আমার মুক্তি আলোয় আলোয়

Spread the love

অন্ধকার ঘরে এবার এক বালককে আমি বললাম – আমার জন্য একটু আলো নিয়ে আসো।
সে ভিতর বাড়িতে গিয়ে একটা হারিকেন নিয়ে আসলো। আমি বললাম- আমি তো হারিকেন চাইনি, আলো চেয়েছি।

বালক হারিকেন নিয়ে গেল। এবার সে ফিরে আসলো একটা কুপীবাতি নিয়ে। “এ তো কুপী। আলো কই” আমি বললাম।
ও একটু রাগত হলো। তারপর কুপী নিয়ে ফিরে গেল। অনেকক্ষণ সাড়া শব্দ নেই।

তারপর দেখলাম কিছু খড় এনে আমার সামনে রাখলো। তারপর আমি কিছু বলার আগেই ফস করে একটা দেশলাই কাঠি জ্বালিয়ে তার মধ্যে ফেলে দিল। দাও দাও করে জ্বলে উঠলো আলো। “এই নেন আপনার আলো।“ বলে বালক গট গট করে চলে গেল।

আমি আর ওকে বললাম না, পৃথিবীর একটা ছোট রহস্যের সামনে আসলে আমি ওকে দাড় করিয়ে দিয়েছি। ওই সেই প্রশ্ন যাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে আমাদের বিজ্ঞান। সত্যি কথা বলতে, বিজ্ঞানের ইতিহাসই হলো আলোকে জানার ইতিহাস অথবা নিজেকে জানার। এ যেন “আমার মাঝে তোমার প্রকাশ”।

 

আলো কী? এই কথা ভাবতেন নিউটন। তার ধারণা ছিল আলো হচ্ছে কণাগুচ্ছ, ইথার সমুদ্রে এদিক থেকে ওদিক যাচ্ছে। ব্যাটা মাইকেলসন আর মর্লি এসে ঝেটিয়ে বিদেয় করলো ইথারকে। তারও আগে আমরা জেনে গেছি আলো আসলে কণা নয়, তরঙ্গ। কারণ এটি ব্যতিচার তৈরি করে। তাই যদি হবে তাহলে কেন আলোর তড়িৎ ক্রিয়া হবে। তখন বোঝা গেল না এতো কণা।
মহা মুশ্কিল। পরে দেখা গেল এটা কণা-তরঙ্গের এক ধরণের উপরিপাতন। দর্শক যেমন দেখতে চাইবে, আলোর সেই রূপই আসলে ধরা দেবে। একেবারে রবীন্দ্রণাথের মনের কথা –

আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ ,

চুনি উঠল রাঙা হয়ে ।

আমি চোখ মেললুম আকাশে ,

জ্বলে উঠল আলো

পুবে পশ্চিমে ।

গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম ‘সুন্দর’ ,

সুন্দর হল সে ।

তুমি বলবে , এ যে তত্ত্বকথা ,

এ কবির বাণী নয় ।

আমি বলব , এ সত্য ,

 তাই এ কাব্য ।

আলোর ঝাকানাকায় নানানভাবে সত্য উন্মচিত হয়। হয় বলেই আলো দিয়েই আমরা আঁধারকে কাটাই।
আলো বন্দনার কারণ কি?

আর কিছু না। শেষ হওয়া ২০১৫ ছিল আলোর বছর। ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার অব লাইট। ২০১৫ কে বেছে নেওয়ার অনেক কারণ ছিল। ১০১৫ সালে অপটিকস নিয়ে করা আল-হাজেনের কাজ, ১৮১৫ সালে অগাস্টো ফ্রেনেলের আলোকে তরঙ্গ হিসেবে প্রস্তাব করা, ১৮৬৫ সালে দেওয়া জেমস ক্লার্ক মাস্কওেয়েলর বিখ্যাত আলোর তড়িৎচুম্বকীয় তত্ত্ব, ১৯০৫ সালের আইনস্টাইনের আলোর তড়িৎ ক্রিয়ার ব্যাখ্যা, ১৯১৫ সালের তারই আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব, ১৯৬৫ সালে আরনো পেনজিয়াস এবং রবাট উইলসেনর নেপথ্য বিকিরণ খুঁজে পাওয়া – এরকম অনেক কিছুর বষপূর্তি পড়েছে ২০১৫ সালে। সেই জন্য এই আয়োজন।

অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমরাও ইউনেস্কোর এই আয়োজনে শরিক হয়েছিলাম। সারাদেশে আলোর ঝিলিক আর ঢাকায় ৪টি আলোর কথামালার আয়োজন করেছি। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি মেক্সিকোতে এটির আনুষ্ঠানি পর্দা পড়বে।

তার আগে আমরা আমাদের আয়োজনেরও একটা সমাপ্তি টানবো আগামী ১৭ জানুয়ারি, রোববার, বিকেলে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র।

আলোর বছরের সমাপ্তি অনুষ্ঠানের জন্য আমরা বেছে নিয়েছি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। শিরোনামের নামেই আমাদের অনুষ্ঠানের নাম। সেখানে থাকবে আলোর বছর নিয়ে কিছু পাঠ, অভিজ্ঞতা এবং আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।

আর সবশেষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সলিল চৌধুরী এবং অন্য কয়েকজনের আলো নিয়ে গান, পাঠ এবং একটি বিশেষ কথোপকথন।
সবার আমন্ত্রণ।

Leave a Reply Cancel reply