ময়াল চলতে থাক
“জি, জালাল ভাই। আজ কিন্তু আমার অফ ডে।“
“জানি তো। কিন্তু আমার মনে হল তোমাকে জানানো দরকার। কারণ সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে আজকেও একটা লাশ পাওয়া গেছে।”
“কী!” লাফ দিয়ে উঠলো জাহিরা।
“না, তোমার তো আজকে অফ ডে। তুমি বরং ঘুমাও।”
ফোনের ঐ পাশে জালাল ভাই-এর দুষ্টুমী মাখা চেহারাটা দেখতে পাচ্ছে জাহিরা।
“ঠিক কোন জায়গায়, জালাল ভাই।”
“আইইবির পাশ দিয়ে ঢুকলে সামান্য আগালেই পাবে। ছবি তোলার জন্য জিয়া রওনা হয়ে গেছে।”
শেষের কথাগুলো জাহিরার কানে ঠিকমতো পৌছায়নি ও রেডি হচ্ছে।
…
…
…
সাইকেল নিয়েই ঢুকে পড়লো জাহিরা। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের দেয়াল ঘেষেই জটলা। সেদিকে হাটতে শুরু করলো, সাইকেল থেকে নেমে। কাছে যেতে দেখা হয়ে গেল জিয়ার সঙ্গে। হাসিমাখা মুখ বলে দিচ্ছে কাজ শেষ। “আমি যাচ্ছি। আপনি যান” হাত নেড়ে জাহিরাকে অতিক্রম করে গেল জিয়া।
‘ও, আপনি এসে পড়েছেন।” পাশ থেকে চেনা কন্ঠ শুনে ফিরে তাকালো জাহিরা। এএসপি তারিক। পিআইবির এই অফিসারের সঙ্গে জাহিরার আগেও কয়েকবার দেখা হয়েছে। এই কেসগুলো মনে হয় উনিই দেখছেন। কোন জবাব না দিয়ে ঘটনাস্থলের দিকে গেল সে। মাটিতে শুইয়ে রাখা হয়েছে। জটাচুল। পান্জাবীর মতো একটা জামা গায়ে। তবে, কয়েক জায়গায় ছেড়া। পরনে লুঙ্গি। হাতে একটা লাঠিও আছে। ভিক্ষুক?
“কী মনে হচ্ছে?” জাহিরা কথাটা বললো তারিককে। তারিক ততোক্ষণে লাশের পাশে।
“ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে ভিক্ষুক। রাতে এই বেঞ্চে শুয়েছিল।” এই কথা বলে একটা পাকা বেঞ্জ দেখিয়ে দিল তারিক।
‘হত্যা?”
“এতো সহজে কী বলা যায়? তবে, অপমৃত্যু সন্দেহ নাই।” জানালো তারিক।
জাহিরার চোখ গেল লাশের পায়ের দিকে। পায়ের এক অংশে মনে হয় কোন কিছু পেচানো ছিল। ঠিক তার নিচেই জায়গাটা একটু নীল হয়ে আছে। নিচু হয়ে পায়ের কাছে বসে পড়লো সে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো।
“আমি দেখেছি। এরকম গলাতেও আছে। তবে, ঐ পেচানোতে মরেছে বলে মনে হচ্ছে না। সকালে কোন দড়ি-দড়াও আমরা পাইনি।” তারিকও বসে পড়েছে।
“বিষ?”
“হতে পারে। ময়না তদন্তের পর জানা যাবে।”
কথা বলতে বলতে এদিক ওদিকে তাকালো জাহিরা। বেঞ্জের পাশে মাটিতে একটা চোট গর্তমতো। ওটা কী দেখা যাক। এ ভেবে গর্তের দিকে গেল সে। কিছু না বুঝে তারিকও তার পিছু নিল। না গর্ত ঠিক না। সামান্য মাঠি ওঠা। তবে, কাছে গিয়ে মনে হল মাটির ভিতর দিয়ে কিছু একটা এসেছে সেখানে এবং আবার সেটা একই রাস্তা দিয়ে চলে গেছে।
গর্ত ধরে আগাতে শুরু করলো জাহিরা আর তারিক। জাহিরা কী করছে সেটা বোঝার চেষ্টা করছে তারিক। জাহিরা মাটির ওপর দাগ দেখে আগাতে শুরু করলো। দেখা গেল লাইনটা শেষ হয়েছে শিশু পার্কের দিকে একেবারে বেড়ার ওখানে। বেড়ার ঐ জায়গাটাতে কোন রেলিং নাই।
তারিকের দিকে তাকিয়ে জাহিরা বললো – খুনী, এখান দিযেই এসেছে!
“হাহাহা। মনে হচ্ছে ইদানিং অনেক মাসুদ রানা পড়া হচ্ছে।” হেসে দিল তারিক। “এই গরীব ভিক্ষুককে কে খুন করবে? কেনই বা করবে। সবচেয়ে বড় কথা ওর গায়ে তেমন কোন আঘাতের চিহ্নও নেই।”
‘জানি না। খুনী মানুষ না অন্য কিছু আমি বলতে পারবো না। তবে, আমার মন বলছে, এটা এখান দিয়ে এসে খুনটা করেছে।”
“আপনি বরং লাশটা ময়না তদন্তে পাঠিয়ে শিশু পার্কের এদিকে কোন সিসি ক্যামেরা আছে কী না খোঁজ নিন। আমি বরং যাই।”
‘আজকে অফিস নাই?’ জানতে চাইলো তারিক।
‘না, আজকে আমার অফ ডে।’
‘তাইলে চলেন যাই, সিলভানাতে আপনাকে সিঙ্গারা আর চা খাওয়াই।’
প্রথমে ভাবলো না করে দেই। পরক্ষণেই মনে হল – তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করলে হয়তো আরও কিছু জানা যাবে।
“চলেন, আমার সাইকেলটা নিয়ে আসি।”
…
…
…
১০ ঘন্টা পর। জাহিরার বাসা।
এই মাসে এই নিয়ে তিনবার। তিনবারের মধ্যে দুইবারই পার্কের ভিক্ষুক এই হত্যাকাণ্ডের শিকার। জাহিরা ভাবছে – কেও কি কোন গবেষণা করছে? পার্কের লোকেরা কি গিনিপিগ? আজ সারাদিন অনেক ধকল গেছে। লোকটার পরিচয় পাওয়া গেছে। একটা পাগল। মানে কোন শত্রু নাই। কেন তাহলে তাকে মারা হল?
ঝনঝণ করে বাসার ল্যান্ড ফোনটা বেজে উঠলো।
“জাহিরা বলছেন। আমি তারিক।” এই ব্যাটা এত রাতে আবার কেন ফোন করলো।
“আপনার ধারণা সত্য নয়। পাগলটা সাপের কামড়ে মারা গেছে।”
“কী বলেন। এই শীতকালে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে সাপ আসবে কেমন করে?” জাহিরার কন্ঠে বিষ্ময়।
“সেটা আমিও ভাবছি। কিন্তু ময়নাতদন্ত সেটাই বলে। কিন্তু…”
আবার কিন্তু কী?
“কিন্তু হলো ডাক্তাররা যে সাপের বিষের কথা বলছে, সেটা তো বাংলাদেশে পাওয়া যায় না।” তারিকের কন্ঠে দ্বিধা।
“কোন সাপ?”।
“ময়াল। আফ্রিকান পাইথন।”
দুজনই ফোন ধরে চুপ করে থাকলো।