গ্রোথ হ্যাক : শ’ন এলিস ও তার ৫ লেসন
গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং বা গ্রোথ হ্যাকার টার্মটা এখন আমাদের দেশেও অনেক জনপ্রিয়। বিশেষ করে তরুণ ও নবীন উদ্যোক্তাদের একটি বড় অংশই এখন মার্কেটিং-এর এই বিশেষ পদ্ধতিটি ব্যবহার করতে চায়। এর মূল বিষয় হলো “সার্বক্ষণিক মার্কেটিং”। মানে শয়নে স্বপনে জাগরনে মার্কেটিং করা। আমার গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং বই-এ আমি দেশী-বিদেশী অনেক উদাহরণ দিয়েছি। এর মধ্যে ড. ইউনুসের কথাটা পুনরুল্লেখ করতে চাই। গ্রামীণ চেকের আবির্ভাবের পর থেকে উনি সব সময় গ্রামীণ চেকের জামা কাপড় পড়তে শুরু করেন। এবং কিছুদিনের মধ্যে ওটাই ওনার ট্রেড মার্ক হয়ে যায়। বিশেষ করে বিদেশীরা তার মাধ্যমে গ্রামীণ চেকের কথা জানতে শুরু করে। এরকম আর একজন হলে ব্লেইক মাইকোস্কি। জুতার বিশ্ব বিখ্যাত ব্র্যান্ড TOMS এর উদ্যোক্তা। দুই পায়ে দুই রকম জুতা পড়তেন যাতে লোকে কারণ জানতে চায়। আর তাহলে উনি বলতে পারেন – আমার একটা জুতার দোকান…
গ্রোথ হ্যাকারদের তিনি সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে – “A growth hacker is a person whose true north is growth. Everything they do is scrutinized by its potential impact on scalable growth.” মানে সহজ। শয়নে-স্বপনে-জাগরনে এই লোক চিন্তা করে কীভাবে তার/প্রতিষ্ঠানের গ্রোথ হবে।
বহ্নিশিখা ভার্গবের সঙ্গে এক আলোচনায় শ’ন এলিসের ৫টি শিক্ষার কথা আমি এখানে তুলে ধরছি।
১. ছয় মাসের মধ্যে একটি ব্যবসা আদৌ দাড়াবে কিনা সেটা বোঝা যায়
এই ৬ মাসের মধ্যে উদ্যোক্তা ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের কাস্টোমারের দু:খ-বেদনা ও তারা কোথায় আছে সেটা যেমন বুঝতে হয় তেমনি জানতে হবে সেগুলো উত্তরণের উপায়। কাজে এই সময় খেয়াল করতে হয় কোন দিকে কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে।
২. কাস্টোমা্রের গভীরে গিয়ে জানতে হবে তারা কীভাবে পন্য/সেবার সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করছে
শ’নের মতে একটি সফল কোম্পানির জন্য গ্রোথ হ্যাকারের লক্ষ্য হচ্ছে যত বেশি সম্ভব লয়্যাল কাস্টোমার যোগাড় করা। সেটা করতে হলে কাস্টোমারকে ভালভাবে বুঝতে হবে। নিয়ম হচ্ছে, পএকটা একটা করে বিষয় ধরে সেটা নিয়ে কাজ করা। যেমন প্রথমেই তোমার প্রোডাক্ট নেওঢার পর কাস্টোমার কী করে? তার কোন আচরণে এটা প্রকাশ পায়। এভাবে পুরো সাইকেলটা বুঝতে হয়।
৩. তূলনামূলক সুবিধাদির বুঝ
সব ব্যবসারই কিন্তু তূলনামূলক কোন না কোন সুবিধা থাকে। খু্ঁজে বের করতে হবে এগুলোর মধ্যে কোনটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটা বের করতে পারলে বের করা যায় কোন ডিপার্টমেন্টের সেখানে সবচেয়ে বেশি কাজ। এয়ারবিএনবির ক্রেইগলিস্ট হ্যাকিং-এর উদাহরণটি ভাবেন (বিলিয়ন ডলার স্টার্টআপে এই উদাহরণ বিস্তৃত আলোচনা করেছি)। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং, মার্কেটিং নয়।
৪. কেবল ভাল মার্কেটিং দিয়ে গ্রাহকের মন জয় করা যায় না, প্রোডাক্টও ভাল মানের হতে হয়
এটা এখন বেশিরভাগ উদ্যোক্তা জানেন। তারপরও অনেকেই বড় বাজ দিয়ে মার্কেট দখলের স্বপ্ন দেখেন। যা আখেরে কোন কাজে লাগে না।
৫. মার্কেটিং ফানেলের সব অংশই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত
মার্কেটিং টিম বাদ্যবাজনা বাজিয়ে লোকজনকে ধরে আনার পর সেলস টিম যদি সেটা কাজে লাগাতে না পারে তাহলে মার্কেটিং কিন্ত কাজ করলো না। আবার যারা একটু আধটু কেনাকাটা করলো তাদের তথ্য যদি মার্কেটিং টিম না পায় তাহলে তারাও কাজে লাগাতে পারছে না। মার্কেটিং টিম বাজারের ফীডব্যাক যদি ডিজাইন আর প্রোডাক্ট টিমকে না দেয় তাহলে প্রোডাক্ট কেমন করে উন্নত হবে?
বোঝা যাচ্ছে গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং কিন্তু প্রচলিত অর্থে মার্কেটিং-এর সমার্থক নয়। কারণ এই টিম শুধু বানিয়ে দেওয়া প্রোডাক্ট বিক্রি করে না বরং তারা প্রোডাক্টের ডিজাইনেও ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং-এর নানা দিক নিয়ে আমি একটা ই-মেইলে কোর্স চালু করেছি ২০২০ থেকে। এ পর্যন্ত ৫টি ব্যাচে ৩০০ জনের বেশি এই কোর্সে অংশ নিয়েছে।
এটি একটি ই-মেইল কোর্স। ওপরে বর্ণিত ফিলসফি অনুসারে এই কোর্সের বিষয় ঠিক করা হয়েছে। এই কোর্সে নতুন যা শেখা যেতে পারে –
- নিজের ও উদ্যোগের SWOT বিশ্লেষন কীভাবে আপনাকে কৌশল ঠিক করতে সাহায্য করবে,
- কীভাবে শুরুর দিকের ১০০ জন কাস্টোমার নিশ্চিত করবেন,
- কীভাবে ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলবেন,
- কীভাবে নিজের কাস্টোমারদের মার্কেটার বানাবেন,
- লিন মার্কেটিং ফানেল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও তা প্রয়োগের উপায়,
- ফেসবুকে পেইড ক্যাম্পেইনে কীভাবে বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন
- হোয়াটস এপ বা গুগল ম্যাপ কীভাবে নিজের কাজে লাগাবেন
- ইউটিউবকে কীভাবে কাজে লাগাবেন, এছাড়া
- বিখ্যাত হ্যাক সম্পর্কে যেমন জানা যাবে তেমনি জানা যাবে আমাদের দেশে কারা কীভাবে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে।
আগামী ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ষ্ঠ ব্যাচের ক্লাশ শুরু হবে। শ’ন এলিসের এই বইটাও আমার এই কোর্সের অন্যতম ম্যাটেরিয়াল।
নিবন্ধন করতে হবে কো্র্সের পেজ থেকে। এই পেজের ডান দিকের “ADD TO CART” বাটন ক্লিক করলেই শুরু হবে নিবন্ধন প্রক্রিয়া। কোর্স ফী মাত্র ৫৯০/- টাকা।