ক্ষুধার্ত থাকো, বোকা থাকো-২ : পাইরেটস নট নেভি!!!
আগের পর্ব- ক্ষুধার্ত থাকো, বোকা থাকো-১ : প্রস্তাবনা
অথচ, জবস কিন্তু মহা ত্যাদোর লোক।
ম্যাকের কথায় ধরা যাক। পার্কের ল্যাবে মাউস, জিআই ইত্যাদি দেখে আসার পর, কোম্পানির লোকেরা তাকে বোর্ডের চেয়ারম্যান বানিয়ে দিল। সে সময় এপল টু আছে বাজারে। গবেষণা হচ্ছে লিসা নামে একটি প্রজেক্টের। সেটি হবে পরের এপল। সেই প্রোডাক্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার সরাসরি স্টিভকে বলে দিল, “আপনি এখানে না আসলেই আমি খুশী হবো?”
নিজের কোম্পানিতে কেউ তারে পাত্তা দেয় না, ইঞ্জিনিয়াররা তার কথা শুনে না। অন্য যে কেউ হলে খুবই হতাশ হয়ে পড়তো, তাই না।
কিন্ত জবস কী করলো?
না, খুজে বের করলো একটি অবহেলিত গ্রুপ আছে এপলে, Mcintosh নামে একটি প্রজেক্ট। কেউ পাত্তা দেয় না। জে এলিয়টকে নিয়ে সেখানে হাজির হলো জবস। কোম্পানির চেয়ারম্যান শুরু করলো তাদের সঙ্গে আলাপ। বিষয়বস্তু এমন কম্পিউটার বানানো যেটাতে কীবোর্ড ছাড়াও ইনপুট দেওয়া যায়, টেক্সট ছাড়া, ছবি দেখে কমান্ড দেওয়া যায়। ইঞ্জিনিয়াররা যতো চিৎকার করে এসব সম্ভব না, ততোই নাছোড়বান্দা বলতে থাকে “ভাবো।, করো।” ( ঠিক এ জায়গাতে জবসের সঙ্গে মিল আছে আমার বসের। তিনিও সর্বদা বলেন- ভাবো।”
কোম্পানির চেয়ারম্যান দেখা গেল সবার চেয়ে কম বুঝে না। জটিল জিনিষ সমাধান করতে পারে, আর সারাক্ষণই কারো না কারো সঙ্গে আলাপ করে। ততোদিনে স্টিভ বের করে ফেলেছেন “management by walking” তত্ত্ব! মানে কী, কোন না কোন কর্মীর টেবিলের সামনে গিয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া, “কাজ কেমন হচ্ছে, কোন সমস্যা হচ্ছে কী না”। কোন কোনদিন সরাসরি,” আচ্ছা, তুমি কী এমন করছো যার জন্য আমি তোমাকে টাকা দেই?”
সব ধরনের কর্মীরই কিন্তু এতে বিরক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু তারা হচ্ছে না!!!
ম্যাক টিমের জন্য লোক খোজার জন্য নতুন একটা ফ্রেসও সে বের করে ফেলেছে, “Pirates, not Navy”।
বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক খুজে আনা হচ্ছে। ভাল লোক রেফার করতে পারলে নগদে বোনাসও দেওয়া হচ্ছে। সবাই মনে হচ্ছে এই টিমে কাজ করার জন্য পাগল হয়ে উঠেছে, যদিও অনেক জানে এটি এপলের মেইন টিম না। আর খাটাখাটনি, দৈনিক ১৬-১৮ ঘন্টা ধরে কাজ। সপ্তাহিক মিটিংএ জবসের নতুন নতুন চাহিদা। কীরকম সেটা শুনবেন?
প্রথম প্রটোটাইপ দেখে বললেন অনেক শব্দ!!! মানে হলো ম্যাকের ফ্যানের শব্দ। বললো ফ্যান বাদ দিতে হবে!!!
এরকম উৎপাত সহ্য করে ইঞ্জিনিয়ারা কিন্তু ম্যাক বের করে ফেললো।
খালি সাপ্তাহিক মিটিং!!!
প্রতি তিনমাসে রিট্রিট আর তারপর আছে গভীর রাতে জবসের ফোন,”আমি কি তোমার সাথে একটু কথা বলতে পারি?”
অন্যান্য কর্পোরেটদের মতো খালি জন্মদিন বা বিবাহবার্ষিকী নয়, ম্যাক টিমের লোকেরা সেলিব্রেট করে – যেকোন মাইলস্টোন এচিভমেন্ট। যে মাইলফলকগুলো ঠিক করা হয় সাপ্তাহিক মিটিংএ।
যখন তখন নতুন নতুন টি-শার্ট বের করার উপলক্ষও তারা বের করে ফেলতেন। এপলের টি শার্টের ডিজাইনগুলো দিয়ে জবসের রুমের টেবিল ক্লথ ডিজাইন করা হয়েছে!!!
এতো চাপ, এতো ঝামেলা, চেয়ারম্যানের উৎপাত সত্ত্বেও কেহ এপল ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতো না। কেন?