বিদায়, বস
আমাদের আলোচনার বড় অংশ জুড়ে থাকতো আসলে দ্রস্টা নিরপেক্ষ প্রকৃতি আছে কী নেই তার ওপর। আর সেখানেই আইনস্টাইনের জানানো আপেক্ষিতার জগৎ আর বোর-হাইজেনবার্গদের কোয়ান্টাম জগতের বিরোধ। বিরোধটা এমনই জটিল যে, আইনস্টাইনকে বলতে হরো – ঈশ্বর পাশা খেলেন না! আর তার জবাবে হকিং বললেন, “ঈশ্বর যে কেবল পাশা খেলেন তা নয়, বরং তিনি এমন জায়গায় পাশাকে ফেলেন যে সেটি দেখাই যায় না!”
তো, সে সময়ে একদিন সিজারের বাসায় আমি প্রথম হকিং-কে দেখি। মানে হকিং-এর বিখ্যাত সাড়া জাগানো বই – এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম। আমরা বুঝে গেলাম এই বইটাও আমাদের পড়তে হবে। তো, সিজারই প্রথম সেটি পড়তে শুরু করলো এবং আমাদের মূল আলোচনায় সেটি যুক্ত হতে থাকলো।
প্রথমদিন বইটা দেখার পড়দিন শনিবারেই আমি হাজির হলাম ঢাকা নিউমার্টের জিনাত বুক স্টলে। ততোদিনে মালিক আমাকে চেনে। দেখলাম আছে। তবে, দাম দেখে ভড়কে গেলাম। রুমে ফিরে হিসাব করলাম – যদি মাসখানেক সকাল ১০.৩০ এর নাস্তা স্কিপ করি আর রাত ১১টায় পরোটা-ডিমভাজি খাওয়া বাদ দেই তাহলে বইটা কিনতে পারবো। যে ভাবা সে কাজ। পরের মাসে বাবার পাঠানো টাকা পেয়ে প্রথমেই বইটা কিনে ফেললাম এবং তারপর টের পেলাম দুপুরে-রাতে না খাওয়ার কস্ট ঐ বই পড়ার আনন্দের তুলনায় নেহায়েতই তুচ্ছ!
সেই থেকে স্টিফেন উইলিয়াম হকিং আমার গুরু। তাঁর বইগুলো, তাঁকে নিয়ে লেখা বই – ইন্টারনেটে যতো কিছু পাওয়া যায় তাঁর সবই পড়ার চেষ্টা করতাম এক সময়। এখন হয়তো সেরকম পড়া হয় না। কিন্তু হকিঙ আমার মানসপটে এক উজ্জ্বল উপস্থিত। কখনই মলিন হবে না।
হকিং-এর সঙ্গে সঙ্গে আসলে পদার্থবিজ্ঞানের চারযুগের অবসান হলো। ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইমের শেষে তিনি গ্যালিলিও, নিউটন আর আইনস্টাইন সম্পর্কে লিখেছিলেন। বহা বাহুল্য ঐ ধারার চতুর্থ লোকটি তিনি নিজে।
তাকে নিয়ে লেখা আমার কয়েকটি নিবন্ধের লিংক এখানে আছে।
এটি মোটামুটি আপডেটেড কাজ কর্ম – আমাদের কালের নায়ক
আইনস্টাইনের বেহালা আর হকিং-এর মেরিলিন মনরো
হকিং-এর মেয়ে এসেছিল দেশে। তাঁর একটা দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম-
বিদায়, বস!
আপনি থাকবেন আমার মধ্যে, আমৃত্যু!