আমার টেকাডা দিয়া গেলি না!!!
মধুদা খুবই অমায়িক লোক ছিলেন। তার সম্পর্ক আমার জানাশোনার সবটাই আমার বাবার আর মুসলিম হাইস্কুলের ছাত্তার স্যারের কাছ থেকে শোনা। মধুদা আবার বাবার মধুদা ছিলেন। আমার ও তিনি মধুদা। আজকে কোন এক কারণে মধুদার কথা মনে পড়ছে!
মধুদার কেন্টিনে তিনরকমের সিঙ্গারা পাওয়া যেত। একটা ছিল ভাল গোবেচারা টাইপদের জন্য। এরা দামটা নগদে পরিশোধ করতো। আর একটা ছিল এর একেবারে উল্টোদিকে। কোনদিনই সিঙ্গারার দাম দেওয়ার কথা এদের মনেই থাকতো না। আর একটা থাকতো ছাত্রনেতাদের জন্য। এরা যতোই খাওয়া হোক না কেন, হরে দরে একটা টাকা দিতেন। এই তিন রকমের সিঙ্গারা নিয়ে আমার গল্পে গল্পে ধাঁধায় একটা ধাঁধা লিখেছি। সেটা সেখানে আছে।
তবে, মধুদা কারো কাছে কখনো টাকা চাইতেন না, ছাত্র জীবনে। কিন্তু একটা হিসাব রাখতেন। কেমনে রাখতে আল্লাহ মালুম। তারপর উনি মাঝে মধ্যে বের হতেন টাকা আদায় করতে।
মধুদা অবলীলায় সচিবালয়ে ঢুকতে পারতেন এবং খুঁজে খুজে বাকী খাওয়াদের বের করতেন। তারপর তাদের কাছে যেতেন। আমাদের নতুন আমলারা তাঁকে খুবই সমাদর করতেন। সম্ভবত তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে মধুদাই একমাত্র লোক ছিলেন যাঁর সচিবালয়ে ঢুকতে পাস লাগতো না।
তবে, মধুদার কথা আমার প্রায়শ মনে পড়ে যখন আয়নার সামনে দাড়াই। আমার মধ্যপ্রদেশ ক্রমাগত স্ফীত হচ্ছে। ঠেকানো যাচ্ছে না।
তো, মধুদারও ভূড়ি ছিল। কেমন ভূড়ি?
সন্ধ্যা বেলায় মধুদা কোথাও গেলে দূর থেকে ছেলেরা চিৎকার করে বলতো।
-ওরে, কে যায়?
-মধুদার ভূড়ি!
-তো, মধুদা কই?
– পেছনে আছে!!!
তো, এই ছিলেন মধুদা। ভানু বন্দোপাধ্যায় ভার্সিটির পড়া মুলতবী করে কোলকাতায় গিয়ে সিনেমা করতে শুরু করলো। তার প্রথম সিনেমা সাড়ে চুয়াত্তর। গুলিস্তান সিনেমা হলে মুক্তি পেল।
কয়েকজন ছাত্র এসে মধুদাকে বললো তাদের সঙ্গে যেতে যেন “আমাদের ভানুর” সিনেমা দেখতে পারেন। মধুদা যাবার আগে তাঁর খাতার মধ্যে কীসব দেখে নিলেন।
গুলিস্তান সিনেমা হলের নিচতলার সামনের দিকে একটা আসনে মধুদা বসলেন।
সিনেমা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরের দৃশ্যে ভানুকে দেখা গেল।
মধুদা সঙ্গে সঙ্গে দাড়িয়ে হেরে গলায় ডাক দিলেন-
ওরে ঔ ভানু। আমার টেকাডা দিয়ে গেলি না।
এই ছিলেন আমাদের মধুদা।
বাংলার মাটিতে আমরা যেদিন সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার করতে সক্ষম হবো সেদিন অন্যদের সঙ্গে মধুদার আত্মাও শান্তি পাবে।