গ্রোথ হ্যাকার মার্কেটিং – টু বি অর নট টু বি
হটমেইলের সহ প্রতিষ্ঠাতা সাবির ভাটিয়া আর জ্যাক স্মিথেওর কথাও এখন সেভাবে অনেকেই জানে না। তবে, হটমেইল সম্ভবত ডট কম বাবলের প্রথম সবচেয়ে বড় বেচা-কেনা। মাইক্রোসফট সে সময় রেকর্ড পরিমান টাকায় হটমেইল কিনে নিয়েছিল।
এডাম পেনবার্গের ভাইরাল লুপ বইতে হটমেইলের মার্কেটিং-এর শুরুর কথাটা আছে। সাবির ভাটিয়া আর জ্যাক স্মিথ সিলিকন ভ্যালির ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট টিম ড্রেপারের সঙ্গে মিটিং করছেন। টিম এরই মধ্যে ওদের জানিয়েছে যে, বিনামূল্যের ওয়েববেজড ই-মেইল সম্পর্কে তার যথেষ্ট আগ্রহ আছে।
“কিন্তু” টিম জানতে চান – তোমরা এই খবরটা কেমন করে সবার কাছে পৌছে দেবে?
ভাটিয়া তৎক্ষণাৎ জবাব দিয়ে দিল – “আমরা সব জায়গায় বিল বোর্ড বসায় দিবো”।
বিনামূল্যের কোন পন্যের জন্য এরকম ব্যয়বহুল চিন্তা সরাসরি নাকচ করে দেন টিম।
রেডিও বিজ্ঞাপন? ভাটিয়ার প্রস্তাব। একই কথা। অনেক টাকা।
তাহলে ইন্টারনেটে যাদের ই-মেইল আছে তাদের ই-মেইল পাঠায় দেই! ভাটিয়া মোটামুটি আইডিয়া ফ্যাক্টরি।
“না। কারণ স্প্যাম মেইল কেউ পছন্দ করে না।’
তাহলে? সবাই একটু ভাবতে শুরু করলো। তারপরই টিম ড্রেপার একটা অদ্ভুত প্রস্তাব করলেন – “আচ্ছা, তোমরা কি প্রত্যেকের স্ক্রিনে একটা মেসেজ দেখাতে পারবে?”
“হায়, হায়। আমরা নিশ্চয়ই সেটা করবো না।” ভাটিয়া আর স্মিথ দুজনই আপত্তি জানালো।
“কিন্তু তোমরা সেটা কারিগরিভাবে করতে পারবে কিনা। ধরো, আমি জোর করছি। তোমরা একজনের ই-মেইলে একটা মেসেজ বসায় দিতে পারবা? তারপর ঐ বার্তা যখন আর একজনকে পাঠাবে তখন কি তাকেও মেসেজ দিতে পারবা?”
ইয়া, ইয়া – ভাটিয়া আর স্মিথের জবাব।
“ঠিক আছে। তাহলে বসিয়ে দাও ,” P.S : I Love you. Get your free e-mail at Hotmail at the bottom”।
সে সময় এই আইডিয়াটা কতোটা বৈপ্লবিক ছিল তা চিন্তা করাটা এখন বেশ কঠিন। রায়ান হলিডে তার গ্রোথ হ্যাকার মার্কেটিং বই-এর শুরুতে গ্রোথ হ্যাকিং কী বোঝাতে এই উদাহরণটি ব্যবহার করেছেন। তারপর তিনি পেটস ডট কমের উদাহরণও দেন যারা কিনা হটমেইলের বছর কয়েক পর টিভি আর বিলবোর্ডের পেছনে ১.২ মিলিয়ন ডলার খরচ করেও দোকান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।
নতুন পদ্ধতির এই হলো বাহাদুরি। ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ব্র্যানড শুরু হয়েছে মাত্র তিন লক্ষ ডলারের বিনিয়োগ থেকে এবং জন্ম দিয়েছে একটি নতুন মার্কেটিং পদ্ধতির। আর হটমেইলের ঘটনাটি কোন ফ্লুক নয়। জি-মেইলের শুরুর কথা মনে আছে? প্রথমে গুগল একটা প্রোডাক্ট বানালো, হটমেইল থেকে ভাল। তারপর এটাকে বানালো “ইনভাইট অনলি”। মানে একজন তার পরিচিত জনকে কেবল জিমেইল একাউন্ট পাবার জন্য একটা ইনভাইটেশন পাঠাতে পারবে। তারপর একসময় এটা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিল। সেই একই হটমেইল মার্কেটিং পলিসি। আর এখন ফ্রি ই-মেইল সার্ভিসের মধ্যে জিমেইলই সম্ভবত সেরা!
গত কদিন ধরে একটি নতুন উদ্যোগের জন্য মার্কেটিং পলিসি ঠিক করার চেষ্টা করছি। আর সেটা করার জন্য পড়ালেখা করছি নতুন করে। এর আগে ইনোসন্টের শরবত পড়ার সময় তাদের মার্কেটিং কৌশলটা সবার সঙ্গে শেয়ার করেছিলাম। এরপর অনেকদিন মার্কেটিং নিয়ে তেমন একটা পড়ালেখা করা হয়নি। এখন আবার পড়ছি। খান কতক বই পড়বো। এরমধ্যে গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিংটা রেখেছি। মজার ব্যাপার হলো এই বই না পড়েই আমি আমার পড়ো পড়ো পড়োর জন্য নাকি এ বইতে বলা পদ্ধতিই অনুসরণ করেছি।
মার্কেটিং হলো উদ্যোক্তাদের এক ধরণের যন্ত্রণার নাম। বিশেষ করে নতুন উদ্যোক্তাদের। একটা বড়ো কারণ হলো প্রোডাক্ট বানাতেই তাদের ধারকর্জের দিন মেষ হয়। ফলে মার্কেটিং-এর জন্য বাড়তি টাকা পয়সা থাকে না। ফলে প্রচলিত মার্কেটিং টুলসগুলো ব্যবহার করাটা তেমন একটা সম্ভব হয় না। আমাদের সবেধন নীলমনি তাই হয়ে দাড়িয়েছে ফেসবুক মার্কেটিং। যদিও এটা সবার জন্য সাফল্য বয়ে আনছে না। আমার হিসাবে মাত্র ১০-২০ শতাংশ নতুন উদ্যোক্তা তার মার্কেটিং-এর খরচকে সার্থক ভাবতে পারেন। আমাদের দেশেও অনেক বৈপ্লবিক মার্কেটিং-এর চিন্তা আছে। বিশেষ করে ৩০০ টাকার এনার্জি বাল্ব ১০০ টাকায় বিক্রির ব্যাপারটা আমাদেরই উদ্ভাবন মনে হচ্ছে (এটা নিয়ে কেউ কোন রিসার্চ করেছে? )। কাজে আমরা হয়তো নতুন কোন পদ্ধতি এরই মধ্যে বের করে বসে আছি। যাহোক আমার অন্বেষা চলুক।
সবার মার্কেটিং-এর সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।
4 Replies to “গ্রোথ হ্যাকার মার্কেটিং – টু বি অর নট টু বি”
Leave a Reply Cancel reply
You must be logged in to post a comment.
জানতে হলে অনেক কিছু পড়তে হবে।
লেখাটা অনেকবারই পড়েছি। গ্রোথ হ্যাকিং এর মুল ছন্দ লেখাটাতে পাই।
Thank you. Wish you all the best.