আই পে ফাল্গুনী উদ্যোক্তা হাট ২০১৯
“চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব”-কে যখন আমরা ফেসবুক থেকে বের করলাম, তখন থেকে আমরা ভেবেছি উদ্যোক্তাদের জন্য কী কী করা যায়? শুরুর দিকে আমাদের ধারণার মধ্যে ছিল সেমিনার, কর্মশালা। এর পরই আমরা ভাবলাম একটা হাট করলে কেমন হয়। সে সময় এবং এখনও অনেক পণ্য মেলা হয়। বাণিজ্য মেলা থেকে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড। একটা সাধারণ চরিত্রও দাড়িয়েছে। একটি মুলত মেলা প্রধান যেখানে বিকি-কিনি হবে। আর একটি কনফারেন্স প্রধান যেখানে ভারি কথাবার্তার পাশাপাশি বেচাকেনা হলেও হতে পারে।
আমি অবশ্য ভাবছিলাম ভিন্ন কিছু। এমন একটা গ্যাদারিং যেখানে উদ্যোক্তা ইকো সিস্টেমের লোকজন থাকবে এবং তাদের মধ্যে নেটওয়ার্কিং হবে। কাজে, এক রকমের পণ্য বা সেবা থাকবে না। বিটুসি’র পাশাপাশি বিটুবি’ও থাকবে। আর এই কারনেই আমরা হাট শব্দটাকে বেঁছে নিয়েছি। উদ্যোক্তা হাট। গ্রামীণ হাটের মতো যেখানে কেবল লোকে বেচাকেনা করতে যায় না, গল্প করতে যায়, আড্ডা দিতে যায়, কোন ইনফরমেশনের জন্য যায়। তার মানে এটির মুল লক্ষ্য কিন্তু বেঁচা কেনা নয়। আর এরকম ভাবে আমরা ঢাকায় ৫টি এবং চট্টগ্রামে একটা আযোজন করে ফেলেছি। এবারের আয়োজনটি তাই ঢাকায় ৬ষ্ঠ বারের মতো। আগামী ২২-২৪ ফেব্রুয়ারি হবে “আইপে ফাল্গুনী উদ্যোক্তা হাট ২০১৯”। আজ ছিল তার সংবাদ সম্মেলন। সম্মেলনে কিছু গৎ বলতে হয়। সেটা আমি বলেছি। শওকত ভাই, আবুল খায়ের চৌধুরী ও খাদা মরিয়ম তাদের কথা বলেছেন। এছাড়া কথা বলেছেন কয়েকজন উদ্যোক্তাও। আর তার মধ্যেই আমি খুঁজে পেলাম হাটের স্বার্থকতা।
অনুষ্ঠানে কথা বললেন চামড়াজাত পন্যের উদ্যোগ সাবাব লেদারের ব্যবস্থাপনা পার্টনার শোয়াইব হোসাইন। তাদের প্রতিষ্ঠানটি আমাদের মিরপুরের হাটে অংশ নিয়েছে। সে অভিজ্ঞতা শেয়ার করে জানালেন – আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করলেও দেশে কেউ তেমন আমাদের চিনতো না। কিন্তু মিরপুর “উদ্যোক্তা হাটে”র পর থেকে আমাদের লোকাল ব্র্যান্ডিং-এর প্রভূত উন্নতি হয়েছে। এখন আমরা অনেক লোকাল সাপ্লাই-এর কাজ পাচ্ছি।” তাঁর বক্তব্য হলো – হাটটাকে কেবল বেচাকেনার জন্য না ভেবে এ থেকে সব ধরণের সুবিধা একজন উদ্যোক্তার গ্রহণ করা উচিৎ।
আমিও সেটা বলি। এই হাটে থাকবে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের লোকজন। আইপিডিসি উদ্যোক্তাদের নানাভাবে সাহায্য করে। এর মধ্যে একটা হরো ফ্যাকটরিং। এটি হলো ওনাদের মেম্বার প্রতিষ্ঠানে যদি কেউ কোন মালামাল সরবরাহ করে তখন সে বিলের বিপরীতে তার উণ দেন এবং বিল আদায়ে সাহায্য করেন। এ টাকার পরিশান এমনকী ৫ কোটি টাকাও হতে পারে। এই মেলাতে আইপিডিসির যারা থাকবেন তারা কিন্তু নিজেদের চাহিদা, সুযোগ ইত্যাদি ব্যাখ্যা করবেন। এবং সেটি ইনফরমাল ভাবে। কাজে এটি একটি বড় সুযোগ।
অন্যদিকে, আইপে বাংলাদেশের হেড অব বিজনেজ আবুল খায়ের চৌধুরী জানান হাটের উদ্যোক্তাদের জন্য আইপের পক্ষ থেকে নতুন একাউন্ট তৈরি করার সুবিধার পাশাপাশি আই পে’র মাধ্যমে সম্পাদিত সকল লেনদেন ফী মুক্ত থাকবে। অর্থাৎ ক্রেতারা যদি আইপে’র মাধ্যমে লেনদেন করেন তাহলে বিক্রেতাদের কোন কমিশন দিতে হবে না! আইপের বর্তমানে ৭ লক্ষ নিবন্ধিত ও ৭৫ হাজার একটিভ ইউজার আছে। কাজে উদ্যোক্তারা আইপের মাধ্যমে তার পণ্য বা সেবার খবর পৌছানোর জন্য কাজ করতে পারেন
আলাপ হলো সাদিয়া আফরিনের সঙ্গে। ব্রিয়োনা নামের একটি বুটিক শপের ডিজাইনার ও উদ্যোক্তা। সাদিয়া প্রথমবারের মতো উদ্যোক্তা হাটে যোগ দিচ্ছেন। তাঁর ধারণা এর মাধ্যমে ব্রিয়োনা’কে বড় করার বুদ্ধি, পরামর্শ এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারবেন।
সাদিয়া, শোয়াইবের মতো ৪৫ জন উদ্যোক্তার উদ্যোগ নিয়ে আগামী শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে আমাদের তিনদিনের “আইপে ফাল্গুনী উদ্যোক্তা হাট ২০১৯”। ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে উউম্যান ভলান্টারি এসোসিয়েশনের মিলনায়তনে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ হাট চলবে। হাটে দেশীয় ডিজাইন ও ম্যাটেরিয়ালের জামা, কাপড়, খাবার, চামড়া ও চামড়াজাত পন্য, ইলেকট্রনিক্স, ইন্টেরিয়র সামগ্রী, আইটি ও আইটিইএস সেবা, স্টেশনারীসহ বিভিন্ন পন্য ও সেবা প্রদর্শন ও বিক্রি করা হবে। উদ্যোক্তা অংশ নিচ্ছে টেকস্ট্রিম সল্যুশনস, টোটাল অনলাইন সলুশন, কুক্যান্টস লিমিটেড, ডিজিটাল পাওয়ার এন্ড টেকনোলজি, রেজিস্ট্রো, কড়ি ডট কম, শাবাব লেদার, জেটগো, কাশফিয়া বুটিক, অঙ্গ ঢং, ফ্রুইজার বাংলাদেশ, আফরিনা’স কালেকশন, জামিলা, ক্লাউড বেনজ লিমিটেড, ব্রেওন্না, ফুডহাট, প্রিয়বাজার, ইজিয়ার, অদ্ভুত দ্যা শপিং উন্ডার, নায়রী, অচিন, রেনে বাংলাদেশ, সুহায়রা, সফট টেক ইনোভেশন লিমিটেড, সাববাক্স, এম এন্ড বি ইন্টারন্যাশনাল, স্টাইজিন, প্রাইম আইটি লিমিটেড, রঙিনমেলা, ব্র্যান্ড কিডজ, লেজিফগ ডট কম, লিরিক হ্যান্ডিক্রাফটস, হোস্ট মাইট, পেপার টু পার্ল বিডি, ডাবটেইল, ওকার , ডায়না হোস্ট লিমিটেড, এফ এম প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, কম ইঞ্জিন, গার্নার্স স্ট্যাশনারী এবং বক্স অব অর্ণামেন্টস।এছাড়া আয়োজনের স্ট্রাটেজিক পার্টনার আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড ও বিডি ভেঞ্চারের স্টলও থাকবে।
বিডি ভেঞ্চারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত হোসেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ সুবিধার জন্য দেশে সাম্প্রতিক সময়ে শুরু হওয়া “ক্রাউডফান্ডিং”এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। আইপিডিসির খাদিজা মরিয়ম ক্ষুদ্র ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিদ্যমান বিভিন্ন সুবিধার কথা জানান।
উদ্যোক্তা হাটের নলেজ পার্টনার হিসেবে রয়েছে ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অফ ইনোভেশন এন্ড এন্ট্রাপ্রেনারশীপ, সোশ্যাল মিডিয়া পার্টনার হিসেবে মন্ত্র এবং ওয়েব পার্টনার হিসেবে ভার্চুয়ানিক সলুশনস। মিডিয়া পার্টনার হিসেবে নাগরিক টিভি, ঢাকা এফএম, সি নিউজ, জাগো নিউজ ২৪ ডট কম এবং টেকশহর ডট কম। ইভেন্ট পার্টনার হিসেবেথাকছে জিরো ডিগ্রী কমিউনিকেশন। এছাড়া ফটোগ্রাফী পার্টনার হিসেবে আছে স্টোরি এ্যালবাম।
হাটে কী হয় সেটি নিয়ে জাফর ইকবাল স্যারের চমৎকার একটি লেখাও আছে।
আইপে উদ্যোক্তা হাট সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
আমি নিজে প্রতিদিন সেখানে যাবো, ইনশা আল্লাহ।
2 Replies to “আই পে ফাল্গুনী উদ্যোক্তা হাট ২০১৯”