শিক্ষা ও কল্পনা
বিদুষী কেজি-টুতে পড়ে। ও এখনো ভাল মত যোগ বিয়োগ করতে পারে না। কিন্তু বারচার্টের ধারণাটা ওর এসেছে তার খাতার সংখ্যাগুলো দেখে। আজ আমার সঙ্গে ২, ৩, ৪, ৫, ১০-এর গুনিতক লিখছিল। সেটা লেখার সময় ২ –এর বেলায় অনেকখানি করে আস্তে আস্তে কমেছে। শেষে ও একটা বার চার্ট আকলো এই বলে যে, মনে হচ্ছে আজকের হোমওয়ার্কটা এরকম!!!
আমি খুব একটা অবাক হয়নি। আমি ওকে নিজের মত করে সংখ্যা চেনানোর চেষ্টা করছি। কখনো মার্বেল দিয়ে, কখনো তেতুলবিচি দিয়ে। দেখা যাক ও আদৌ কিছু শেখে কী না।
তবে, আমি একটা সত্যি গল্প জানি। বাংলাদেশের একটা স্কুলের যেখানে ক্লাশ ত্রির ছেলে-মেয়েরা নিজেরাই একটা গ্রাফ একেছিল।
ওদের শ্রেণী শিক্ষক ওদের একদিন স্কুলের মাঠে পাঠালো। উদ্দেশ্য ওরা জেনে আসবে কয়টা টয়োটা গাড়ি আর কয়টা নন-টয়োটা গাড়ি। তো, ফিরে এস ওরা স্যারকে জানালো – ১৪টা টয়োটা এবং ১০টা নন-টয়োটা গাড়ি আছে।
টিচার ওদেরকে বললেন কীভাবে ওরা এই খবরটা সবাইকে জানাতে পারে।
প্রথম জন বোর্ডে এসে লিখলো
স্কুলের মাঠে ১৪টা টয়োটা গাড়ি ও ১০টা নন-টয়োটা গাড়ি আছে।
তিনি তখন বললেন আর কোনভাবে বলা যায়?
আর একজন আসলো। লিখলো –
টয়োটা | নন-টয়োটা
১৪ | ১০
গুড। আর কোন ভাবে?
তো, বাচ্চারা ভাবে। শেষে একজন এসে বোর্ডে আকঁতে শুরু করলো-
দেখা গেল ও দুইভাবে গাড়ির ছবি এঁকেছে। একটার নিচে লিখলো টয়োটা, ২৪ আর একটার নিচে নন-টয়োটা ,১০।
ছবি আঁকা শুরু হতেই ওদের বুদ্ধি খুলতে শুরু করলো-
পরের জন এসে বোর্ডের একপাশে গাড়ি আকতে শুরু করলো -১৪টা আর অন্য পাশে অন্য গাড়ির ছবি আঁকলো ১০টা।
টিচার উৎসাহ দিলেন। বললেন আচ্ছা। দেখোতো গাড়ি আঁকাতো কষ্টের। অন্যভাবে চেষ্টা করবা নাকি।
টিচার, আমরা কি কিছু মনে করতে পারবো?
কীকরম।
আর একজন আসলো- আমি ভাবি কি টয়োটা গাড়ি হল স্কোয়ার আর নন-টয়োটা গাড়ি হল সার্কেল।
টিচার খুবই চমৎকৃত হলেন। কারণ বোর্ডে আছে ১৪টা স্কোয়ার আর ১০টা সার্কেল।
এর মধ্যে একজনকে দেখা গেল কাগজ কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলেছে। ১৪টা স্কোয়ার আর ১০টা সার্কেল, বৃত্ত।
টিচার বললেন – আমাদের বোর্ডেতো অনেক জায়গা। কিন্তু কম জায়গাতে যদি করতে হয়, তাহলে তোমরা কি করবে?
“সোজা তো। আমরা স্কোযারগুলোকে একটার ওপর একটা আর সার্কেলগুলোকে একটার ওপর আর একটা বসালে দুইটা টাওয়ার পেয়ে যাবো।” বলেই সে এই কাজটা করলো।
একজন চুপ করে ছিল। সে এবার বোর্ডে এসে টাওয়ার দুইটা একে ফেললো। দেখা গেল একটার চেয়ে আর একটার উচ্চতা কম। একটা চারকোনা টাওয়ার, আর একটা গোলাকার।
টিচার ওদের আরো ভাবার সময় দিলেন। একটু ক্লুও দিলেন।
টিচার তখন বললেন, যদি গাড়ি না হয়ে মাঠে ছেলে মেযের সংখ্যা যদি ১৪ আর ১০ হতো তাহলে কীভাবে বলতা?
শিক্ষার্থীরা ভাবে।
আমি নিশ্চিত আমার পাঠকরা মোটেই অবাক হচ্ছে না যে, দিন শেষে ওরা একটা বারচার্ট আঁকতে সক্ষম হয়েছে।
এভাবে পড়ানো বা শেখানোর পদ্ধতির হয়তো একটা গালভারি নাম আছে। কিন্তু এরকম সহজ পদ্ধতিতে শেখানোর কোন বিকল্প নেই। আমি ঠিক জানি না, আমাদের স্কুলের স্যাররা কেন এই পদ্ধতি নিয়ে ক্লাসে পড়ান না। যদি পড়াতেন তাহলে আমাদের সব ছেলে-মেয়ে আট-নয় ক্লাসে ওঠার আগেই গণণায় খুব ভাল হতো, গ্রাফ হতো ওদের হাতের ময়লা!
গণিতই ওদের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকতো।
One Reply to “শিক্ষা ও কল্পনা”