ক্ষুধার্ত থাকো, বোকা থাকো-৯: নতুন দিনের পণ্য-১

Spread the love

ক্ষুধার্ত থাকো, বোকা থাকো-৮: রাজসিক প্রত্যাবর্তন-৩

সমুদ্রযাত্রায় বেড়িয়ে পড়ার জন্য ক্রিস্টোফার কলম্বাসের দরকার ছিল একটি জাহাজ বানানো। জাহাজ মানে কেবল তার খোলস নয়, পরিপূর্ণ জাহাজ। বলা হয়ে থাকে, কলম্বাস সেই সব সৌভাগ্যবানদের একজন যিনি একটা গ্রামেই খুঁজে পান তার সকল চাহিদার লোক, কার্পেন্টার, পাল তৈরির লোক, দড়ি বনানোর লোক, নোঙ্গর ঢালাই-এর লোক – সবই নাকি তিনি একই গ্রাম থেকে পেয়েছিলেন।  এমনকী তার জাহাজের নাবিকরাও ছিল ঐ গ্রামের।
আজকাল ফেসবুক ছাড়া আর কোথাও এমন গ্রাম দেখা যায় না!

অন্যদিকে, বিপ্লবের পর রাশিয়ার কোথাও কোথাও ধারণা করা হলো এক কারখানাতেই সব উৎপাদন করা হবে। যেমন সাইকেল কারখানাতেই থাকবে – চাকা বানানোর ইউনিট, টায়ার বানানোর ইউনিট, স্পোক বানানোর ইউনিট। অচিরেই দেখা গেল স্পোক বাননে ওয়ালারা বানিয়ে ফেলেছে লাখপিস, আর সাইকেল হয়েছে ১০০ টা!

তো, কলম্বাসের যুগ পেরিয়ে, শিল্প বিপ্লবের ছোঁয়ায় মানুষ বের করে স্পেশালাইজেশনের যুগ। টয়োটা গাড়ির কম্পোনেন্টগুলো তৈরি হয় ভিন্ন ভিন্ন কারখানায়। শুধু এক জায়গাতে জোড়া দেওয়া হয়। আরও পরে, জানা গেল দুইটা বুদ্ধি আছে। একটা হলো বাজারে যে যা বানায় তা জোড়া দিয়ে নিজেরটা বানিয়ে নেওয়া যায়। আবার এমনও করা যায়, সাইকেলের জন্য যারা স্পোক তৈরি করে তাদের কাছে নিজের ডিজাইনটাও ধরিয়ে দেওয়া যায়।

কম্পিউটারের বেলায় ব্যাপারটা শুরুর দিকে রাশিয়া ছিল কিন্তু আইবিএম কম্পাটিবল আসার পর এটি সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। ফলে, প্রতিষ্ঠানগুলো অপটিমাইজেশনের একটা সুযোগ বাড়তি পেয়ে যায়।   তবে, অনেক সময় অনেকেই ব্যাপারগুরো সেভাবে খেয়াল করে না।

আমি যবে থেকে বাসায় সেভ করি, তবে থেকে হয় জিলেটের ফোম না হয় সেভিং জেল ব্যবহার করি। কোন কোন সময় আমি অবাক হয়ে দেখেছি কোন কোন ফোমের কনটেইনারের উপরের দিকে মরিচা পড়ে! অবাক হতে গিয়ে মনে পড়ে, জিলেটতো ফোমটা বানিয়েছে কনটেইনারটা নয়!

এসব চিন্তা নিয়েই স্টিভ জবস তার এপলে ফিরেই প্রশ্ন করতে শুরু করলেন – যারা সফটওয়্যার বানায় আর যারা হার্ডওয়্যার বানায় তাদের মধ্যে যদি কোন যোগসূত্র না থাকে তাহলে কেমন করে সেরা জিনিষ হবে???

তাঁর উত্তরটা ছিল সহজ – হবে না।

(জবসের সঙ্গে আমি অবশ্য একমত নয়, কারণ এখন ইন্টারনেট অব থিংস এসে পড়েছে। সবাই যদি নিজের সেন্সর থেকে শুরু করে সফটওয়্যার সবই নিজে করে তাহলে কপালে যথেষ্ট ভোগান্তি থাকার কথা)

জবস অবশ্য কথার কথা বলার লোক নন। তিনি যেমনটি ভাবলেন তেমনটি করতে শুরু করলেন।

নতুনের আবাহন

অটোমোবাইল গাড়ির জনক ফোর্ডের একটা কথা জবস খুবই পছন্দ করতেন। কথাটা হলো – আমি যদি ঘোড়ারগাড়ি ব্যবহারকারীদের কাছে জানতে চাইতাম তারা কী চায় তাহলে তারা দ্রুতগামী ঘোড়ার গাড়ির কথাই বলতো ”।

ফোর্ডের এই কথাটা জবস প্রায়শ বলেন। একটি চালু প্রোডাক্টের কীভাবে উন্নয়ন করা যায় সে নিয়ে একদল লোককে কথা বলতে বললে তারা কী বলবে?

তাদের মূল কাজ হবে প্রোডাক্টে কি কী ঝামেলা আছে সেটা খুঁজতে লেগে যাওয়া!!! নয় কি। দোষ-খোঁজার ভাল দিক আছে। তবে, এ থেকে কি আপনি নতুন প্রোডাক্টের কোন ধারণা পাবেন?

পাবেন না, কারণ তাদেরকে নতুন কিছু ভাবতে বলা হয় নাই!!! আর মানুষ এমন যে, সে সচরাচর তার অভিজ্ঞতা আর ট্রেনিং-এর নিচে চাপা পড়ে। তার অভিজ্ঞতা কেমন হতে পারে সেটি সে ভাবে না।

ভাবে না বলে এখন দেশে হাজার হাজার রাইড শেয়ারিং এপের আবির্ভাব হয়েছে। এদের কাররোই নতুন অভিজ্ঞতা ভাবার মন তৈরি হয়নি।

এখানেই ভিশনারিদের সঙ্গে অন্যদের পার্থক্য। ভিশনারিরা আগাম ভাবতে পারেন, নতুন অভিজ্ঞতা কল্পনা করতে পারেন বলে তাদের মাথা থেকেই নতুন কিছু বের হয়। এরকম কিছু লোকের হাতে যদি আপনি নতুন কোন টেকনোলজি দিয়ে দিতে পারেন তাহলেই তারা নতুন কিছু বের  করে ফেলবে।

উদ্ভাবকরা তাই এমন কিছু তৈরি করেন যা কেবল তাদের কল্পনায় থাকে।

প্রশ্ন হচ্ছে স্টিভ জবস কেমন করে এই কল্পনাকে নামিয়ে আনবেন বাস্তবে?

 

 

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version