ইনোসেন্টের শরবত-৪: বাড়ার যন্ত্রণা সামাল দেওয়া
আউটসোর্স না নিজে করা – ডু ইট ইয়োরসেলফ?
কিন্তু অচিরেই আমরা বুঝতে পারলাম কোন একটা প্ল্যান্টের সঙ্গে যুথবদ্ধ হওয়াটা নানা কারণেই উত্তম। প্রথমত নিজেদের প্ল্যান্ট আর বোতলজাতকরণের কারখানা মানেই মিলিয়ন পাউন্ডের ব্যাপার এবং শুরু থেকে আমাদের ওভারহেড হয়ে যাবে বেশি। শুধু ওভারহেড না একটা কারখানা চালানোর জন্য ‘মাথাব্যথা’ সেটাও প্রথমদিন থেকেই নিতে হবে। দ্বিতীয়—একটি কারখানা চালানোর জন্য অনেক ধরনের দক্ষতার দরকার যার কোনটি আমাদের নাই। তৃতীয়ত—নিজেদের কারখানা না থাকলে সেটা চালানোর মাথাব্যথাকে তখন ব্র্যান্ড তৈরি আর শরবতের মানোন্নয়নে ব্যয় করা যায়।
চতুর্থত, এর মাধ্যমে গ্রাহকদের কোন কোন চাহিদাপূরণে আমরা বাড়তি মনোযোগ দিতে পারি। উদাহরণ হিসেবে একটি ঘটনা বলা যায়। আমরা যখন ১ লিটারের শরবত বাজারজাত করতে শুরু করলাম তখন ড্রিংকাররা বললো তারা বোতলের পরিবর্তে কার্টন চায়। যদি আমাদের নিজেদেরই কারখানা হত, তাহলে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে আমাদের একটা কার্টন সিস্টেম চালু করতে হত। অথবা গ্রাহকদের অপছন্দ স্বত্ত্বেও তাকে বোতলে করেই শরবত দেওয়া লাগতো। কিন্তু যেহেতু আমরা বোতলজাতকরণ অন্যদের দিয়ে করাচ্ছি, কাজে আমরা একজনকে খুঁজে নিলাম যে কীনা আমাদের কার্টনের কাজটা করে দিল। উত্পাদনকারীদের সঙ্গে জোট থাকার আমরা নতুন বিনিয়োগ ছাড়াই আমাদের ব্যবসা বড় করতে পেরেছি। নিজেদের কারখানা হলে আমাদের নতুন অনেক বিনিয়োগ লাগতো।
তবে, আমরা কিন্তু সবকিছু আউটসোর্স করে দেইনি। কিছু কিছু আমাদের নিজেদের কাছে রেখেছি, ইচ্ছে করেই। যেমন আমাদের রেসিপি উন্নয়নের জন্য গবেষণা এবং ফল সংগ্রহ করা। শেষ বিচারে ইনোসেন্ট কিন্তু ফলের শরবত। কাজে ভাল ফল মানে ভাল শরবত। আর ফল থেকে শরবত বানানোর নিত্য নতুন গবেষণাও আমরা নিজেদের হাতে রেখেছি। এই কারণে এই R&D-র পেছনে আমরা প্রচুর টাকাও বিনিয়োগ করেছি।
প্রত্যেক সিজন শেষে ফল, ফলের সরবরাহ, ফলের উত্পাদন নিয়ে আমাদের জানাশোনা জ্যামিতিক হারে বেড়েছে। আর এই এক্সপার্টিজ যেহেতু ইন-হাউস কাজে আমরা নিশ্চয়তা দিতে পারতাম যে আমাদের ফলের শরবত অসাধারণ যদিও তা বোতলজাত হতো অন্য প্রতিষ্ঠানে।
সাদামাটাভাবে বললে বলা যায়, আমরা ইন-হাউসে সেটিতেই সবচেয়ে বেশি মেধা, শ্রম ও টাকা ঢেলেছি যা আমাদের ব্যবসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, অন্যদিকে, যে কাজটা করার জন্য মেশিনারি এবং ক্যাপিটাল দরকার সেটা আমরা বাইরে থেকে করে নিয়েছি। এটি আমাদের বেলায় খুব কার্যকরী হয়েছে। তোমার ব্যবসার বেলায়ও তুমি এই কাজটা করতে পারো। তোমার স্ট্রেংথটা কী সেটা বের কর। সেখানেই বেশি শ্রম দাও। আর পুরো ব্যবসায় অন্যান্য জায়গা যেগুলো অন্যরা তোমার জন্য করে দিতে পারে, সেগুলো তাদের দিয়ে করিয়ে নাও। ভ্যালু-ক্রিয়েটিং অংশটা তোমার কাছে রাখা আর পার্টনার প্রতিষ্ঠানকে তার কাজটা করতে দাও। এতে সবারই লাভ।
কম কর, ভাল কর (ডু লেস, বেটার)
তবে, সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের কিন্তু বেশি ঝামেলা হয়নি। কারণ আমাদের মতো কীপ দি মেইন থিং, মেইন থিং। কাজে, যেহেতু স্মুথিই আমাদের জন্য প্রাণ ভোমরা কাজে আমরা আগে সেটাই করবো। ফলে, আমরা নতুন দেশে স্মুথি নিয়ে গেলাম। কারণ আমাদের শরবত নিজেই একটা ব্রান্ড। সেটি একবার দাঁড়িয়ে গেলে, অন্য দেশে, তখন অন্য কিছুও করা যাবে।
তা নতুন দেশ? কোথায়? ইউরোপ না আমেরিকা।
৩৫০ মিলিয়ন লোকের আমেরিকা একটি বড় বাজার। সবচেয়ে বড় কথা ওরা সবাই এক ভাষাতে কথা বলে ও সব জায়গাতে একটাই মুদ্রা। ঠিক এই পরিমাণ বাজার ধরতে হলে ইউরোপ গোটা ১৫ দেশের দরকার হবে। এগুলোর প্রত্যেকটায় আলাদা ভাষা, আলাদা আইন এমনকী কোন কোন দেশে আলাদা মুদ্রা। কিন্তু, আমেরিকার বেলাতে আমাদের নতন করে সবকিছু করতে হবে কারণ যুক্তরাজ্যের শরবত তো আমেরিকাতে পাঠানো যাবে না। অন্যদিকে, লন্ডন থেকে মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ১৫টি দেশে চলে যাওয়া যায়। তার মানে, সব মিলিয়ে ইউরোপ অনেক ভাল।
তবে, ইউরোপের বেলায়ও আমাদের নানান জিনিস ট্রাই করতে হয়েছে, নানানভাবে। এখন আমরা জানি, যেখানে বাজার অপেক্ষাকৃত ছোট যেমন বেলজিয়াম বা ফিনল্যান্ড, সেখানে স্থানীয় কারো সঙ্গে পার্টনারশীপ করাটা হল সর্বোত্তম বুদ্ধি। তার মানে, ওখানে ডিস্ট্রিবিউশন চেইনের খরচ নিজেদের ঘাড়ে না নিয়েও আমরা স্মুথি বিক্রি করতে পারছি। অন্যদিকে, ফ্রান্স আর জার্মানির মত বড় মার্কেটে আমরা আমাদের নিজস্ব টীম তৈরি করেছি। আর যদি অন্য সব ফ্যাক্টর সমান হয়, তাহলে আমরা নিজেদের টিমের প্রতি বারাস। যখন আমরা কোন এলাকাতে নিজেদের টিম বানাতে চাই, তখন প্রথমে একজন টিম লিডার খুঁজে বের করি। আমরা এমন একজনকে খুঁজি যার ব্যবসায় অভিজ্ঞতা আছে আবার উদ্যোক্তারা জিলও আছে। তারপর আমরা তাকে সাহায্য করি একটি ছোট টীম বানাতে। সেই টিমে আমরা লন্ডনে আমাদের ফ্রুই টাওয়ার থেকেও কাউকে কাউকে পাঠাই দেই। এর ফলে নতুন টীমের ইনোসেন্টের ইনসাইড আর স্থানীয় আউটসাইড দুটিই থাকে।
তবে, ইনোসেন্টের টীম থাকুক যা আমরা কোন পার্টনারের সঙ্গে কাজ করি, ব্যান্ডিং এবং শরবত পৌছানোর তরিকা কিন্তু একই থাকে। সাধারণত আমরা একটা শহরে (রাজধানী) প্রথম শুরু করি। প্রথম কাজ হয় শহরের ভাল ভল, গুরুত্বপূর্ন পানীয়র দোকানে, স্টোরে যাতে ইনোসেন্ট থাকে তার নিশ্চয়তা। এতে কিছু বিক্রিও হয়। এরপর আমরা কিছু পিআর করি, যেমন আমাদের ঘাস-সজ্জিত গাড়ি রাস্তাতে ঘোরাফেরা করে। যখন বেশি লোক ইনোসেন্টের নাম জানে তখন আমরা বেশি জায়গাতে ইনোসেন্ট রাখার চেষ্টা করি। সুপার মার্কটেগুলো হয় আমাদর সেই সময়কার টার্গেট। যখন একটা মোটামুটি চলনসই বিতরণ-লাইন তৈরি হয়ে যায়, তখন আমরা বিজ্ঞাপনের পেছনে অর্থ খরচ করি। যদি এটা কাজে লাগে তাহলে আমরা সারা দেশে প্রথমে ডিস্ট্রিবিউশন চেইন বানাই। তারপর এ্যাডের পেছনে টাকা দেই।
শুনতে খুব সহজ শোনালেও ওই জায়গায় যেতে আমাদের প্রচুর সময়, কষ্ট ও ভল করতে হয়েছে। তারপরও ইউরোপ যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল সঠিক। সেখানে বিক্রি ২ মিলিয়ন ইউরো থেকে ৬ মিলিয়ন হয়ে তিন বছরে মাত্র ১৬ মিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে!!!
গৌরি সেনতো নাই। কাজে টাকার হিসাব মাথায় রাখো
ফান্ড রাইজিংয়ে আমাদের একটা লেসন লার্ন হল। বেশির ভাগ ইনভেস্টর টাকার সঙ্গে সঙ্গে শর্তও দেয়। একজন তো বললো টাকা দেবে কিন্তু তার বদলে আমাদের সব দাতব্য কাজ বন্ধ করে দিতে হবে। কেও কেও চালকের আসন চেয়েছে। কিন্তু কোকের টাকা ছিল শর্তহীন। কাজে নিশ্চিন্তে আমরা আমাদের লক্ষাভিসারী যাত্রা চালিয়ে যেতে পারছি।
পরের পর্ব—নো হোয়াট ইউ কেয়ার এবাউট
[ব্রিটিশ স্মুথি ইনোসেন্টের অভিজ্ঞতা নিয়ে এর তিন উদ্যোক্তার লেখা বই – এ বুক এবাউট ইনোসেন্ট। পড়তে শুরু করেছি কয়েকদিন আগে। সেই সঙ্গে মূল অংশগুলো শেয়ার করছি সবার সঙ্গে, আমার মত করে। বইটি উত্তম পুরুষে লেখা এবং আমিও সে স্টাইল নিয়েছি। বেশিরভাগ জায়গা ওদের ভাষায় তুলে দিয়েছি। কতক ক্ষেত্রে আমার কিছু সংযোগ আছে মাত্র]।
4 Replies to “ইনোসেন্টের শরবত-৪: বাড়ার যন্ত্রণা সামাল দেওয়া”
Leave a Reply Cancel reply
You must be logged in to post a comment.
I can’t get the links of previous episodes…?
মেধা শ্রম এবং নিষ্ঠার সাথে একাগ্রতা যুক্ত থাকলে সফলতা আসবে তখনই যখন সঠিক সময়ে যোগ্যদের দিয়ে কাংক্ষিত কাজটি করানো যায়। সুস্পষ্ট তথ্য গত বাজার ধারনা ব্যাবসার ধরণ বিনিয়োগ ও সম্প্রসারণ কল্পে মেধার সবচেয়ে কাছের সহযোগ, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে। ব্যাবসায় কমিটমেন্ট সবচেয়ে বড় পুঁজি তাই কথা দেয়া-নেয়ার ক্ষেত্রে আনেক কৌশলি হতে হয়।
তোমার স্ট্রেংথটা কী সেটা বের কর। সেখানেই বেশি শ্রম দাও। আর পুরো ব্যবসায় অন্যান্য জায়গা যেগুলো অন্যরা তোমার জন্য করে দিতে পারে, সেগুলো তাদের দিয়ে করিয়ে নাও। ভ্যালু-ক্রিয়েটিং অংশটা তোমার কাছে রাখা আর পার্টনার প্রতিষ্ঠানকে তার কাজটা করতে দাও। এতে সবারই লাভ।