চাকরি চাই-৪: ইন্টারভিউ প্রেজেন্টেশন
কিছুদিন আগে ব্যাপারটা উচ্চস্তরের পদের জন্য থাকলেও এখন মিড লেবেল, ১/২ বছরের অভিজ্ঞ প্রার্থীদেরকেও এই ধাপ পেরোতে বলা হয়। তা সে যে পজিশনেরই হোক না কেন কয়েকটা বেসিক জিনিস না করে প্রেজেন্টেশন নিয়ে হাজির হওয়াটা বোকামি। ইন্টারনেটে ঘাটলে এরকম ক্ষেত্রে কী কী করতে হবে তার অনেক লিংক পাওয়া যাবে পড়ার জন্য। আমি আমার পরামর্শগুলো দিয়ে রাখি-
১. প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানা – এটি হলো ফরজে আইন। প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে না জেনে প্রেজেন্টেশন দিতে যাওয়াটা বোকামি কেবল নয়, এটি মোটামুটি আত্মহত্যার শামিল। তো এটা জানার জন্য গুগলের শরনাপন্ন হতে হবে। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে অনেক তথ্য থাকে সেগুলো জানা। তথ্য মানে ঐ প্রতিষ্ঠান কোন সালের কতো তারিখে প্রতিষ্ঠা হয়েছে সেটি নয়, বরং বোঝা দরকার ঐ প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কী, বাজারে তার অবস্থান কেমন, কোন কোন ভ্যালুকে তারা হাইলাইট করে। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের পর তাদের সামাজিক যোগাোযগের সাইটগুলোও ভেঁজে খেতে হবে। আচ্ছা ওদের টুইটার ফলোযার কতো, ফেসবুকে কী কোন পেজ আছে? থাকলে সেটার লাইক কতো, একটিভিটি কেমন এগুলোও জানতে হবে। ওখােন ওনারা কী করেন?
২. পজিশন – যে পজিশনের জন্য প্রেজেন্টেশন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা দরকার। এটি বেশিরভাগ সময় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে থাকে। সেখানে দায়িত্ব কর্তব্যগুলো সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়। সেখানে কোন কাজ বুজতে না পারলে সে সম্পর্কে জানতে পড়ালেখা করতে হবে। এই তথ্যগুলো কোন না কোনভাবে আপনার প্রেজেন্টেশনে থাকতে হবে।
১ ও ২ এর একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরা যাক আপনি কোন প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল মার্কেটিয়ারের কোন পজিশনের জন্য প্রেজেন্টেশন দেবেন। তাহলে আপনার একটা স্লাইড থাকতেই হবে যেখানে ঐ প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল প্রেজেন্স সম্পর্ক আপনার জানাশোনার প্রকাশ ঘটবে ।
- কোন একটা রেংকিং অনুসারে প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের পজিশন
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তাদের অবস্থান
- একটিভিটি – প্রতিদিন কয়টা পোস্ট দেয়, সেগুলোতে এনগেজমেন্ট কেমন (এগুলো পাবলিক তথ্য, আপনি চাইলেই বের করতে পারবেন)
- অনেক ফ্রি-এনালিটিক্স আছে যা পাবলিক তথ্য বিশ্লেষনে আপনাকে সাহায্য করবে। সেগুলো খুঁজে বের করুন।
- প্রতিদ্বন্দীদের অবস্থানও আপনার জানতে হবে।
৩. টেকনেলজি – অনেক সময় নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বলে দেয় কোন ফরম্যাটে আপনাকে উপস্থাপনা করতে হবে। তাহলে সে ফরম্যাটে আপনি প্রেজেন্টেশনটা নিয়ে যাবেন, অন্য ফরম্যাটে নয়। আর বাহুল্যে যাবার আগে আপনাকে তার একটা আবহও তৈরি করতে হবে। ধরা যাক আপনার মার্কেটিং টুলসের একটি হবে ভিডিও। তাহলে আপনি একটা ১০-১৫ সেকেন্ডের ভিডিও বানিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। তবে, দেখানোর আগে সেটা কেন দেখাচ্ছেন সেটি নিশ্চিত হয়ে নিন। ধরা যাক আপনি স্যোসাল মিডিয়া মার্কেটিং-এর পদের জন্য লড়ছেন। তাহলে ভিডিওর প্রসঙ্গটি আনবেন যখন আপনার পরিকল্পনার কথা বলবেন তখন, তার আগে নয়। তাছাড়া দেখে নিন, ঐ প্রতিষ্ঠান মার্কেটিং ভিডিও ব্যবহার করে কিনা। করলে, আপনি তাতে নতুন কি ভ্যালু যোগ করছেন সেটাও বলতে হবে। তবে, পিপিটির বাইরে গিয়ে ৩৬০ ডিগ্রী কিংবা ভিডিও এগুলো দেখাতে হলে পর্যাপ্ত আবহ তৈরি করতে সক্ষম হতে হবে, না হলে হিতে বিপরীত হবে।
৪. কাজের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করুন: এটি দুইভাবে আপনাকে করতে হবে। প্রথমত এখনকার অফিসে আপনি কী কী কাজ করেন সেটা যেমন বলবেন তেমনি আপনার দৈনন্দিন কাজের বাইরেও একই বিষয়ে আপনি কী কী পড়েন, করেন সেটাও বলতে হবে। নিয়োগকারীরা এখন প্রো-একটিভ লোক খুঁজে, রিএক্টিভ নয়। আপনি যদি আপনার এখনকার অফিসে কেবল যা বলা হয় তাই করেন, তাহলে নতুন অফিসেও আপনি নিজে থেকে কিছু করবেন না। এটাই নিয়োগকর্তা ধরে নেবেন। এটার অর্থ হলো বর্তমান কাজেও আপনাকে তৎপরতা বাড়াতে হবে। আপনি হয়তো বলতে পারেন – আপনার কোন আইডিয়া এখনকার অফিস শুনে না তাই আপনি নতুন কিছু করতে পারেন না। এই অজুহাত আসলে তেমন একটা ধোপে টেকে না। কারণ এর মাধ্যমে আপনি মেনে নিচ্ছেন আপনার কনভিন্সিং ক্ষমতা কম এবং আপনার উদ্ভাবনী শক্তিও কম। কাজে সাধু সাবধান।
৫. কাজের অন্দর-মহল : যে চাকরিটা চাচ্ছেন সেটি করার বেসিক যোগ্যতা আপনার আছে তো? ডিজিটাল মার্কেটিং-এর কথাই ধরুন। প্রথমত কাজটা মার্কেটিং, সেলস নয়। মার্কেটিং আর সেলসের মধ্যে পার্থক্যটা মাথায় পরিস্কার তো? তারপর হলো এটা ডিজিটাল। মানে মার্কেটিং-এর মাধ্যমটা ডিজিটাল, অন্যকিছু নয়। কাজে সেভাবে আপনাকে উপস্থাপন করতে হবে। ফেসবুকের কথা ভাবুন। আপনি যদি স্যোসালমিডিয়া মার্কেটিয়ার হতে চান তাহলে আপনাকে ফেসবুকে এলগরিদম, হিসাব-নিকাশ ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হবে। কেমন করে অর্গানিক রিচ বাড়ানো যায়, কেমন করে সেটার সঙ্গে পেইড রিচের ব্যবস্থা করতে হয় সেটা যেমন আপনার জানতে হবে তেমনি আপনাকে জানতে হবে ফেসবুকে লাইক কিনে কোন লাভ হয় কি না? পেজের ক্লিনলিনেসের সঙ্গে ফ্যানবেসের সম্পর্ক আছে কী না। কিছু বেসিক মার্কেটিং কৌশল আপনার জানতে হবে। আর ডিজিটাল মার্কেটিং-এর সঙ্গে ট্রাডিশনাল মার্কেটিং-এর তুলনা, পরিসংখ্যানসহ আপনার জানতে হবে। ডিজিটাল মার্কেটিল-এর কথা বলতে গিয়ে আপনি যদি বলেন – ডিজিটাল এখনই ট্র্যাডিশনালকে অতিক্রম করে গেছে তাহলে আপনি বিপদে পড়বেন, কারণ সেটা সত্য নয়। কাজে কিছু তথ্য-পরিসংখ্যান যোগার করুন যা আপনার প্রেজেন্টেশনে জায়গা পাবে। যেমন আপনি যখন বলবেন, আপনি ভিডিও পোস্ট দেবেন তখন আপনাকে বলতে হবে, অমুক সমীক্ষায় দেখা গেছে ফেসবুকে ভিডিও দিলে পোস্টের এনগেজমেন্ট এতো পার্সেন্ট বাড়ে।সেটা জোর দিয়ে বলুন।
৬. পাণ্ডিত্য দেখানোর দরকার নেই: আপনার প্রেজেন্টেশনে কিছু গ্যাপ রাখুন এবং সেটা প্রেজেন্ট করার সময় আলাপ করুন। বলুন আমি এ তিনটি বিষয় ভেবে এই কৌশলটা ঠিক করেছি। এর সঙ্গে আমি আরও দুইটা তথ্য যা কিনা পাবলিকলি এভেইলেবল না সেটা জানলে কৌশলটা বদলে যেতে পারে। অকপটে নিজের দুর্বলতার কথা বলুন। না জানলে বলেন – আমি এটা জানি না। পেচানোর দরকার নাই।
৭. গল্পের ঢঙ্গে বলুন – ইনফরমাল টোন থাকুন, স্লাইড দেখে রিডিং পড়বেন না। স্লাইডের কথাগুলো অন্যভাবে বলুন, উদাহরণ দিয়ে বলুন। খেয়াল রাখবেন আপনার অডিয়েন্স যেন বোরিং না হয়।
৮. রিহার্সাল দিন – ৫/৬টার বেশি স্লাইডের প্রেজেন্টেশনের সুযোগ কম পাবেন। কাজে টু দি পয়েন্ট বলতে হবে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। এটা আপনি পারবেন যদি নিজের ওপর আপনার “অবিশ্বাস্য বিশ্বাস” না থাকে। আপনি বরং ১/২ দিন আগে প্রেজেন্টেশনটা তৈরি করুন। সেটা রিহার্সাল দিন। পারলে বন্ধুবান্ধবদের সামনে সেটা করুন। কাউকে না পেলে বাসায় ছোট ভাইবোনের সামনে সেটা দিন। আর আপনি যদি ভাবেন আপনি সকালে উঠে একটা প্রেজেন্টেশন বানিয়ে দুপুরে সেটা দিয়ে কিস্তুিমাত করে দেবেন, তাহলে ভুল করবেন। মনে রাখবে, ইন্টারভিউ বোর্ডের লোকেরা নানান রকম লোকের পাণ্ডিত্য দেখে দেখে সেখানে পৌছেছেন।
আপনার ইন্টারভিউ প্রেজেন্টেশন সফল হোক।