তা দেখা দিয়েছে। কারণ ট্রানজিসস্টর শেষ পর্যন্ত মনে হয় তার মৌলিক সীমার কাছে চলে এসেছে। তত্ত্বীয়ভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে ট্রানজিস্টর বড়জোড় একটি পরমাণু দিয়ে বানানো যাবে। তার চেয়ে ছোটতো আর বানানো যাবে না! এখনই এটা এসে পড়েছে ১০০ পরমাণুর আকারে।
ফলে অনেকেই মনে করেন মুরের আইন অবসানের সময় হয়েছে।
তবে, সায়ীফের মতো বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন অন্যরকম ট্রানজিস্টরের, আতাউল করিম স্যার ভাবেন ফোটন দিয়েই কম্পিউটিং করা যাবে। তবে, সে অন্য গল্প, অন্য পথচলা।
সঠিক গাণিতিক এবং বৈজ্ঞানিক হিসাব নিকাশ কতোটা শক্তিশালী হতে পারে গর্ডন মুর সেটা দেখিয়েছেন। তাঁর আইন না থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাঁর হাত ধরে মানুষের সৃজনশীলতা এবং বাঁধা অতিক্রমের গল্প মানুষকে চিরন্তন প্রেরণা যুগিয়ে যাবে।
(উপাত্তগুলো টেকনোলজি কোয়াটার্লি থেকে নিয়েছি)