অনুপ্রেরণার গল্প-১ : বাঁ হাতেই বিশ্বজয়

Spread the love

১৯৩৮ সালে কেরোলি টাকাসের বয়স ছিল ২৮ বছর। হাঙ্গেরীর সেনাবাহিনীতে তার মতো ২৫ মিটার ফায়ার পিস্তল স্যুটার কেউ ছিল না। প্রায় সব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার তাঁর দখলে ছিল। ধারণা করা হচ্ছিল ১৯৪০ সালের অলিম্পিক সোনার পদক তিনিই পাবেন।

কিন্তু একদিন সকালে তাঁর ডান হাতে আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে তাঁর ডান হাতে বিস্ফোরিত হলো একটি গ্রেনেড। তাঁর স্যুটিং হাতের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর অলিম্পিক স্বপ্নও চূর্ণ হয়ে গেল।

একমাস হাসপাতালে কাটানোর পর কেরলি টাকাসের বাকী জীবন করুনার পাত্র হয়ে কাটাবেন না বলেই ঠিক করলেন। নিজের স্বপ্নকে চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন। তার ইচ্ছে আছে, আগ্রহ আর নিষ্ঠাও আছে। এবং তিনি আবিস্কার করলেন তাঁর একটি সম্পূর্ণ সুস্থ হাতও আছে। কাজেই তিনি শুরু করলেন বামহাতে পিস্তল চালানো। তবে, সেটা কাউকে জানালেন না। গোপনে নিজের কাজ করলেন।

তিনি জানেন জীবনে কোন কিছু পেতে হলে নিষ্ঠার সঙ্গে, এগাগ্রতার সঙ্গে নিবিড় অনুশীলনের দরকার। কোন পরিসংখ্যানই তার পক্ষে ছিল না। কিন্তু পরিসংখ্যানের পেছনে না দৌড়ে কেরোলি সম্ভাবনার পেছনেই সময় দিলেন। তাঁর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ছিল বাঁ হাতকে সেরা বানানোর।

১৯৩৯ সালের বসন্তে কেরোলি হাজির হলেন হাঙ্গেরির জাতীয় পিস্তল স্যুটিং চ্যাম্পিয়নশীপের আসরে। অন্যরা এসে তাকে সমবেদনা জানালেন। অনেকেই খুশী হলেন যে, কেরোলি তাদের দেখতে এসেছে। কিন্তু তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল এক বিরাট বিস্ময়। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা বাঁহাতওয়ালাকে নিজেদের কাতারে দেখতে পেল এবং অবশেষ তাঁর কাছেই হার মানলো!

১৯৪০ ও ১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য অলিম্পিক হলো না। কিন্তু কেরোলি তাঁর প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখলেন এবং ১৯৪৮ সালের লন্ডন অলিম্পিকের জন্য কোয়ালিফাই করলেন।

রেজাল্ট?

৩৮ বছর বয়সী কেরোলি  বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে, নতুন রেকর্ড করে অলিম্পিক সোনা জিতলেন!!

চার বছর পর, ১৯৫২ সালের হেলসিংকি অলিম্পিকেও তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন।

ইতিহাসে তিনিই ২৫ মিটার রেপিড ফায়ার পিস্তল ইভেন্টে পরপর দুই অলিম্পিকে স্বর্ণপদক পাওয়া প্রথম ক্রীড়াবিদ।

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version