ময়াল চলতে থাক …

Spread the love
বছরের এই সময়টাতে কক্সবাজারে অনেক লোক থাকে। তবে, আগস্ট মাসকে কখনো পর্যটনের মাস বলা যায় না। যখন তখন আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামে, মাঝে মধ্যে সমৃদ্র উতলা হয়ে যায়। কিন্তু তারপরও গেল কয়েক বছর ধরে আগস্টে এখানে লোকের সংখ্যা বাড়ছে।
 
দুপুর ১১টা। আকাশ একটু মেঘলা। কাল থেকে ভ্যাপসা গরমটাও নেই। অনেককে দেখা যাচ্ছে লাবনী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত সমুদ্রে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। জোয়ারের সময় তাই সালামও একটু ঢিল দিয়েছে। ইয়াসির গার্ড হিসাবে সালামের এটি দ্বিতীয় বছর। অনেক ঘটনা এর মধ্যে দেখে ফেলেছে। সেবার একজন…
 
এ্যা……………
চিৎকার কানে যেতেই সচকিত সালাম। দ্রুত উচু টুল থেকে নেমে পড়েই শব্দের উৎসের থেকে দৌড়। একটি মেয়ে। হাত পা ছুড়ছে আর চিৎকার করছে। আশেপাশ থেকে আরও কয়েকজন তার দিকে সাতার কেটে আগাতে গেল।
সালামের অভিজ্ঞহাত ততক্ষণে ভয়ার্ত মেয়েটার কাছে পৌছে গেছে। একহাত দিয়ে মেয়েটাকে লাইভবেল্টের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে দ্রুত তীরের দিকে রওনা দিল সালাম।
আর ঠিক তখনই ত্বিতীয় চিৎকারটা শুনতে পেল সালাম। এবার কলাতলীর দিক থেকে মনে হল। মেয়েটিকে তীরে নামিয়ে দিয়ে কিছু জিঙ্গাষা করার আগেই আবার দৌড় দিল সালাম। সেজন্য দেখতে পেল না মেয়েটা তার পায়ের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কারণ ওর পায়ের গোাড়ালির কাছের বেশ খানিকটা মাংস নেই এবং সেখান তেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
 
দ্বিতীয় লোকটির কাছে সালাম পৌছাানোর আগেই অন্য একজন সেখানে পৌছে গেল। আর ঠিক সে সময়ে পুরো সমুদ্রতটে যেন বোমা ফাটলো। গগনবিদারী চিৎকারের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রের মধ্যে সব লোক হঠাৎ করে পাড়ের দিকে ছুটতে শুরু করলো।
ওরে বাবারে বলে দুইজন পাশদিয়ে ছিটকে বের হয়ে গেল। মুহুর্তের মধ্যে পানি হয়ে গেল ফাঁকা।
লোকেদের দৃষ্টি অনুসরণ করে সালামের চোখে পড়লো একটা রূপালি রেখা। সালামের অভিজ্ঞ চোখ একঝাক মাছকে দেখতে পেল তীরের দিকে এগিয়ে আসতে। এমন দৃশ্য কখনো দেখেনি সে।
মাছের ঝাক তার কাছে এসে পৌঁছানোর একটু আগেই সালামের মন বললো – দৌড়াও।
পরিমরি করে পানি থেকে দূরে সরে যাওয়ার জন্য ঘুরে দৌড় দিল সে।
 
১ ঘন্টা পর। জেলা প্রশাসনের লোকজন এসেছে। যেখানে সালাম শেষবার দাড়িয়ে ছিল সেখানে অনেক রূপচান্দা মাছ পড়ে আছে। রূপচান্দাই তবে সাধারণ রূপচান্দা থেকে একটু বড়। মুখটা একটু কেমন। কক্সবাজার কলেজের জীববিজ্ঞানের শিক্ষক তোফাজ্জল সাহেব মাথা নেড়ে এএসপি সাহবেকে বলছেন – না, না, এটি সম্পূর্ণ নতুন ধরনের রূপচান্পা। এরকম রূপচান্দা আমি দেখি নাই। এ যে দেখেন মাথাটা অস্বাভাবিক বড়। দাত দেখে মনে হচ্ছে দাতাল কোন মাছ!
এএসপি মোকাম্মেল হকও দাত দেখছেন। যে কয়জনের সঙ্গে কথা হয়েছে সবাই বলেছে মাছ তাদের আক্রমন করেছে।
সালামের উদ্ধার করা মেয়েটিকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মেয়েটি বলেছে পানিতে থাকতে থাকতে সে হঠাৎ করে খেযাল করে কে যেন তার পায়ে কামড় দিচ্ছে। পানির মধ্যে চোখ দিয়ে সে দেখেছে দুইটা মাছ তার পা কামড়ে ধরেছে!!!
মেয়েটির কথা সত্য বলে মেনে নিচ্ছেন মোকাম্মেল হক। কারণ একই কথা বলেছে অন্তত ১০ জন। সবার বক্তব্য এই মাছের ঝাকটি তাদের কামড়াতে এসেছে। হাঙ্গর মাছ ছাড়া আর কোন মাছ মানুষকে কামড়াতে পারে এটাই তো জানে না মোকাম্মেল।
আপাতত সমুদ্রে কেও যেন নামতে না পারে তার নির্দেশ দিয়ে কয়েকটা মাছ ঢাকায় পাঠানোর কথা বলে নিজের গাড়ির দিকে আগালেন।
“এটা কি হলো মোকাম্মেল ভাই?”
তাকিয়ে দেখলেন কুদ্দুস রানা। কক্সবাজারে সাংবাদিক। নিশ্চয়ই সমুদ্র তটে মাছের আক্রমনের খবর বিম্ববাসী পেয়ে গেছে।
“বুজতে পারছি না। এরকম কোন ব্যাপার আমি কোনদিন শুনি নাই। দেখিও নাই। আপনি তো এখানকারই লোক। দেখেছেন কখনো?”
কুদ্দুস রানা মাথা নাড়লেন। এমন আজব ঘটনা সে দেখে নাই। কতক্ষণ আগে অনলাইনে সংবাদ পাঠিয়ে দিয়েছে। সেখান থেকে বলা হয়েছে ঐ সময় কেও মোবাইলে ভিডিও করছিল কি না সেটার খোঁজ নিতে। এএসপি সাহেবের সঙ্গে কথা বলে লাভ নেই এটা বুজে রানা এগিয়ে গেলেন একটা জটলার দিকে।
 
অনেক সময় রানার মাথা একটু আওলে যায়। না হলে রানা মনে করে পারতো গতসপ্তাহের জেলে পাড়ার একজনের এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। যে খবর সে জাহিরাকে ফোনে বলেছে কিন্তু নিউজ করে নাই। বয়স হচ্ছে মনে হয়!!!

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version