শেরিল স্যান্ডবার্গের বক্তৃতা ও আমাদের মিসিং ডটার

Spread the love

বিশ্বের বেশিরভাগ এবং প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অহমিকা বোধ খুবই কম! জ্ঞানী লোকেরা যে বিনয়ী হয় সেটা তার প্রমাণ। হার্বার্ড, এমআইটি, স্ট্যানফোর্ড যেমন তেমনি চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের সমাবর্তনে যোগ্য লোককে ডাকতে দ্বিধা করে না। যোগ্যতার মাপকাঠিতে শিক্ষার ব্যাপারটা থাকে সবার শেষে। ফলে, ইন্টারনটে ঘাটাঘাটি করলে যে সব চমৎকার সমাবর্তন বক্তৃতা পড়ার সুযোগ পাওয় যায় সেগুলোর বেশিরভাগই এমন সব বক্তার যারা কীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীও অনেকসময় অর্জন করেননি।

 আজ প্রথম আলোর স্বপ্ন নিয়ে পাতায় শেরিল স্যান্ডবার্গের একটা সমাবর্তন বক্তৃতা ছাপা হয়েছে। পড়ে খুব ভাল লেগেছে।
শেরিল খুব চমৎকার বলেন। তার টেড বক্তৃতাটা দেখে নিলে এই সমাবর্তন বক্তৃতাটা বোঝাটা সহজ হবে। সফল হওয়ার চারটা কথা বলেছেন শেরিল। লিয়েন-ইন নামে শেরিলে বিখ্যাত বইটার একটা রিভিও এখানে পড়া যাবে

প্রথমটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাহস। সাহস করে পথে নামতে হয়।  লেগে থাকতে হয়। ধৈর্যের ব্যাপারটা তাৎপর্যপূর্ণ। একটা প্রবাদ আছে ১০ হাজার ঘন্টা লেগে না থাকলে নাকি কোন একটা কাজে সফল হওয়া যায় না। আমরা খুব সহজে ক্লান্ত হযে পড়ি। অথচ আমাদের দেশের মত রবার্ট ব্রুসের গল্প মনে হয় কোথাও পড়ানোও হয় না। লেগে থাকার সফলতা শেরিলের নিজের জীবনেও রয়েছে।  এরপর রয়েছে অন্যের মতামতকে সম্মান দেওয়া। আমাদের মনে হয় অন্যের কথা মেনে নিলে মনে হয় আমি ছোট হয়ে যাবো তাই এটা বাদ। যা করবো সেটাই যেন গুরুত্বের সঙ্গে করি এ হলো তৃতীয়। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কেননা আমাদের সবার মধ্যে জ্যাক অব অল ট্রেড হওয়ার একটা ঝোঁক থাকে। কোন কিছু না পারলে ঐ বিষয়ে একটা ফেসবুক স্ট্যাটাসও আমরা দিতে চাই। অথচ মনে রাখি না সব বিষয়ে গুরুত্ব দিলে কোনটাই হয় না। কাজে “যা করবো তা সর্বোচ্চ ভাবে করবো” এটার মানে হল বেশি কিছু করা যাবে না। আর শেষ গুণ হলো সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।

আমি  যখন বুয়েটের কম্পিউটার সেন্টারে কাজ করতাম তখন মুজিবুর রহমান স্যারের কাজ থেকে এটা দেখেছি। সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার এক আশ্চর্য মন্ত্র তিনি জানতেন। আমার দুর্ভাগ্য যে মন্ত্রটা ঠিকমত শেখা হয়নি। এটুকু ছিল অবতরণিকা। শেরিলের লেখার শেষ অংশটা হল আমার এই লেখার মূল বক্তব্য।

শেরিল বলছেন -“চীনা প্রবাদে বলে, নারীরা অর্ধেক আকাশ আগলে রাখেন। নারীদের ভূমিকা আর কাজের অবদানের কথা সবাই স্বীকার করলেও দেশ পরিচালনায় নারী নেতৃত্ব কম দেখা যায়। হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া পৃথিবীর সব দেশেই পুরুষেরা নেতৃত্বে রয়েছেন। পৃথিবীর বড় বড় কোম্পানির মধ্যে ৬ শতাংশের কম প্রতিষ্ঠান নারীরা পরিচালনা করেন। সব ক্ষেত্রেই নেতৃত্বে নারীদের সংখ্যা কম। আমরা ধরে নিই, নেতা মানেই পুরুষ। নারীরা যেন শুধু অন্যদের কথা শোনার জন্যই কাজ করেন। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবী আরও উন্নত হবে সেদিন, যেদিন অর্ধেক পুরুষ গৃহস্থালির কাজ করবে আর অর্ধেক নারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করবে।
আমি পরিষ্কারভাবে সবাইকে জানাতে চাই, সাম্য শুধু নারীর জন্য নয়, নারী-পুরুষ সবার জন্য মঙ্গলজনক। আমি বিশ্বাস করি তোমাদের প্রজন্ম কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষে আরও বেশি সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।”

আজকে আমরা এশিয়ান প্যাসিফিক ম্যাথ অলিম্পিয়াডের ফলাফল পেয়েছি। আমাদের সাতটি ছেলে ব্রোঞ্জ এবং একজন একটি সম্মানজনক স্বীকৃতি পেয়েছে। ১০ জনের মধ্যে ৮ জনের এই সাফল্য বলছে আমাদের ছেলেরা গণিতে আগাচ্ছে। আমি ইচ্ছে করেই ছেলেরা লিখেছি কারণ গত কয়েকবছর ধরে আমাদের গণিত দলে কোন মেয়ে নাই। শুধু গণিত দল কেন – ফিজিক্স, ইনফরমেটিক্স এমনকী প্রোগ্রামিং-এও কোন মেয়েকে আমরা পাঠাতে পারছি না আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। কেন?

আমাদের মেযেরা তো সব পাবলিক পরীক্ষায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোথাও ছেলেদের তুরনায় খারাপ ফলাফল করে না। তাহলে?
একটা ছোট্ট জরিপ চালিয়েছি। ফলাফলগুলো দেখা যাক-

ক. এই ধরণের কাজগুলোতে সফল হতে হলে ক্লাস আওয়ারের শেষ, বাড়তি সময় ক্যাম্পাসে থাকা লাগে। এটি বেশিরভাগ পরিবার এলাও করতে চায় না,

খ. মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় – এগুলো কঠিন। তোমার ওখানে যাওয়ার দরকার নেই।

গ. ছেলেরা চায়ের আড্ডাতেই অনেক ইনফরমেশন পেয়ে যায় – যা কী না মেয়েরা কোনভাবে পায় না। একসেস না থাকায় তারা এইগুলোতে কীভাবে লড়তে হবে সে খোঁজটা পায় না।

তিনটে কারণ নিয়েই লড়া যায়। প্রথম বাবা-মাকে বোঝানোর কাজটা করা দরকার আর মেয়েদেরকে বলা দরকার শেরিলের মত মেয়েরা কিন্তু বিশ্বের ১০ জন ক্ষমতাশালী মেয়ের একজন হয়। এই দেশের প্রধানমন্ত্রীও কিন্ত তাদের দলের।

আর শেষেরটার জন্য কাজ করতে হবে ছেলেদেরও।

আমি যখন ফলাফল জাফর স্যারকে ফোনে জানাচ্ছিলাম তখন স্যার বলছিলেন আমরা কেন আলাদা করে মেয়েদের জন্য কিছু করছি না।

আমি গত কিছুদিন ধরে এই মিসিং ডটার নিয়ে ভাবছি। ভাবছি বরেই বেশ কিছু কাজের সঙ্গে যুক্ত হযেচি এবং নিজের কাজগুলোতে মিসিং ডটারদের কেমনে আনা যায় সেটি ভাবছি। এই করতে গিয়ে টের পেলাম আমার আশেপামে যারা আমাকে শক্তি যোগায়, দৌড়ঝাপ করে, কাগজ লিখে দেয় আশ্চর্যজনকভাবে সেখানেও মেয়েদের সংখ্যা কম। কয়েকদিন আগে মুভার্সদের ইফতারে গিয়ে ৩-৪জনকে দেখেছি মাত্র।

তাহলে মিসিং ডটারদের মেইনস্ট্রিমিং করার জন্য আমাদের কী করা দরকার?

 

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version