গার্লস ইন আইসিটি : লং ওয়ে টু গো
১৯৯৭ বা ১৯৯৮ সাল থেকে আমাদের কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষার্থীরা বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদার এসিএম প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। সেখানে এখন পর্যন্ত কোন মেয়েকে আমরা পাঠাতে পারিনি। (শুরুতে ওয়াইল্ড কার্ডের টিমে একজন ছিল যদিও)।
২০০৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে এবং তার পরের বছর থেকে ইনফরমেটিক্স, ফিজিক্স ইত্যাদি অলিম্পিয়াডে যাচ্ছে আমাদের দল। ২০১১ এর পর গণিত দলে কোন মেয়ে নাই। ফিজিক্সে সাকুল্যে ২ জন এপর্যন্ত এবং ইনফরমেটিক্সে মনে হয় বৃষ্টি শিকদার এ পর্যন্ত একমাত্র!
অথচ এইচএসসি পর্যন্ত কেবল নয়, এমনকী উচ্চ পর্যায়ের পড়াশোনাতেও মেয়েদের ভাল সাফল্য রয়েছে। আমি শুনেছি (যদিও চেক করিনি) শেষবারের ঢাকা ইউনিভার্সিটির ডিন’স এওয়ার্ড পাওয়া সবাই মেয়ে!
এ তো গেল পড়াশোনার ব্যাপার। আমার হিসাবে দেশের আইসিটি রিলেটেড সাবজেক্টগুলোতে এখন প্রায় ১৫% বা তার চেয়ে বেশি মেয়ে পড়াশোনা করে। কিন্তু সামনের কাতারে তাদের বেশিরভাগকে দেখা যায় না। চাকরি ক্ষেত্রে আরো কম।
বিশ্বব্যাপী বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনের কাতারেও এখন অনেকেই আছেন। ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গ। পেপসিকের চেয়ারপার্সন ইন্দ্রা নুই।
বাংলাদেশেও এর কিছু কাজ হচ্ছে। বাংলাদেশ ওম্যান ইন আইটি গত কয়েকবছর ধরেই এটি পালন করছে। বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক এবার এই আয়োজনে যুক্ত হয়েছে।
এই আয়োজন করতে গিয়ে আমার বেশ কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমরা একটা কারিগরি সেশন রেখেছিলাম সি এবং পাইথনে প্রথম প্রোগ্রাম করার জন্য। সেখানে আমাদের আসনসংখ্যার ৫ শতাংশ এসেছে! দেশের প্রথম সারির ১০টি প্রতিষ্ঠানকে আমরা অনুরোধ করেছি তাদের অফিসে একদিন মেয়েদের পরিদর্শনের সুযোগ দেওয়ার জন্য। তারা সবাই রাজী হয়েছেন। অংশগ্রহণকারী নির্বাচন করার জন্য আমরা অনলাইনে একটা ফরমও দেই। সেখানে প্রায় ২০০ মেয়ে আবেদন করে। তাদেরকে আমরা বিভিন্ন অফিসের জন্য নির্বাচন করি। তারা এখন সেখানে যাচ্ছে। তবে, নির্বাচিত হওয়ার পরও অনেক কিন্তু যাচ্ছে না। বসুন্ধরা পি১, উইনমিল আর ডিনেটে আমরা কাওকে পাঠাতে পারিনি।
অনলাইন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার জন্য ৩১০ জন নিবন্ধন করে কিন্তু ২০০জনও অংশ নেয়নি।
কিন্তু রংপুর আর দিনাজপুরে স্কুলছাত্রীদের জন্য আয়োজনগুলোতে কিন্তু আমরা জায়গা দিতে পারছি না!!!
তার মানে আমাদের পুরো ব্যবস্থায় কোন একটা সমস্যা আছে। যেটি চিহ্নিত করা দরকার।
গত বছর আমরা একটা জরিপে দেখেছি সাধারণভাবে দেশে আইসিটি পড়ুয়ার মাত্র ৭% প্রোগ্রামিং-এ আগ্রহী। কিন্তু মেয়েদের মধ্যে এই হার ১ শতাংশের কম। আমরা ভাবলাম তাহলে আমরা যদি কেবল মেয়েদর জন্য একটা প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা করি তাহলে সেখানে হয়তো ২০টার বেশি দল পাওয়া যাবে না। তাই আমরা প্রথম এনজিপিসিতে ২০টা দলের সংষ্থান রেখেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৬৭টি দল নেওয়ার পর আমরা আর জায়গা দিতে পারি নাই। এবছর আমাদের হয়তো ভিন্ন কিছু ভাবতে হবে।
একটা পারস্পেকটিভ ডিসকাশন থেকে দেখা যাচ্ছে আইসিটিকে ক্যারিয়ার হিসাবে না নেওয়ার পেছনে একটা বড় কারণ হলো এর সুযোগ সম্পর্কে না জানা। বেশিরভাগ পড়ুয়ার ধারণা আইসিটি ক্যারিয়ার মানে প্রোগ্রামিং, প্রোগ্রামিং এবং বড়জোর ওয়েব ডিজাইন। কিন্তু এজগৎ এখন এত বড় হয়েছে যে, আমি এই তালিকা করতে সক্ষম হবো না। কেবল বিগডেটা এনালিসিস বা এনালিটিক্স নিয়ে কাজের যে ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে সেখানেই আগামী কয়েক বছরে লক্ষ লক্ষ কাজের সুযোগ তৈরি হবে। আমার অফিসেই তো তিন তিনজন কাজ করেন যাদের কাজ হলো সারাদিন ফেসবুক, টুইটার খুলে বসে থাকা!!!
একটা সমাধান আমরা ভেবেছি “সিইং ইজ বিলিভিং”। যেমন গতকাল ৪০টি মেয়ে জিপিহাউসে গিয়ে জেনেছে আইিটি ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়াও সেখানে কাজ করা যায়, সুযোগ অফুরন্ত। গ্রাফিক পিপলে যারা গিয়েছে তারাও দেখে এসেছে দজ্ঞযজ্ঞ।
আমাদের এই আয়োজন শেষ হবে আগামী ৩০ এপ্রিল, ইউনিভার্সিট অব এশিয়া প্যাসিফিকের প্লাজায়। সেখানে ২৯-৩০ তারিখ দুইদিনের একটা ক্যারিয়ার ফেয়ার হচ্ছে। তার শেষের দিন, মানে ৩০ তারিখের থীম করা হয়েছে গার্লস ইন আইসিটি। ফেয়ারে দুইদিনে চারটা সেমিনারও হবে। তবে, ফেয়ার সেমিনারগুলো ছেলে-মেয়ে সবার জন্যই উন্মুক্ত।
আমরা আশা করছি ৩০ তারিখের বিকেরের সমাপনীতে আমাদের মেয়েরা যারা বিভিন্ন অফিসে গিয়েছে তারা তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবে। পাশাপাশি সফল অনেকেই আসবেন যাদের অভিজ্ঞতা নতুনদের অনুপ্রাণিত করবে।
সব মিলিয়ে গার্লস ইন আইসিটির প্রোগ্রামে আমার মিশ্র অনুভূতি। তবে, বিশ্বাস ঠিকই আছে। চেষ্টা করলেই ওপরের পরিসংখ্যানগুলো বদলানো যাবে। তবে, এ জন্য লড়তে হবে সবাইকে।
সবাইকে গার্লস ইন আইসিটি দিবসের শুভেচ্ছা।