বরফ পানি ঢালার শিক্ষা
আমার জন্মদিনের দিন মানে ২৯ জুলাই (২০১৪) এএলএস এসোসিয়েশন এই বরফ পানি ঢালা প্রচারণাটি শুরু করে। এটি আরো বিস্তৃতভাবে এলএস বরফ পানি ঢালার চ্যালেঞ্জ হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে। নিয়মটা সোজা। এখানে একজন তিনজনকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। চ্যালেঞ্জ করা হলে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যে চ্যালেঞ্জীকে হয় নিজের মাথায় বরফ পানি ঢালতে হবে অথবা এএলএস চ্যারিটিতে ১০০ ডলার দান করতে হবে। একইভাবে তিনি পরে আরো তিনজনকে এই চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে।
উইপরোর অভিনাশ তার লিংকইন একাউন্টে জানিয়েছেন ৭ দিনে এই বিষয়ে টুইট হয়েছ মাত্র এক লক্ষ ৭৬ হাজার বার! এএলএসের হিসেবে ২৯ জুলাই-এর পর এ পর্যন্ত নতুন ৭০ হাজার দাতা পেয়েছে এবং প্রায় ৪ মিলিয়ন ডলারের দান যোগার হয়েছে। গত বছর এটি ছিল ১.১২ মিলিয়ন ডলার।
যার মাথা থেকে বের হোক না কেন, এটির সাফল্য অসাধারণ। বাংলাদেশে এএলসের কোন চ্যাপ্টারের খবর আমার জানা নেই, সেই কারনে আমরা পানি ঢালাতে অংশ নিতে পারছি না। কিন্তু আমি দেখেছি অনেক স্কুল পড়ুয়াও পানি ঢালার ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছে।
ফেসবুক, টুইটারে এই প্রচারণা সাফল্য নিয়ে অনেক আলোচনা এবং বিশ্লেষন হচ্ছে। যারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে প্রচারণাতে সাহায্য করেন তারা এই ছোট্ট ঘটনা থেকে কিছু বিষয় লক্ষ করতে পারে। কারণ এই বিষয়গুলো তাদের কাজে লাগতে পারে। অনেকে এর সাফল্যের অনেক কারণ বলেছে, আমি কয়েকটা বিষয় খেয়াল করেছি যা হয়তো কাজে লাগতে পারে আমাদের উদ্যোক্তাদের।
১. মজা করুন, মজায় থাকুন – সব ভিডিওগুলো খেয়াল করুন। সবাই শুধু হাসি খুশি আছেন তা নয়, সবাই অন্যদের সঙ্গেও নিয়েছেন। এর মানে হল এই কাজটি সবার সঙ্গে আনন্দের সঙ্গে করা যায়। গুগলের দুই প্রতিষ্ঠাতা আর মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহির মাথায় পানিটা ঢেলেছে তার সহকর্মীরা। কাজে মজার ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে প্রচারণা শুরুর প্রথমে। শুধু কি তাই। বিল গেটস কেমন করে পানি ঢালবেন সেটি নিয়ে ব্যাপক গবেষণাও করেছেন!
https://www.youtube.com/watch?v=PqWnWBCvmtg
২. ভাল কাজে সবাই সাহায্য করে – কয়েক বছর আগে আমরা শ্রাবণীর জন্য ৪০ লক্ষ টাকার একটি চিকিৎসা তহবিল যোগাড় করেছিলাম। শ্রাবণীর স্বামী ব্যাপারটি সমন্বয় করে। এ কদিন আগে রাফসান নামে একটি হারিয়ে যাওয়া বালকের খোঁজে ফেসবুকে একটা ছবি ২৫ হাজার বার শেয়ার হয়েছে। তারমানে হল মানুষ ভাল কিছু করতে চায়, ভাল কাজের সঙ্গে থাকতে চায়। পানি ঢালাতেও এই বিষয়টি লক্ষ করার মত।
৩. সহজ নিয়ম – এই প্রচারণার নিয়মটা খুবই সোজা। হয় পানি ঢালো নয়তো টাকা দাও। মানুষ জটিল কিছু পছন্দ করে না। সহজভাবে বললে সবাই তা গ্রহণ করে।এই প্রচারণার আর একটি দিক ছিল সামাজিক যোগাযোগের সাইটে একাউন্ট থাকলেই এটাতে অংশ নেওয়া যাচ্ছে। স্ট্যাটাস দেওয়া, টুইট করা বা শেয়ার করার জন্য বাড়তি আর কিছু কী লাগে?
৪. যুক্ত হওয়ার আনন্দ – শেয়ার করা, পানি ঢালা কিংবা মজা করার পাশাপাশি সবাই কিন্তু একটা গ্রেট কজে যুক্ত হতে পেরেছে। ওদের জন্য ১০০ ডলার আমাদের ১০০ টাকাই। সে হিসাবে টাকাটা কম কিন্তু আনন্দটা বেশি।
৫. আইডলদের যুক্ত করা (স্টারদের নয়!) – আমাদের দেশে আমরা সব সময় প্রচারণার সময় ভাবি যে, খেলাধুলা বা সিনেমার বা টেলিভিশনের তারারা মনে হয় সবচেয়ে বেশি লোক টানতে পারে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগে মনে হয় ব্যাপারটা ততোটা সত্য নয়। এই প্চারণাএর এখন পর্যন্ত এগিয়ে আছেন মার্ক, বিল বা বেজোসের মত লোকেরা। ওনারাই তরুনদের আইডল। টিম কুকের ভিডিওটা খেয়াল কর, কত হাজার হাজার লোক সেখানে!
এই বিয়ষটা নিয়ে আরো অনেকেই বিশ্লেষন করবেন এবং মার্কেটিং গুরুদের কেও কেও নতুন কোন দিক নির্দেশনা দেবেন। প্রচালনা শেষে আমি নিজেও একবার এ বিষয়টি খেয়াল করার চেষ্টা করবো।
এখানে আমার কেবল মনে হয়েছে – যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই।
এএলএসের জন্য ফান্ড রাইজিয় সফল হোক।