বাংলার জন্য চার লাখ: বজিপ্র

Spread the love

বেশ কয়েকবছর আগে আমি মু্ক্ত দর্শনের অনুসারি একটি আন্তর্জতিক সংস্থা, কপিসাউথ  নামের, সদস্য হই। এশিয়া থেকে আমি, ফিলিপাইনের ফাতিমা লাস্সি এবং ভারতের একজন। মেইন লিড ইংলন্ডের কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। প্রতিষ্ঠানটির কাজ হলো দেশে দেশে জ্ঞানকে যাতে মুক্ত করা যায় তার জন্য একাডেমিক কাজ করা। ৩০ জনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের অর্ধেকেরও বেশি সদস্য ইংরেজি বোঝেন না। হয় জার্মান না হয় স্প্যানিশ কিংবা পর্তুগীজ। তো, আমাদের অফিসিয়ার ভাষা ছিল ইংরেজি ও স্প্যানিশ। অথবা না কিন্তু! মানে মেইলিং লিস্টে মেইল করতে হলে ইংরেজিতে লিখে তারপর স্প্যানিশ ভাষায় সেটার তরজমা লিখতে হত। সেই সময় আমি প্রথম গুগল ট্রান্সলেটরের শরণাপন্ন হয় এবং আবিস্কার করি জার্মান ও স্প্যানিশরা মোটামুটি কাজ সেরে ফেলেছে। পর্তুগীজের অবস্থা ততটা ভাল না। কিনউত গুগলের কারণে আমাদের কাজ করতে অসুবিধা হতো না।

সে সময় আমি কয়েকটা লেখা লিখেছিলাম জ্ঞানের মালিকানা নিয়ে। বিশেষ করে আর্জেন্টিনার একজন অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ফরাসী একটি কোম্পানির কপিরাইটের মামলা নিয়ে এবং দিল্লীর হাইকোর্টে হ্যারিপর্টারের একটি মামলা নিয়ে। আর্জেন্টিনা সংক্রান্ত লেখাটা আমি লিখতেই পারতাম না যদি গুগল অনুবাদ না থাকতো!
কপিসাউথের কাজে অনেকটা ভাটা পড়েছে এরপরে আর আমারও সেটা নিয়ে তেমন একটা কাজ করতে হয়নি। কেবর মাঝে মধ্যে ফেসবুকে কাউকে কাউকে বোকা বানানোর জন্য গুগল অনুবাদ ব্যবহার করেছি।
তো, গুগল অনুবাদের মাহাত্ম টের পেলাম আবার গত বছর। গত বছর আমাদের প্রথম আলো প্রথম বারের মত ইম্প্যাক্ট জার্নালিজম ডে’র সঙ্গে যুক্ত হয়। এর সঙ্গে মোট ৪০টি দেশের প্রথম সারির পত্রিকা যুক্ত। আমাদের বই বিতরণের আলোর দিশারী পলান সরকারের ওপর একটি ফিচার এই সুবাদে বিশ্বর অনেক নামকরা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আমার ওপর ভার পড়লো কোথায় কোথায় সেগুলো প্রকামিত হয়েছে সেটি বের করার বুদ্ধি বের করা। ইংরেজিগুলো তো এক লহমায় বের হয়ে গেল কিন্তু জার্মানী, ইতালি, হন্ডুরাস, স্পেন কিংবা আর্জেন্টিনার পত্রিকার খবর কেমনে পাবো?
যাও গুগলে। ইংরেজি আর্টিকেলটা যা প্রথম আলো ইংরেজি করে স্পার্ক নিউজে পাঠিয়েছে সেটিকে দিয়ে দিলাম গুগলে আর তার অনুবাদ বের করলাম জার্মান, স্প্যানিশ, ইতালিয়ান ভাষায়! আর সেটা দিয়ে সার্চ করে বের করে ফেললাম পলান সরকারের ছবি আর স্টোরি, বিশ্বের নানান ভাষায়!
গুগল ট্রান্সলেটর না থাকলে কী করতাম? জানি না!

কিন্তু মনে একটা খচখচানি রয়ে গেল কারণ কাটা বাংলা দিয়ে হলো না!
কাজে জানুয়ারি মাসের কোন একদিন খান সালাম, জাবেদ সুলতান পিয়াস আর জাবেদ মোর্শেদ এসে আমাকে যখন বললো গুগল অনুবাদে বাংলাকে সমৃদ্ধ করার একটা কাজ তারা হাতে নিয়েছে তখন বেজায় খুশী হয়েছি। বলেছি আমাকে যা যা করতে হবে আমি তা করতে পিছপা হবো না। তারপর দেখা গেল ফেব্রুয়ারি মাসে ভাল অগ্রগতি।
১১ মার্চ ড্যাফোডিলে একটা অনুষ্ঠানে সালাম জানালো হংকংবাসী ১ দিনে ক্যান্টোনিজ ভাষায় ৩ লাখ কন্ট্রিবিউশন করেছে যা কিনা এখনো একদিনের রেকর্ড! পিয়াস আর সালাম বললো তাঁরা ২৬ মার্চে একটা চেষ্টা করতে চায় সে রেকর্ড ভাঙ্গতে।
আমি বরলাম হয়তো আমরা নিজেরা নিজেরা সেটা পারবো না। সারাদেশের মানুষ এক হরে সোজা হবে। আর সঙ্গে যদি আমাদের তরুন আইসিটি মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক থাকেন তাহলে মনে হয় ভাল হবে।
আল্লাহর কী ইচ্ছে। অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে দেখলাম মন্ত্রী মহোদয়ে একান্ত সচিব আমাকে দুই দফা ফোন করেছেন। রাতে ফোন করে জানলাম – মন্ত্রী মহোদয় কোন এক বিষয়ে কথা বলতে চান।

গেলাম আর পকেটে করে নিয়ে গেলাম অনুরোধ পত্র। মন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে রাজী হযে গেলেন নেতৃত্ব দিতে আর তাঁর নেতৃত্বে শুরু হয়ে গেছে আমাদের মিশন ২৬ মার্চ- বাংলার জন্য চার লাখ।

গত কদিন ধরে যে উৎসাহ উদ্দীপনার জোয়ার তৈরি হয়েছে তাতে বোঝা যাচ্ছে, ইনশা আল্লাহ আমরা এই কাজে সফল হবো। ইনবক্সে, ইভেন্ট পেজে অনেকে কিছু প্রশ্ন করছে। আমি এখানে সেসব বহুল জিজ্ঞাষিত প্রশ্নের সাধারণ উত্তর কম্পাইল করার চেষ্টা করছি।
প্রশ্ন : গুগল অনুবাদ কেমন করে কাজ করে?
উত্তর: পারিসাংখ্যিক নিয়মে। যেহেতু একই ইঞ্জিন ৯০টি ভাষার জন্য কাজ করে কাজে সেখানে ভাষানির্ভর নিয়ম যোগ করার সীমাবদ্ধতা আছে। কাজে এটি পরিসংখ্যান নিয়মে কাজ করে। গুগল ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন ভাষার কন্টেন্ট যোগাড় করে তার ডেটাবেসের ইনপুট স্ট্রিং সেটটা বানায়। তারপর কমিউনিটির মাধ্যমে এর আউটপুট স্ট্রিংসেটটা তৈরি করে। কাজে ভাষার কমিউনিটিকে আউটপুট স্ট্রিংগুলো ঠিক করে দিতে হয়।

প্রশ্ন  : বাংলা ভাষাতে তো হরে-দরে দেড়লাখ একক শব্ত আছে। তাহলে কীভাবে চার লাখ যোগ হবে।
উত্তর : গুগল অনুবাদের বেলায় প্রতিটি আউটপুট স্ট্রিং তৈরি বা যাচাই-এর ঘটনাকে সুবিদার জন্য আমরা শব্দ বলছি। মানে হল এখানে শব্দ বলতে একক শব্দ, শব্দ যুগল, বাগধারা, প্রবাদ, বাক্য, বাক্যাংশ সবই বোঝানো হচ্ছে। আবার যেহেতু এটা পরিসংখ্যান নিয়মে কাজ করে কাজে একই শব্দ (অল ইনক্লুসিভ) কয়েকজনকে করতে হবে। আমরা সব মিলিয়ে ২৬ তারিখে ৪ লাখ করলেই হংকং-এর রেকর্ডটা ভাঙ্গতে পারবো। তবে, অনুবাদ করার সময় স্কিপের ঘটনা কিন্তু কাউন্ট করা হবে না।
প্রশ্ন : আমি কীভাবে এতে অংশ নিব
উত্তর : জিডিজি বাংলার ম্যানেজার জাবেদ মোর্শেদের একটি টিউটোরিয়াল আছে এখানে। সেটি দেখা যেতে পারে। এছাড়া ফেসবুকে জিডিজি বাংলার গ্রুপে অন্যান্য অনেক লিংক পাওয়া যাবে।

প্রশ্ন : আমাকে শুধু বাংলা সংবাদপত্রের হেডিং দেখায়?

উত্তর : ইন্টারনেটে বাংলা কন্টেন্টের একটি বড় অংশই সংবাদ মাধ্যম। ইনপুট  স্ট্রিং সেখান থেকে নেওয়া। কাজে সেগুলোই বেশি দেখাবে।  সংবাদ পত্রের হেডিং অনেক সময় সম্পূর্ণ বাক্য হয় না।
প্রশ্ন : অর্থহীন বাক্য বা বাক্যাংশ দেখায় কেন?
উত্তর : গুগল ইঞ্জিন তার ইনপুট নিয়ে পারমুটেশন আর কম্বিনেশন করে নতুন বাক্য, বাক্যাংশ তৈরি করে। আগে বলা হয়েছে এটি রুল বেজড নয় কাজেই বাক্য বা বাক্যাংশটি বাংলা ব্যকরণের আলোকে শুদ্ধ নাও হতে পারে, হাস্যকরও হতে পারে। এই নিয়ে টেনশন নেওয়ার কিছু নেই।

প্রশ্ন : অনুবাদ করার সময় কী কী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

উত্তর : সর্বোচ্চ সতর্কতা।

  • আন্দাজে কোন কিছু দেওয়া যাবে না,
  • হাতের কাছে বাংলা একাডেমির অভিধান রাখতে পারলে ভাল
  • না বুঝলে বা নিশ্চিত হতে না পারলে স্কিপ করে যেতে হবে
  • অহেতুক সংখ্যা বাড়ানো যাবে না।

প্রশ্ন : ইলেকট্রনিক সার্টিফিকেট কেমনে পাবো?
উত্তর : এই ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করলেই হবে-
http://www.internationalmotherlanguageday.com/

সফটকপি হিসাবে সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে।
প্রশ্ন : সার্টিফিকেটের জন্য কি কেবল ২৬ তারিখেরটা গণ্য হবে?
উত্তর না : ২৬ তারিখএর চার লক্ষ আমাদের জন্য অর্থবহ স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের একটি লক্ষ্য। কাজে আগে পড়ে করলেও হবে। আর এই প্রচারণা চলবে ১লা বৈশাখ পর্যন্ত?
প্রশ্ন : ২৬ তারিখে অংশ নেওয়ার জন্য কী আমাকে কোন একটা অনুস্ঠানস্থলে আসতেই হবে? নাকি বাসায় বসেও করা যাবে?

উত্তর : বাসায় বসেও করা যাবে। কো অনুস্ঠানে না আসলেও হবে। কয়েকটি স্থান ঠিক করা হয়েছে যাতে সবাই মিলে করা যায়, আনন্দের সঙ্গে, দেশের জন্য।

প্রশ্ন : আমার তিনটে জি-মেইল একাউন্ট আছে। তিনটে থেকে করলে কী পরে যোগ করে একটা করা যাবে?

উত্তর:  না, যাবে না। সার্টিফিকেটের জন্য একই জিমেইল ব্যবহার করায় ভাল।

======

আপাতত এই কয়টা। এর মধ্যে আর কোন প্রশ্ন আসলে সেটি যোগ করে দিব। তবে সবচয়ে ভাল হয় আপাতত প্রশ্ন না করে কাজ করে যাওয়া। ২৬ তারিখের পর আমরা প্রশ্ন উত্তরের জন্য মেলা সময় পাবো।

আল্লাহ আমাদেরকে সফল হওয়ার তৌফিক দিন।

সবার জন্য শুভ কামনা।

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version