দিন শেষে সবাই তাদের ব্যবসায় উন্নতি করতে চান। গ্রোথ হ্যাকারদের সঙ্গে অন্যদের পার্থক্য হলো গো্রথ হ্যাকাররা এই কাজটা করার জন্য প্রতিদিনই নতুন নতুন কাস্টোমারের পেছনে হন্য হয়ে ঘুরে না। তারা বরং যে সকল কাস্টোমার এখন আছে তাদের পেছনে অনেক সময় ব্যয় করে। চট্টগ্রামের একটি ফ্যাশন হাউস নতুন কোন প্রোডাক্ট করলে ফেসবুকে সেটা প্রকাশ করার আগে তার নিয়মিত খদ্দেরকে ফোন দেয়, ফোন দিয়ে নতুন প্রোডাক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত বলে। এটা কিন্তু বলে না যে, “প্রোডাক্টের ছবি দিছি আমাদের পেজে, সেটা দেখে নেবেন”। বরং তারা প্রোডাক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত বলে এবং অনুমতি নিয়ে তাকে ই-মেইলে বা ইনবক্সে ছবি পাঠিয়ে দেয়। আর একটি ই-কমার্স স্টোরে কেউ যদি ফোন করে এমন প্রোডাক্ট নেই তার সম্পর্কে বলে তখন তারা খোঁজখবর নিয়ে সেটি যোগাড় করে দেয়! এটিই হলো গ্রোথ হ্যাকারদের মূল লক্ষ্য। যে লোক অন্তত একবার আমার পন্য বা সেবা নিয়েছে তার কাছে কিন্তু গল্প করার সময় অনেক কিছুই বলতে হয় না। এখানেই তাদের সফলতা যে তারা নতুন কাস্টমার এর পরিবর্তে পুরাতন কাষ্টমারদেরই অনেক বেশি মুনাফার জন্য কাজে লাগাতে পারে।
এর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো – সারাক্ষনই নিক্তিতে নিজের পন্যকে যাচাই করা। অ্যারন গ্রিণ একবার রায়ান হলিডেকে বলেছেন, “পৃথিবীতে এমন কন পন্য বা সেবা নাই যেটিকে আরও উন্নত করা যায় না”। সোজা বাংলায় বলা চলে তুমি তোমার প্রোপাক্ট মার্কেট ফিট খুঁজে পেয়েছো বলে সেটাই তোমার চূড়ান্ত গন্তব্য নয় বা সেটা নিখুঁত। বরং সেটিকে আরও উন্নত করার অনেক উপায় রয়েছে। গুগর আর ফেসবুকের কথা ভাবো। এত্তো এত্তো ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে ওরা কী করে? সব প্রোডাক্টই টুইকিং যোগ্য এবং উন্নত হওয়ার অপেক্ষায় আছে।
মেইলবক্সের কথা আগে লিখেছি। সেটার কথা মনে আছো তো? তো, মেইলবক্সের গ্রোথ হ্যাকার সিন বিউসোলিল রিডরাইট ম্যাগাজিনে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “ তোমার বর্তমান পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, এটিকে আরও উন্নত করা সম্ভব”।
গ্রোথ হ্যাকাররা এটি জানে। এজন্য তারা নানামুখী তৎপরতা চালায়। এন্ডি জোনস টুইটারে জয়েন করার পর তার দায়িত্ব হয় নতুন নতুন গ্রাহক সৃষ্টি করা। কিন্তু প্রথমেই তাঁর নেতৃত্ব গ্রোথ হ্যাকাররা এমন একটা জিনিষ খুঁজে পেল যার সঙ্গে নতুন গ্রাহক খুঁজে পাওয়ার সংযোগ পাওয়া কঠিন। তারা দেখলো, টুইটার থেকে তার গ্রাহকদের কোন ই-মেইল পাঠানোর যে পদ্ধতি সেটা খুবই জটিল। সে সময়ে টুইটার কর্তৃপক্ষ যদি তার গ্রাহকদের একটা ই-মেইল পাঠাতে চায় তাহলে সবাইকে পাঠানোর জন্য তাদের মাত্র তিনদিন সময় লাগতো। এন্ড প্রথমে এই কাজের পেছনে লাগলেন, প্রোগ্রামারদের কাজ দিলেন এটা ঠিক করার জন্য। ফলাফল হলো – এখন টুইটার নোটিফিকেশন, এলার্, রিমাইন্ডার সহজেই পাঠাতে পারে। এর ফলে টুইটারের গ্রাহকদের সঙ্গে ইন্টারেকশ্যন বেড়েছে। গ্রাহকরাও আগের চেয়ে বেশি তৎপর হয়েছে। এই গল্প থেকে বোঝা যায় যে internal system patch করেও অনেক ভালো কিছু করা যেতে পারে।
হয়ত তোমার হোমপেজটি ঠিকমতো কাস্টোমার আকর্ষণ করতে পারছে না। হয়তোবা ৯৯ শতাংশ কাস্টোমার তুমি যে ভাবে শপিং চিন্তা করে সাইটটা সাজিয়েছো সেভাবে কেনাকাটা করতে পছন্দ করে না। হয়তো অনেক গ্রাহক সবকিছু ঠিকঠাক করে চেক-আউটের সময় সাইট পরিত্যক্ত করে চলে যাচ্ছে। অথবা তোমার স্যোসাল মিডিয়া টিম সময়মতো পোষ্ট দিচ্ছে না বা তোমার লোকেরা দোকানের ফ্লোরে সময়মতো প্রোডাক্ট রাখতে সক্ষম হচ্ছে না। সবকিছুরই ইমপ্রূভমেন্ট আছে। বাস্তবতা হচ্ছে তোমার প্রোডাক্টের কোন না কোন ব্রোকেন পয়েন্ট আছে! সেটা সারাই করতে না পারলে তুমি আসলে সেভাবে আগাতে পারবে না। এই চিন্তার সঙ্গে সনাতনী মার্কেটারদের বিতর্ক আছে। কিন্তু গ্রোথ হ্যাকারদের এই মন্ত্রই আকড়ে থাকতে হবে।
মাইস্পেসের হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা স্মরণ করা যেতে পারে। শুরু থেকে মাইস্পেসে লগ-ইন করাটা একটা ঝামেলাপূর্ণ ব্যাপার ছিল। কিন্তু মাইস্পেস টিম সেটাতে পাত্তা না দিয়ে নতুন নতুন ফিচার এড করা আর মার্কেটিং-এ ব্যাপক সময় ও খরচ করে। কিন্তু লগ-ইন জটিলতা থেকেই যায়। যে সময় মাইস্পেস বাড়তে থাকে তকণ কিন্তু ফেসবুক সেভাবে বাজারে আসেনি। কিন্তু যখনই লোকে ফেসবুকের সহজ লগ-ইনের ব্যাপারটা জেনে যায় তখনই তারা দলে দলে মাইস্পেস ত্যাগ করে ফেসবুকে আসতে থাকে, যেমনটা তারা করেছিল ফ্রেন্ডস্টার ছেড়ে মাইস্পেসে আসার সময়। কাজে মাইস্পেস হয়ো না।
গ্রোথ হ্যাকারদের কর্তব্য হচ্ছে নির্মমভাবে incoming ট্রাফিকের অপটিমাইজ করা। এরিক রাইজ তার দি লিস স্টার্টআপে একবাক্যে কথাটা বলেছেন, “ গ্রাহকদের ধরে রাখাই হবে মূল ফোকাস”। সনাতনী চিন্তা হলো কাস্টোমার কমে গেলে নতুন কাস্টোমার খোঁজা। কিন্তু গ্রোথ হ্যাকারদের চিন্তা এর বিপরীত, কেননা এটি অনেক বেশি সহজ।
এটি গ্রোথ হ্যাকারদের মানসিকচাপও কমিয়ে দেয়ে। রায়ান পোষাকুকুরে এয়ারবিএনবি ‘ডগবেকাই’ নিয়ে তার নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। ভ্যাকেশনে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সময় ঘরের পোষাপ্রানীকে কোথায় রাখা হবে এটি নিয়ে অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়। এ থেকে পরিত্রাণের একটি মার্কেটপ্লেস হলো এই ডগবেকাই। এখান থেকে আপনি জানতে পারেন আপনার প্রতিবেশী বা কাছে কিনারে কেউ আছে কিনা যে ক’দিনের জন্য আপনার কুকুরটা রাখবে কিনা। রায়ান ও তার বান্ধবী একটি ব্লগ থেকে এই সাইট সম্পর্কে জানতে পেরে সেখানে নিবন্ধনের কাজ শুরু করে। কিন্তু মাঝপথে সেটি বাদ দিয়ে তারা চলে যায। তিনদিন পর রায়ান ডগবেকাই থেকে একটি কল পান। তারা আবার সময় নিয়ে রায়ানকে তাদের সার্ভিস সম্পর্কে বলে, রায়ানকে সাহায্য করে তার প্রোফাইল কমপ্লিট করার জন্য। এভাবে তারা একজন নতুন গ্রাহক পেয়ে যায়। অনেকের ধারণা হতে পারে এতো সময় নিয়ে একজন গ্রাহক ধরার সময় নাই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রায়ান তাদের জন্য কতোটা কাজের হয়েছে তা যারা বইটি পড়েছে তারাই বলতে পারবে!
“বেসিক সার্ভিসটা ভখরমতো দেকলে নগদ ২৫০ মেগাবাইট ফ্রি স্পেস পাওয়া যাবে” ড্রপবক্সের এই অফারটিও তাই প্রোথ হ্যাকিং-এর বিস্তর কাজে লেগেছে।
সনাতনী মার্কেটারদের আপ্ত বাক্য হলো “আরও নতুন, আরও নতুন”। আর গ্রোথ হ্যাকারদের কথা হলো আগে যা আছে তাই নিয়ে “লেগে পড়ো”।