ইনোসেন্টের শরবত-২: স্টার্ট স্মল, বাট ডু স্টার্ট
আগের পর্ব : ইনোসেন্টের শরবত-১: হোয়াট ইজ দি বিগ আইডিয়া
কিন্তু, পৃথিবীর সব ব্যবসা কিন্তু ছোট থেকে শুরু হয়েছে। M&S শুরু হয়েছে বাজারের একটা ছোট দোকান থেকে, হাজার কোটি ডলারের Youtube-এর শুরু একটি পিজার দোকানের ওপরতলায়, দুই বন্ধুর মাথা থেকে। কাজেই, আজকের এই প্রতিযোগিতামূলক দুনিয়ায় ছোট থেকেও অনেক বড় হওয়া সম্ভব।
আমাদের উপদেশ সহজ—ছোট করে শুরু কর, কিন্তু শুরু তো কর। নিজের চারপাশের ভয় এবং জড়তা দূর করার এর চেয়ে ভালো কোনো রাস্তা নেই। একবার শুরু করলে দেখবে, কোথা থেকে জানি তুমি জোর পাচ্ছো নানান কাজে।
আমরাও ছোট আকারে শুরু করেছিলাম। ১৯৯৮ সালে একটি সংগীত উত্সবে আমরা প্রথম আমাদের স্মুথি বিক্রি করি। ছোট একটা স্টল থেকে শরবত বিক্রি করাটা কিন্তু আমাদের বড় ধারণা নয়। আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে আমাদের একটা কোম্পানি থাকবে, আমরা বোতলে করে স্মুথি সরবরাহ করবো, সারা দেশের বিভিন্ন দোকানে সেটি বিক্রি হবে। কিন্তু আমরা জানতাম না কেমন করে সেটি করতে হবে। সে সময় এই স্বপ্ন আমাদের ‘ধরাছোয়ার বাইরে’ মনে হতো। সন্ধ্যাবেলাতে বসে বসে আমাদের বিজনেস প্ল্যান বানানোতে আমরা প্রচুর সময় দিয়েছি। কিন্তু, সেগুলো চাকরি ছাড়ার ব্যাপারে আমাদের কোনো আত্মবিশ্বাস জোগাতে পারিনি।
বিশ্বাসের অভাব কেন ছিল? কারণ আমরা জানতাম না মানুষ কেমন করে আমাদেরকে, আমাদের স্মুথিকে গ্রহণ করবে। বিশেষ করে তারা কি তাদের কষ্টার্জিত আয় দিয়ে আমাদের শরবত্ কিনবে?
আমরা নিজেরা হয়তো এমন শরবত্ কিনবো, আমরা বানালে বন্ধুবান্ধবরাও হয়তো কিনবে। কিনবে এই থেকে নিজেদের চাকরি চাড়ার মত যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস আমরা পেলাম না।
জ্যাজ অন দি গ্রিন
বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার পরও আমরা সংগীতের প্রতি আমাদের ভালবাসা অব্যাহত রেখেছি। পশ্চিম লন্ডনের পার্সন গ্রিন নামে একটি খোলা জায়গার পাশে আমরা থাকতাম। সেখানে প্রতি বছর আগস্ট মাসে আমরা একটি ছোট সংগীত উত্সবের আয়োজন করতাম। আইডিয়া ছিল আগ্রহী সম্প্রদায়কে এক জায়গায় জড়ো করে গান শোনার ব্যবস্থা করা। অনুষ্ঠানের নাম দেওয়া হয় ‘জ্যাজ অন দ্যা গ্রিন’ কারণ আমাদের কেবল জ্যাজ সংগীতের লাইসেন্স ছিল। অনুষ্ঠানটি ছিল বিনামূল্যের তবে সেখানে দাতব্য কাজের জন্য ফান্ড রাইজ করা হতো। প্রথম বছরেই ৫০০০ লোক জড়ো হয়েছিল!
আমাদের স্মুথির ট্রায়ালের জন্য এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে? আমরা ঠিক করলাম, ‘জ্যাজ অন দি গ্রিনে’ আমাদের স্মুথি নিয়ে যাব।
সে সময় ব্যারনস কোর্টের একটি ভাড়া বাসাতে আমরা থাকতাম। সেটির রান্নাঘর ছিল আমাদের স্মুথি বানানোর কারখানা। কিন্তু জ্যাজের জন্য আমাদের তো হাজার খানেক বোতল দরকার। ভাগ্য গুণে এবং আশপাশে খোঁজ নিয়ে আমরা ৮০ বছরের কৃষক জ্যাফের খবর পেলাম। জেফ হল গাজর-পোকা। জেফ গাজর খায়, গাজর গায়, গাজর দিয়ে শরবত বানাতে ভালোবাসে। তার নিজেরই গাজর থেকে জুস বানানোর যন্ত্র রয়েছে।
জেফ প্রতিদিন সকালে নটিংহ্যামশায়ারে তার গাজর বাগানে গিয়ে গাজর তুলে, সেগুলোর জুস বানিয়ে লন্ডনের কিছু দোকানে সরবরাহ করে। প্রতিদিন তার প্রায় ৬ ঘণ্টা লাগতো। ক্রেজি। কিন্তু আমাদের পছন্দ।
জেফ আমাদের চেয়ে বড় ৫০ বছরের বড় হলেও আমাদের মত বিশ্বাস করতো খাবার অবশ্যই প্রাকৃতিক হতে হবে।
আমরা তাকে বুঝাতে সক্ষম হলাম এবং প্রায় তার কাছ থেকে আমাদের প্রথম ১০০০ বোতল স্মুথি জোগাড় করলাম। গাজর আর স্মুতি বানানোটা তার, কিন্তু আমাদের রেসিপি অনুসারে।
সে সময় আমাদের কোনো নাম বা প্যাকেজিং ছিল না। রিচ ও অ্যান্ডি নামের দুজন সৃজনশীল লোক আমাদের জন্য ফ্লায়ার তৈরি করে দিল আর ওরা আমাদের ডেজার্ডের নাম ঠিক করলো ‘ফাস্ট ট্র্যাকটর’! তারা লেভেল বানিয়ে দিল।
লোকেরা আমাদের স্মুথি কেমন মনে করলো তা বোঝার জন্য আমরা দুই পৃষ্ঠায় একটা জরিপ প্রশ্ন তৈরি করলাম। যদিও আমাদের মনে হচ্ছিল সংগীত উত্সবে এসে লোকে কেন আমাদের প্রশ্নের জবাব দেবে? সব শুনে রিচ এন্ড এন্ডি জানতে চাইলো—তোমরা কি জানতে চাচ্ছো না যে, স্মুথি এদের পছন্দ হয়েছে কি না?
ওরা বললো একটা বড় সাইনেজ লাগাও, যেখানে লেখা থাকবে—‘এই স্মুথি বানানোর জন্য আমরা কি চাকরি ছেড়ে দেব?’ আর স্টলের পাশে দুইটি বিন রাখো। একটার ওপর লেখা থাকবে, Yes অন্যটির গায়ে No। লোকেরা তাদের স্মুথির খালি বোতল Yes/No তে ফেলে তোমাদের প্রশ্নের উত্তর দেবে। তো, আমরা সেটিই করলাম। একটা স্টল দিলাম। স্টল বলতে, কয়েকটা বড় বড় বালতিতে বরফ রাখা যাতে স্মুথি ঠান্ডা থাকে। স্টলের ওপর সেই সাইনেজ। আর আমাদের বিন ভোটের টেকনোলজি।
সপ্তাহান্তে আমাদের সব স্মুতি বিক্রি হয়ে গেল। এবং YES বিনে পাওয়া গেল বেশির ভাগ বোতল। No বিনেও ছিল কয়েকটা, সম্ভবত আমাদের মায়েরা! তারা আমাদের চাকরি ছাড়ার ব্যাপারে উদগ্রীব ছিলেন। যেভাবে হোক, আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেল—বেঁচে থাকার জন্য আমরা স্মুথি বানাবো। ‘দ্যা বিন টেস্ট’। আমাদের প্রথম মাইলফলক। প্রায় বিনা খরচে আমরা একটা করেছি।
If was that all important first step-we had got started.
=====
হেড হলে চাকরিতে ফিরে যাবো
জ্যাজ অন দি গ্রিনের স্মুথি বিক্রির পর রোববার সন্ধ্যায় আমরা একত্রিত হয়েছি। যদিও YES বিন ফুল কিন্তু চাকরি ছাড়ার ব্যাপারে আমরা সবাই নার্ভাস হয়ে পড়েছি। আমাদের কি সত্যি সত্যি চাকরি ছাড়ার দরকার আছে? আমরা কি পারবো?
আমরা পয়সাটি রেখে দেই এবং অচিরেই এটির নাম হয় ‘দ্যা চেয়ারম্যান’। এটি আমরা আমাদের অফিসের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখি। প্রথম কয়েক বছর যখনই তিনজন কোনো বিষয়ে একমত হতে পবরতাম না, আমরা চেয়ারম্যানের শরণাপন্ন হতাম, সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য।
=========
ছোট কিন্তু সস্তাও
দশ বছর পরেও আমরা কিন্তু আমাদের ‘স্টার্ট স্মল’ থিউরি অনুসরণ করে চলেছি। নতুন কোন পণ্য হোক, নতুন বাজারে যাওয়া হোক কিংবা কোন নতুন মার্কেটিং আইডিয়া হোক – আমরা সবসময় নিজেদর মত করে একটা ছোট টেস্ট করে নিয়েছি। পারতপক্ষে টেস্টিং ফেজে আমরা ব্যাংককে ঘাটাইনি। যে ধারণাটি এরকম টেস্টে পাস করে, মনে হয় কাজ করবে, তার পেছনে তখন আমরা সর্বশক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ি, বিনিয়োগ করি।
যুক্তরাজ্যের বাইরে ইনোসন্টেকে নেওয়ার বেলায়ও আমরা এই পদ্ধতি অনুসরণ করেছি। শুরু থেকে আমাদের মিশন ছিল বেশি মানুষের কাছে আমাদের স্বাস্থ্যকর পানীয় পৌঁছে দেওয়া। কাজে আন্তর্জাতিক বাজারের কথা আমরা সবসময় ভেবেছি। কিন্তু বিদেশের মাটিতে কীকরে একটি ব্যবসা পরিচালনা করতে হয় সে সম্পর্কে আমাদের বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না। এমনকী আমাদের তিনজনের কেও অনেকগুলো ভাষা জানি না। কিন্তু তাই বলে সুযোগ ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে আমরা অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে একাডেমিক বা মার্কেট রিসার্চের পেছনে খুব একটা সময় দেইনি। বরং আমরা ভাবলাম আমর একটা ‘ছোট’ চেস্টা করি।
কাজে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে ইনোসন্টের যাত্রা শুরু হল – এক ব্যক্তি, এক দেশ এবং কয়েকটি দোকানে বিক্রি করার চেষ্টার মাধ্যমে। তিনটি কারণ আমরা ডাবলিনকে বেঁছে নিয়েছি
- ভাষা সমস্যা নেই,
- কাছে তাই সহজে মনিটরিং করা যাবে, এবং
- একজন চমৎকার লোক – ম্যাট হেনসি।
ম্যাট শুরুতে তার বাসার আশেপাশের কয়েকটা দোকান আর ক্যাফেতে ইনোসেন্ট দেওয়া শুরু করে। মার্কেটিং বলতে ম্যাটের হাসি আর কিছু কিছু ফ্রি নমুনা। কিছুদিন পর ম্যাটের সঙ্গে যোগ দিল পেটে ওডেন। ওডেনের বাড়িতে হল ইনোসন্টের মজুত। এর মধ্যে টুকটুক করে কয়েকটা চেইনের সঙ্গে চুক্তি হল, কিছু লোক আগ্রহ দেখাতে শুরু করল। আমরা তখন আইরিশ মার্কেটে বিনিয়োগ করতে শুরু করলাম। কারণ আমাদের পরীক্ষায় আমরা পাস করেছি। এখনতো আয়ারল্যান্ড আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার।
একই পদ্ধতি আমরা ফ্রান্সের বেলায়ও ব্যবহার করেছি। ভাষার জন্য শুরুতে একটা জটিলতা হলেও (আমার ব্লগ অনেক ছোটরাও পড়ে বলে সেই জটিলতার কথা এখানে লেখা যাচ্ছে না) ভাল কমিশনের বদৌলতে আমাদের একমাত্র প্রতিনিধি কিছু দোকানদারকে রাজী করিয়ে ফেলে। ফলে, কোন কোন দোকানের সেলফে রাখা হল ইনোসেন্ট। এবং কিছুদিনের মধ্যে গ্রাহকরা তাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করতে শুরু করে। ব্যাস আমাদের ফরাসী ব্যবসা বাড়তে শুরু করলো।
এই মডেলটি আমাদের জন্য খুবই কার্যকরী- ছোট আকারে শুরু করা, কিছু একটা কাজ করে সেটা প্রমাণ করা এবং সফলতার পেছনে বিনিয়োগ করা।
সংক্ষেপে, আজ যারা সফল এবং যারা অসফল বা ব্যর্থ তাদের মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য হল যারা সফল হয়েছেন তারা শুরু করেছেন এবং সেটি চালিয়ে নিয়েছেন। এমনও হতে পারে যে, তুমি হয়তো বিশ্বের সেরা আইডিয়া নিয়ে বসে আছো। কিন্তু সেটা থেকে তুমি তোমার শরবতের টাকাটা জোগাড় করতে পারবে না যদি তুমি বসেই থাকো। একথা ঠিক যে, একটি পরিপক্ক ধারণা পেতে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়, সময় দিতে হয় কিন্তু একবার শুরু করে দিলেই কেবল সফল হওয়ার তাড়না তোমাকে তাড়িয়ে বেড়াবে।
কাজেই সকল সফল ব্যবসার মূল মন্ত্র একটাই- শুরু করা।
ছোট হোক, তবুও শুরু কর।
পরের পর্ব – কীপ অন কিপিং অন। (কবে লিখবো, আল্লাহ জানেন)
[ব্রিটিশ স্মুথি ইনোসেন্টের অভিজ্ঞতা নিয়ে এর তিন উদ্যোক্তার লেখা বই – এ বুক এবাইট ইনোসেন্ট। পড়তে শুরু করেছি কয়েকদিন আগে। সেই সঙ্গে মূল অংশগুলো শেয়ার করছি সবার সঙ্গে, আমার মত করে। বইটি উত্তম পুরুষে লেখা এবং আমিও সে স্টাইল নিয়েছি। বেশিরভাগ জায়গা ওদের ভাষায় তুলে দিয়েছি। কতক ক্ষেত্রে আমার কিছু সংযোগ আছে মাত্র]।
7 Replies to “ইনোসেন্টের শরবত-২: স্টার্ট স্মল, বাট ডু স্টার্ট”
Leave a Reply Cancel reply
You must be logged in to post a comment.
পরবর্তি পর্বের অপেক্ষায় আছি …
Thanks likhata kosto kore onubad kore share korar jonno. Onek boro asha niye choto theke shuru kora, majhe poth hariye feli, kintu jokhoni valo kichu likha pai abar shahosh khuje pai.
Thanks again.
খুব ভালো এবং অনুপ্রেরণামূলক।
ছোট করে শুরু করলে কেন বড় চিন্তা করতে পারবো না – এটাই আমরা অনেক সময় বুঝতে চাই না।
অনেক অনেক ভালো লাগলো লেখাটি , অসাধারণ!!!!
munir vi i am inspired.
waiting for next