ঝংকার মাহবুব -হাবলু দ্যা গ্রেট
পাণ্ডুলিপি পাবার পর আমার মনে হয় – আহারে আমাদের সময় যদি এমন কেউ থাকতো!
ইংরেজি একটা সিরিজ আছে ফর ডামিস। মানে যাদের দিয়ে কিছু হয় না তাদেরকে এক্সপার্ট বানানোর চেষ্টা আর কি। কিন্তু বাংলাতে কি এমন বই সম্ভব?
হাবলুদের জন্য প্রোগ্রামিং পড়ে আমার সে সন্দেহের অবসান হয়। দেখলাম সেই বইতে ঝংকার নিজের পরিচয় দিয়েছে হাবলু দ্যা গ্রেট হিসাবে। বাহ মজাতো।
আমি আগেই তার ভিডিও দেখেছি। এবার তার বই পড়ে বুঝলাম ও আসলেই ওয়েব প্রোগ্রামিং-এর একেবারে ভিতরে ঢুকে গেছে। ঢুক গেছে বলেই একেবারে অবলীলায় প্রোগ্রামিং-এর সব বিষয় জলবৎ তরলং করে লিখে ফেলেছে। আমি ভাবলাম ওকে দিয়ে আরও বই লিখিযে নিতে হবে। বিশেষ করে আমাদের হাইস্কুল প্রোগ্রামিং কনটেস্টের জন্য আমাদের প্রোগ্রামিং-এর অনেক বই দরকার। পরে অবশ্য বুঝলাম আমার বলার আগেই ও একাধিক বই লিখে ফেলবে।
তো, হাবলু দ্যা গ্রেটের গল্পটা শুরু হতে পারে ওর এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল দিয়ে। সেখানে ফিজিক্স অবজেকটিভে পাইছে ১৬! আর ২ নম্বর কম হলেই ফেল রেজাল্ট দাঁড়ালো ফার্স্ট ডিভিশন এক বিষয়ে লেটার। ঢাকায় কলেজে পড়ার স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু কোন কলেজ থেকে ভর্তির ফরমই তুলতে পারেনি। এসএসসিতে ধরা খেয়ে ও বঝুতে পারে চিপা-চাপা দিয়ে ঘুরে বেড়ালেও রেজাল্ট ভাল করার জন্য আরও কিছু টেকনিক বের করা দরকার। কাজে ঘুরে বেড়ানো আর আকামের ফাঁকে কলেজ লাইফে পড়ালেখাতে একটু শ্রম দিল। স্পেশালি ফিজিক্স। কলেজের ফার্স্ট ইয়ার ফিজিক্সে ৭৫ এর মধ্যে ৭৪ পেয়ে বুঝতে পারে কায়দাটা সহজই। এসএসসির নম্বর অনুসারে কলেজে সবার নীচের পজিশনে থেকে সেখানে সে হয়ে যায় ফার্স্ট! আর পড়াশোনার গতি এসে যাওয়ায় এক লাফে বুয়েটে ভর্তি! বিভাগ – ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং। সাবজেক্টে ভালই। ঝংকারের মতো ফাঁকিবাজ, চিপা-চাপায় ঘুরে বেড়ানোর ছাত্রদের জন্য মোক্ষম। অন্যদিকে ক্লাস নাইন থেকে টিউশনির অভ্যাসটা বুয়েটে এসে বেড়ে গেছে। সঙ্গে কোচিং-এ ক।লাস নেওয়া যোগ হয়েছে। শেষ সেমিস্টারে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে একটা বিজনেসও শুরু করে দিয়েছে।
তবে, বুয়েটের পড়ালেখা ততদিনে আয়ত্বে চলে এসেছে আমাদের হাবুল দ্যা গ্রেটের। ব্যাপক ঘোরাঘুরি করার পরও বেচারা বুয়েটে হযে যায দ্বিতীয়!
এবার নির্ঘাত বুয়েটের টিচার হওয়া। কিন্তু ক্যালকুলেটরে হিসাব করে দেখা গেল লেকচারারের যে মাইনে সেটা মোটেই তোমন পদের না! কাজে মাস্টারির দিকে আগাোন যাবে না। ঐ যে বন্ধুদের সঙ্গে ব্যবসা শুরু সেটাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সময় দেওয়া শুরু। সেই দিনগুলোর কথা তার মনে আছে- ভোর সাতটা বা কোন কোন দিন তারও আগে থেকে শুরু হতো দিন। চলতো গভীর রাত পর্যন্ত। বছর তিনেক এমনই ছিল।
এর মধ্যে আমেরিকাতে এমএসে ভর্তি। ঐ প্রোডাকশন ইঞ্জনিয়ারিং-এই। সেখানে সামার টাইমে ইন্টার্ন করার চেষ্টা করতে গিয়ে তার একটা অভিজ্ঞতা হলো। দেখা গেল যারা সিএসই পড়ে তারা সহজেই ইন্টার্নশীপ পেয়ে যাচ্ছে, চাকরিও দ্রুত পেয়ে যাচ্ছে। সেই তুলনায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ইন্টার্ন অনেক কম। তাছাড়া ঝংকারের শহরে মাইক্রোসফটের একটা অফিস ছিল। তাতে মাইক্রোসফটে চাকরি করার একটা গোপন ইচ্ছাও তার হলো।
আমার যেরকম বাদল ভাই ছিলেন সেরকম ঐ শহরে ঝংকারের ছিলো বাকী ভাই। উনি বললেন, তুমি প্রোগ্রামিং করতে চাইলে পারবা কোন ব্যাপারই না।
বাকী ভাই-এর সাহসে প্রোগ্রামিং লাইনে সুইচ করে ফেলে ঝংকার। সেই থেকে ও প্রোগ্রাম খায় আর প্রোগ্রাম পড়ে আর প্রেগ্রামে ঘুমায়!
আর প্রোগ্রাম নিয়ে ঘুরে বেড়ায় সারা দেশে। কেন?
ও বলে, “পোলাপান আমাকে চড়কির মতো ঘুরায়। তারা ইভেন্ট অর্গানাইজ করে, সব কিছু ঠিকঠাক করে। আমি শুধু সময়মত গিয়ে প্রোগ্রামিং, আমি কিভাবে শিখেছি, ক্যারিয়ার, এইসব নিয়ে বকবক করে চলে আসি। আর এইভাবে টাইম দেয়ার জন্য ঝংকার দায়ী করে তার প্রোগ্রামিং গুরু সুবীন, BDOSN এর প্রমি, বুয়েটের ধ্রুব আর সিআরই সেন্টারের মামুনদের।
তবে, আমার কাছে আসল কথা খুলে বলেছে ঝংকার। ও এসব করে আসলে নিজের লাভের জন্যই। প্রোগ্রামিং এ সব সময়ই এমন নতুন অনেক কিছু আসতেই থাকে, যেগুলা হয়তো তার অফিসে ব্যবহার করা হয় না। তাই ঠেকায় না পড়লে সেগুলো পড়া বা শেখা হয় না। এজন্য বেশ কয়েকজন ঝংকারকে বুদ্ধি দিয়েছে শিকাগোতে যেসব প্রোগ্রামিং এর আড্ডা হয় সেগুলাতে এইসব জিনিস দিয়ে টক দিতে। তাহলে টক দেয়ার জন্য বাধ্য হয়ে তাকে শিখতে হবে। এবং তারা তাকে এই বুদ্ধিও দিয়েছে- “যদি নতুন কি বলতে হবে বুঝতে না পারি, তাহলে দু-চারটা ইউটিউব ভিডিও দেখে সেগুলা কম্বাইন করে নিজের মতো করে কিছু বলে দিতে।“
সে অনুসারে ২০১২-২০১৩ সালে ঝংকার আমেরিকাতে দুই-একটা ছোটখাটো টক দিছে। ২০১৪ সালে দেশে আসার সময় চিন্তা করলো বাংলা হইলে আরও ভাল হয় – “ ২০১৪ সালে দেশে আসার আগে ফেসবুকে একটা পোস্ট দেই- যে আমি এই কয়দিন দেশে থাকবো। কেউ যদি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, জাভাস্ক্রিপ্ট বা খাজুইরা আলাপ টাইপের আড্ডা বা ইভেন্ট অর্গানাইজ করতে পারে তাহলে আমি গিয়ে সেখানে টক দিবো।”
তারপর থেকে যতবার দেশে আসে, ততবার ফেসবুকে একটা পোষ্ট দিয়ে আসে। যারা ইভেন্ট অর্গানাইজ করতে ইন্টারেস্টেড তারা যোগাযোগ করে। তাদের সাথে কথা বলে একটা তারিখ ফিক্সড করা আর তারপর সেখানে গিয়ে কিছু কথা বলে চলে আসা!!!
এতে দেশ দেখাটাও হয়ে যায়। “আমি যদি ২৮ দিনের ছুটি দেশে কাটাতাম। বাসায় বসে থেকে থেকে দুই সপ্তাহ পরে বোরড হয়ে যেতাম। তাই এইদিক ঐদিক ঘুরাঘুরি করলে সময়টা ভালো কেটে যায়। পুরান বন্ধুদের সাথে দেখা হয়ে যায়।”
ঝংকার অবসর সময়টা উপভোগ করে। “উপভোগ করার অনেক সিস্টেম থাকায় ভাগ ভাগ করে উপভোগ করি। তার মধ্যে আছে- দৌড়ের উপরের থাকা। সাধারণত প্রতি শনিবার ১৩ থেকে ২০ মাইল দৌড় দেই। বই লেখার কাজ করি। সেটা প্রিন্ট আউট করে এডিট করি। মাঝে মধ্যে যেসব টক থাকে সেগুলার জন্য অনলাইনে টিউটোরিয়াল ঘাঁটি, প্রেজেন্টেশন বানাই। নিজের জন্য ছোট একটা কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন করছি সেটার জন্য কাজ করি। শিকাগোর দুইটা মিটআপ গ্রূপ অর্গানাইজ করি। এছাড়াও অফুরন্ত সময় থেকে যায় হাতে। কারণ আমার বাসায় টিভি নাই। এছাড়াও টিভি, নাটক দেখি না। পত্রিকা পড়ি না। খেলা দেখি না। তবে বাংলাদেশ জিতলে খেলার হাইলাইটস দেখি। গত আট বছরের বছরে দুইটা করে সিনেমা দেখি। আর বছরে ইন্টারেস্টিং কিছু একটা করার চেষ্টা করি। যেমন গত বছর ছিল- ৪২ কিলোমিটারের ম্যারাথন দৌড়। এই ছিলো ১৪০০০ ফুট উপর থেকে স্কাই ডাইভিং।”
ঝংকার সম্পর্কে এটুকুই যথেষ্ট নয়। এ কারণে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর আয়োজন করা হয়েছে বিডিওএসএন টকের। ঢাকার ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে সকাল ১১টায় মিলনায়তন’৭১ এ হবে এ আয়োজন।
আইপিই থেকে প্রোগ্রামারদের গুরু হয়ে ওঠার বাকী গল্প শুনতে হবে সেখানে। অনুষ্ঠানটি সবার জন্য উন্মুক্ত।
আর এর বাইরে ঝংকারের সঙ্গে একটি কারিগরি আলাপ হবে “মুনির এন্ড মুনির শো’-এর প্রথম এপিসোডে। সেটি প্রকাশিত হবে ২৮ সেপ্টেম্বর।
সবটাতেই সবার আমন্ত্রণ।
হাবলু দ্যা গ্রেট দীর্ঘজীবী হোক।
One Reply to “ঝংকার মাহবুব -হাবলু দ্যা গ্রেট”