চলুন ইন্টারনেটে বাংলা কন্টেন্ট বাড়াই

Spread the love

এমন একটা বিশ্বের কথা কি ভাবা যায় যেখানে মানুষের সৃষ্ট এবং জানা সকল জ্ঞান সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ভাবাটা কঠিন তবে অসম্ভব নয়। এই অসম্ভবের ডাক দিয়েছিলেন জিমি ওয়েলস, মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার সূচনা করে। আজ থেকে দেড় যুগ আগে তাঁর হাত দিয়ে শুরু হওয়া উইকিপিডিয়া এখন ইন্টারনেটে সবচেয়ে বড় মুক্ত জ্ঞানভান্ডার। কেবল ইংরেজি নয়, বিশ্বের প্রায় ২৫০টির বেশি ভাষার লোকেরা এই জ্ঞানকোষ গড়ে তুলছেন। বাংলাও তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলা উইকিপিডিয়াতেও রয়েছে প্রায় ৩৩ হাজারের বেশি নিবন্ধ।

অন্যান্য বিশ্বকোষের সঙ্গে উইকিপিডিয়ার পার্থক্য হল এটিতে যে কেও তথ্য যোগ করতে পারে, সম্পাদনা করতে পারে, ছবি যুক্ত করতে পারে। তাই বলে এর মান খারাপ বা এটি আবর্জনাতূল্য এমনটা এর বিরোধিতাকারীরাও বলেননা। কারণ সবাই ক্রাউড সোর্সিং-এর ব্যাপারটাকে ভালমত বুঝে ফেলেছেন। যেসব স্বেচ্ছাসেবী ঘরের খেয়ে এই বনের মোষ তাড়ায় তাদের বলা হয় উকিপিডিয়ান। তবে, মুক্ত জ্ঞানভান্ডার তৈরির কাজটি কেবল মুক্ত বিশ্বকোষেই থেমে নেই। আরো অনেকদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।
উইকিপিডিয়ার কাজকর্ম ঠিকঠাক মতো হওয়ার জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশন আছে যার নাম উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন। এই উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের এখন প্রায় গোটা দশেক প্রকল্প রয়েছে যার মাধ্যমে মুক্ত জ্ঞানভান্ডারের সকল অংশকে যুক্ত করার প্রচেষ্টা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উইকি সংকলন, কমন্স, বই কিংবা ডিকশনারীর মত কার্যক্রম। উইকিপিডিয়ার মত সবটাই স্বেচ্ছাশ্রমে হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী এই কাজগুলো সমন্বয়ের জন্য গড়ে উঠেছে উইকমিডিয়ার চ্যাপ্টার। এখন বিশ্বের ৪০টি দেশে এই চ্যাপ্টারগুলো কাজ করছে। ২০১১ সাল থেকে সক্রিয় রয়েছে উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ। তবে, এটি ভাবার কোন কারণ নেই যে, বাংলা উইকিপিডিয়ার কাজ ২০১১ সাল থেকে শুরু হয়েছে। বস্তুত ২০০৪ সালেই বাংলা উইকিপিডিয়ার কাজকর্ম শুরু হয় কয়েকজনের হাত ধরে। এটি গতি পায় আমাদের সবার প্রিয় রাগিব হাসান যখন এর হাল ধরেন। ২০০৫ সালে এর সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক। ২৫ মার্চ ২০০৫ সালে Bangla_wiki নামে একটা ইয়াহু মেইলিং লিস্ট তৈরি করি আমরা এবং শুরু করি নানান আয়োজন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মশালা আর পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করে আমরা এই কাজটাকে এগিয়ে নেই। ২০০৬ সাল থেকে প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি বই মেলার সামনে ও ১লা বৈশাখ পাবলিক লাইব্রেরির সামনে জমায়েত হয় বাংলা ভাষার উইকিপিডিয়ানরা। পরে ২০১১ সালে আমরা পৃথক চ্যাপ্টারের মর্যাদা পাই। যদি এর আইনানুগ স্বীকৃতি পেয়েছি আমরা গত বছর।
এই ভাষার মাসে উইকিপিডিয়ার প্রসঙ্গ উত্থাপনের কারণ রয়েছে। একটি বড় কারণ হল আমাদের দেশে এখন প্রায় চারকোটিরও বেশি লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এদের ২৫%এর বেশি সক্রিয় থাকে ফেসবুকে। এর কারণ কী?
২০০৯ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে ফেসবুকের ব্যবহারকারী ছিল এক লাখেরও কম। এখন এককোটিরও বেশি। আমি একটা ছোট্ট সার্ভে করে দেখেছি এদের মধ্যে ৭৫%-এ ঠিক জানেন না কেন তারা ফেসবুকে সক্রিয়। একটা কথা সবাই বলেন যে, ফেসবুকেই তারা নানান খবর পান এবং বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেন। তাদের বক্তব্য হল এই জগতের বেশিরভাগই এখন বাংলাতে হয়। ফলে তারা সহজে ব্যাপারগুলো বুঝতে পারেন। এই বক্তব্যের একটি সরলীকরণ ভাষ্য হতে পারে যে, ইন্টারনেটে আমাদের দেশীয় এবং বাংলা ভাষাতে পর্যাপ্ত কন্টেন্ট নাই। সেটি টেক্সট বা অডিও বা ভিডিও যাই হোক। এবং এটি একটি সত্য কথা। উইকিপিডিয়াকে ডেকে আনার একটা বড় কারণ কিন্তু এই বাংলা কন্টেন্টের অপর্যাপ্ততা। উইকিপিডিয়া যেহেতু সবাইকে বিশ্বমানের কন্টেন্ট তৈরির সুযোগ করে দিচ্ছে তাহলে আমরা সেটি ব্যবহার করছি না কেন? ফেসবুকে বাংলার ব্যবহার দেখে বোঝা যায় ইন্টারনেটে বাংলা ভাষা ব্যবহারে তেমন একটা কারিগরি সমস্যা নাই। আমাদের চারকোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে মাত্র এক হাজার জন যদি উইকিপিডিয়াতে নিয়মিত তথ্য যোগ করেন তাহলেই কিন্তু সেটি একটি বিরাট জ্ঞানকোষে পরিণত হবে। (কেমন করে করতে হবে তার একটা বাংলা নির্দেশিকা বিডিওএসএনের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যাবে)।
আমাদের দুর্বল শিক্ষা কাঠামোতে একটা বড় পালক যুক্ত করতে পারে উইকিপিডিয়া। বাংলাদেশ জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানান বিষয় যদি আমরা তুলে ধরতে পারি তাহলে জেলাশহরের বাইরের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা সেটি ব্যবহার করতে পারেন। কোন কোন মোবাইল অপারেটর তাদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বিনাখরচে উইকিপিডিয়া ব্যবহার করতে দেয়। কাজে উইকিকে সমৃদ্ধ করলে আমাদের এক ঢিলে দুইপাখির কাজটা হয়।
আর মাত্র দুইদিন পর, অর্থাৎ ২৬ ফেব্রুয়ারিতেই ঢাকায় আসবেন উইকিপিডিয়ার সহ-প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস। তাঁর ঘন্টা কয়েকের উপস্থিতিতে দুইটি অনুষ্ঠান হবে।
যার একটি আমাদের বাংলা উইকিপিডিয়ার এক দশক পূর্তি। সেখানে আমরা ভাষার প্রতি আমাদের কমিটমেন্টের একটা প্রকাশ দেখাতে পারি। তবে, তাঁর উপস্থিতিতে চিৎকার করে বাংলা ভাষার জন্য জীবন দেওয়ারের অঙ্গীকার করার চেয়ে বেশি দরকার ইন্টারনেটে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করা। গ্রামীণ ফোনের সঙ্গে যৌথভাবে এই আয়োজন করছে উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ।
১৯৬০ এর দশকে পাকিস্তানের জাঁদরেল স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খান বাঙ্গলিকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যেন রোমান হরফে বাংলা লেখা হয়। বলাবাহুল্য এই পরামর্শ মেনে নেবার কোন কারণ বাঙ্গালীর ছিল না। ছিলনা বলেই আগের চেয়ে হাজারগুনে বড় করে রবীন্দ্রনাথের জন্ম শতবার্ষিকী পালিত হয়েছে, জন্ম হয়েছে ছায়ানটের এবং শুরু হয়েছে পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণের আয়োজন। আর ’৫২ এর ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’-এর দাবী ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়ে ‘বাংলাভাষার রাষ্ট্র চাই’ আন্দোলনে পরিণত হয়েছে যার চূড়ান্ত বিজয় হয়েছে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বাংলাদেশ নামে বিশ্ব মানচিত্রে একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে যার রাষ্ট্রভাষা হয়েছে বাংলা। তখন থেকেই সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালুর একটা চেস্টা আমাদের রয়েছে, আংশিক সাফল্যসহ। অন্যদিকে মায়ের ভাষার জন্য বাঙ্গালির রক্ত দেওয়ার বিষয়টি স্বীকৃতি পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মাধ্যমে।
এতকিছুর পরও আজ আইয়ুব খানের কথাটা তুলতে হচ্ছে কারণ প্রযুক্তি। সেই ষাটের দশকে দশকে বাংলা ভাষার জন্য আমাদের যে টান ছিল সেটি কি আমরা হারিয়ে ফেলছি? কথাটা আসছে এই জন্য যে, যে কাজটি আইয়ুব খান গায়ের জোরে চাপিয়ে দিতে পারেননি, তার অনেকখানি এখন হয়ে গেছে প্রযুক্তির কল্যানে। মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠাতে কিংবা ইন্টারনেটের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ’বাৎচিত্’ করতে এখন অনেকেই রোমান হরফে অবলীলায় বাংলা লিখেন। কোন ভাবনা চিন্তা ছাড়ায় লেখেন। এই প্রবণতা কেবল আমাদের তরুন প্রজন্মের মধ্যে রয়েছে বলে অনেকই অভিযোগ করে থাকেন তবে সেটি সত্য নয়। আমাদের সরকারী সংস্থাগুলোও এই কাজে যথেষ্ঠ পারঙ্গম। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা প্রতিনিয়ত মুঠোফোনে অনেক সমাজ সচেতনতার বার্তা পাঠায়। তার নমুনা- Vitamin ‘A’ Jukto Tele, Poribarer Pusti mele. Tai Logo Dekhe Vitamin ‘A’ Jukto Tel Kinun – MoI, MoHFW and UNICEF [ ভিটামিন ‘এ’ যুক্ত তেলে, পরিবারের পুষ্ঠি মেলে। তাই লোগো দেখে ভিটামিন ‘এ’ যুক্ত তেল কিনুন – সংস্থার নাম]। এই ফেব্রুয়ারি মাসেও এরকম অনেক বার্তা আমরা সবাই পেয়েছি, আরো হয়তো পাবো। সরকারের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় যখন রোমান হরফে এমন বার্তা পাঠায় তখন মনে হতে পারে বাংলাভাষাতে খুদে বার্তা পাঠানোর কোন পদ্ধতি নেই। মোবাইল ফোনে বা ইন্টারনেটে বাংলাতে ‘বাৎচিত্’ করা যায় না। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে ব্যাপারটি মোটেই সত্য নয়। আমাদের তরুনদের প্রচেষ্টায় এই সকল কারিগরি বাঁধা আমরা অতিক্রম করেছি অনেক আগেই। সেই আশির দশকে যখন মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সাইফুদ্দাহার শহীদ কিংবা মোস্তফা জাব্বার তাদের তরুন বয়সে ছিলেন তখনই তারা প্রথম কাজটি করে দিয়েছেন। এর মধ্যে মোস্তফা জাব্বারের বিজয় সফটওয়্যরটি সেই থেকে প্রবল প্রতাপের সঙ্গে কম্পিউটারে আর ইন্টারনেটে বাংলা লেখার সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। আর ইন্টারনেটে প্রসারের কালে চিকিত্সক-প্রযুক্তিবিদ মেহেদী হাসানের অভ্র সফটওয়্যারটি তরুনদেরকেও তাদের বাংলার প্রতি ভালবাসা প্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছে। কেবল কম্পিউটার বা ইন্টারনেট নয়, বাংলা ভাষাতেই খুদেবার্তা পাঠানো সম্ভব বেশিরভাগ মুঠোফোনে। কিছু পুরাতন মুঠোফোন ছাড়া বেশিরভাগ মুঠোফোনেই বাংলা লেখা এবং পড়া সম্ভব। সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় সাইট ফেসবুকে এখন অনেকেই মুঠোফোনে বাংলাতেই স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। কাজেই কারিগরি ব্যাপারটিকে কেও যদি সামনে আনতে চান তাহলে তাদের জন্য বসু কণার বিজ্ঞানী সত্যেন বসুর সেই আপ্ত বাক্যটি মনে করিয়ে দেওয়া যায় – “যাঁরা বলেন বাংলায় বিজ্ঞান চর্চ্চা (পড়ুন ইন্টারনেটে বিচরণ) সম্ভব নয় তাঁরা হয় বাংলা জানেন না অথবা বিজ্ঞান (পড়ুন আইসিটি) বোঝেন না”।
অথচ আশ্চর্য হলেও সত্য যে, আমাদেরকে নানান সময়ে কম্পিউটারের দোহাই দিয়ে ইংরেজি ভাষাতে নানান কিছু করতে বাধ্য করা হয়। যেমন এখনো অনেক ব্যাংকের হিসাব খুলতে হয় ইংরেজিতে। চেক বইতে গ্রাহকের নামটা ইংরেজিতেই মুদ্রিত থাকে। মোবাইল ফোনের বেলায়ও ব্যাপারটি অনেকখানি সত্য। শুধু তাই নয়, মোবাইল ফোনের আবেদনের সঙ্গে যে শর্তাবলী থাকে সেটিও সম্পূর্ণ ইংরেজিতে ছাপা থাকে।
অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীরবেলায়ও এটি লক্ষ করা যায়। আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে রেডিও, টেলিভিশন, ফোন, রেফ্রিজারেটর কিংবা সেরকম কোন কিছুর ব্যবহারকারীর ম্যানুয়ালটি বাংলাতে লেখা এমনটা দেখি নাই। কাজে এটি ধরে নেওয়া যায যে, যন্ত্রের ম্যানুয়াল না-পড়ার যে অভ্যাস আমাদের সংস্কৃতিতে তৈরি হয়েছে সেটির জন্য ভিন্ন ভাষার নির্দেশিকাগুলো অনেকাংশে দায়ী। অথচ ইলেকট্রনিক পন্যের বাজার হিসাবে বাংলাদেশ যথেষ্ট বড়। দেশে প্রতিমাসে যে পরিমাণ মোবাইল ফোনসেট বিক্রি হয় পৃথিবীর অনেক দেশের জনসংখ্যা তার চেয়ে অনেক কম। কাজে আমার বিশ্বাস, সকল নির্মাতাদের একটি মানাযোগ্য নির্দেশনা দিলেই তারা সেই নির্দেশ মানতে কার্পন্য করবে না।
তবে, তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে ভাষাতে বাঁচিয়ে রাখতে কেবল যান্ত্রিক সমস্যা দূর করাটাই যথেস্ট নয়। আমাদের দেশের প্রায় চারকোটি লোক ইন্টারনেটের ব্যবহারকারী! বিশ্বের কয়টা দেশে মোট চারকোটি লোক আছে? মুশকিল হচ্ছে এদের জন্য ইন্টারনেটে আমাদের মাতৃভাষায় কন্টেন্ট খুবই নগন্য। ফলে এদের অনেকেই (উইথ অল রেসপেক্ট) ফেসবুকে ঘুরে বেড়ায়, ওখানে ওখানে লাইক দেয় (এমনকি মৃত্যুর খবরেও) আর ছবি দেখে। ইন্টারনটে খুবই গণতান্ত্রিক। কাজে যার যা ইচ্ছে করুক! তবে, আমার দু:খ এদের বড় অংশই শিক্ষার্থী। ফেসবুক বাংলাদেশের এককোটিরও বেশি ব্যবহারকারীর মধ্যে ৮০ ভাগেরই বয়স এখনো ২৫ পেরোয়নি। তারমানে শেখার আর শেখানোর জগতেই আছে। তাদের জন্য ইন্টারনেটে বাংলা কন্টেন্ট বাড়ানোর সবচেয়ে বড় তরিকা হল মুক্ত বিশ্বকোষ – উইকিপিডিয়া। যার কথা শুরুতে লিখেছি। সেই উউকিপিডিয়াকে সমৃদ্ধ করার কাজটা ঐ তরুনরাই করতে পারে।
দ্বিতীয় যে কাজটি করা যায় সেটি হল বিশ্বের নানান ভাষা থেকে সৃমদ্ধ কন্টেন্টকে বাংলা ভাষাতে রুপান্তর করা। এই কাজটিও সহজে করা যেতে পারে যদি যান্ত্রিক অনুবাদ করা যায়। এর একটি উদাহরণ হল গুগল অনুবাদ । মুশ্কিল হচ্ছে এই জনপ্রিয় অনুবাদকের অনুবাদের মান মোটেই ভাল নয়। এমনকি সময়ে সময়ে সেটি কাজ চালানোর মতোও নয়। তবে, অন্যান্য যান্ত্রিক অনুবাদকের চেয়ে এই অনুবাদকটিকে ঠিক করে ফেলা। এটিও সবাই মিলে করা যায়। এবং কাজটি কঠিনও নয়।
প্রথমে আমাদের বোঝা দরকার এই অনুবাদকটি কীভাবে কাজ করে। এটি একটি স্ট্যাটিসস্টক্যাল ইঞ্জিন। মানে হল এর ডেটাবেসে প্রচুর ইংরেজি বা অন্যভাষার শব্দের বাংলা প্রকৃত শব্দটি থাকতে হবে। এখানে আমাদের বড় ঘাটতি। আবার দেখা যাচ্ছে ঐ ডেটাবেসে অনেক ভুল বাংলা শব্দ, শব্দ সমষ্টি আছে। এখন তাহলে আমাদের দুইটা কাজ। একটা হল শব্দভান্ডারে নতুন শব্দ, শব্দ সমষ্টি যোগ করা আর অন্যটি হল ভুল শব্দগুলোকে বাতিল করা। ঠিক এই কাজটি শুরু করেছে গুগল ডেভেলপার গ্রুপ – বাংলা (GDG Bangla)। তারা একটা উদ্যোগ নিয়েছে এই ফ্রেব্রুয়ারি মাসে দুই লক্ষ নতুন শব্দ যোগ করার। আপনিও এতে অংশ নিতে পারেন।এজন্য https://translate.google.com/community এই ঠিকানায় গিয়ে কাজ শুরু করে দিতে পারেন। আপনার জি-মেইল একাউন্ট দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে তারপর আপনি নতুন শব্দ যোগ করা এবং যোগ করা শব্দের সঠিকতা যাচাই-এর যে কোনটি করতে পারেন। (জিডিজি বাংলার অন্যতম ম্যানেজার বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এই নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টিউটোরিয়াল লিখেছেন। আগ্রহীরা সেটি এখানে দেখে নিতে পারেন। ) এই কাজটি কিন্তু চলতে ফিরতেও করা যায়। পথ চলতে চলতে, কাজের ফাঁকে ১/২টি মব্দ যোগ করা কিন্তু মোটেই কটিন কাজ নয়। আমাদের অনেকেই এখন এই কাজে যুক্ত হয়েছেন। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক এস এম আশরাফুল ইসলাম। তিনিও তাঁর কাজের ফাঁকে এই কাজে মন দিয়েছেন।
আপনিই বা বসে থাকবেন কেন?

তবে, কেবল এই ফেব্রুয়ারি মাসে নয়। এই দুইট কাজ আমাদেরকে করতে হবে জীবনব্যাপী। কারণ ভাষাকে টিকিয়ে রাখার জন্যই এখন আমাদের মাতৃভাষাতে সক্রিয় থাকতে হবে ইন্টারনেটে। তৈরি করতে হবে মুক্ত কন্টেন্টের একটি বিশাল ভান্ডার। আর বিশ্বের নানান ভাষার আকর জানার জন্য সমৃদ্ধ করতে হবে গুগর ট্রান্সলেশনের টুলগুলোকে।

চলুন আমরা সবাই মিলে যুক্ত হয় এই আনন্দময় কাজে।

সবার জীবন পাই-এর মত সুন্দর হোক।

 

(এই লেখার একটি সংস্করণ প্রকাশ হয়েছে মাসিক সি-নিউজের ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সংখ্যাতে)

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version